Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গোলপাতা মৌসুম টার্গেটে নতুন নতুন বনদস্যু বাহিনীর আত্মপ্রকাশের প্রস্তুতি

| প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ টি এম রফিক ও আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : আসন্ন গোলপাতা সংগ্রহের মৌসুমকে টার্গেট করে নিজেই নতুন দস্যুবাহিনী গঠনে কয়রা, শ্যামনগর ও রামপাল এলাকায় সদস্য সংগ্রহ করছে ওই উজ্জল। শুধু বনদস্যু উজ্জল নয়; এভাবেই কয়রার উত্তর বেদকাশির আমিরুল ও ৩ নং কয়রা গ্রামের রজব আলীসহ উপকূলীয় অঞ্চলের আসন্ন গোলপাতা সংগ্রহের মৌসুমকে টার্গেট করে নতুন নতুন বাহিনী গঠনের চেষ্টায় রয়েছে দস্যুরা। বনজীবী, পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। যদিও চলতি বছরে বাহিনী প্রধানসহ রেকর্ড সংখ্যক ৬০ জন বনদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে অনেকেই। তবুও থামছে না সুন্দরবনের দস্যু তৎপরতা।
খুলনার কয়রার কুশোডাঙ্গা গ্রামের খানজাহান আলী খানজাকে কাঁকড়া নৌকা থেকে অপহরণ করে নিয়ে মুক্তিপণে পাঁচলাখ টাকা দাবি করে সুন্দরবনের দস্যু আজিজুল বাহিনী। হতদরিদ্র খানজাহান আলী খানজা (৪৫) মুক্তিপণের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় গত ২ ডিসেম্বর গুলি করে হত্যা করে দস্যুরা। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে কয়রা থানায় দস্যু বাহিনী প্রধান আজিজুল ও হাসানের নাম উল্লেখ্যসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে গত ৫ ডিসেম্বর মামলা করেন। উপরোক্ত কথা উল্লেখ করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কয়রা থানার এস আই কিশোর কুমার আরো বলেন, ‘দস্যুরা এখনো লোকালয়ে উঠেনি। তবে বনদস্যুদের সহযোগী মদিনাবাদ এলাকার রউজ উদ্দিনের ছেলে আরাফাত হোসেন উজ্জলকে গ্রেফতার করতে পারলে মূল ঘটনা জানা যাবে। তার সাথে বনদস্যুদের সখ্যতা রয়েছে। ইতোপূর্বে উজ্জলের নামে দু’টি ডাকাতি মামলা রয়েছে। খানজাহান আলী খানজাকে গুলি করে হত্যার সময় সেখানে উপস্থিত ছিল কিনা; সেটা গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে। এখনো তো প্রায় প্রতিদিন সুন্দরবনে দস্যুতার কথা শুনছি জেলে-বাওয়ালিদের কাছ থেকে।’
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডেটাবেজ প্রস্তুত করা হয়নি; তবে দস্যুদের তালিকা আছে। সুন্দরবনে নতুন নতুন লোক কন্টিনিউ আসছে। বর্তমানে শামসু বাহিনী, আলিম বাহিনী, নান্নু বাহিনী ও জাহাঙ্গীর বাহিনী এবং শরণখোলার নিচে কিছু বাহিনী আছে। একেবারে ছোট ছোট বাহিনী। পাইপগান নিয়ে পাঁচ-সাতজনে মিলে নতুন নতুন বাহিনী গঠন করছে। দলের দু-একজনকে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য জানা যায়। জাহাঙ্গীর বাহিনী আত্মসমর্পণ করবে বলে যোগাযোগ করছে। আত্মসমর্পণ করলে ভালো। এছাড়া আমাদের অভিযান আগামীতে আরো বেগবান হবে।’
র‌্যাব-৬ ও র‌্যাব-৮ এর সূত্রমতে, সুন্দরবনে চলতি বছরে ৬০ জন বনদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে। তাদের কাছ থেকে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে র‌্যাব। বিভিন্ন ঘটনায় চলতি বছরে র‌্যাব-৮ এ সাত ও র‌্যাব-৬ এ দু’জন এবং পুলিশের সাথে অন্তত ৮-১০জন দস্যু ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে।
সূত্রমতে, সুন্দরবনে চলতি বছরে অর্ধশত বনদস্যুর আত্মসমর্পণ, আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে র‌্যাব। সর্বশেষ নভেম্বরের শেষদিকে বনদস্যু খোকা বাবু বাহিনীর আত্মসমর্পণ মধ্যদিয়ে সুন্দরবন দাপিয়ে বেড়ানো ছয়টি বনদস্যু দলের ৬০ সদস্য আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকারী বনদস্যু বাহিনীর মধ্যে রয়েছে মাস্টার বাহিনী, মজনু, ইলিয়াস বাহিনী এবং আলম শান্ত বাহিনী। দস্যুতা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বনদস্যুরা র‌্যাবের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ পথ বেছে নেয়। সর্বশেষ ২৮ নভেম্বর খোকা বাবু বাহিনীর প্রধান কবিরুল ইসলাম ওরফে খোকা বাবুসহ ১২ বনদস্যু ২২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও এক হাজার তিনটি গুলি জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বরিশাল র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর বনদস্যু আলম-শান্ত বাহিনীর ১৪ সদস্য ২০টি অস্ত্র ও ৫৯৬টি গুলি জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করে। এছাড়া ১৪ জুলাই মজনু-ইলিয়াস বাহিনীর ১১ সদস্য ২৫টি অস্ত্র ও এক হাজার ২০ রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। সর্বোপ্রথম চলতি বছরের ৩১ মে সুন্দরবনের অন্যতম বাহিনী মাস্টার বাহিনীর ১০ সদস্য ৫২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪ হাজার ৫০০ রাউন্ড গুলি জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বাগেরহাটের মংলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।
চলতি বছরের ২৪ মে উপকূলীয় জেলাসমূহে মৎস্যজীবী জেলেদের মৎস্য আহরণ নির্বিঘœ ও জলদস্যু দমনে জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভা শেষে খুলনা সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেছিলেন, দস্যু দমনে সুন্দরবনের পশ্চিম বনবিভাগে র‌্যাবের একটি ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। গ্রেফতার জল ও বনদস্যুদের ডেটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। গত দুই বছরে সুন্দরবনে এক হাজার ৩৩৭টি অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব। এসব অভিযানে দু’বছরে ৩৫ জন দস্যু নিহত হয়েছে। সুন্দরবনে অস্ত্রের যোগান ও সরবরাহ করে থাকেন শহরের অভিজাতরা। এসব অস্ত্রের উৎস্য খুঁজে বের করা হবে। অস্ত্র সরবরাহকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। সুন্দরবনে প্রবেশ করা নৌকায় অত্যাধুনিক ডিভাইস স্থাপনের পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন তিনি। টাস্কফোর্সের ওই ষষ্ঠ সভায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রতিনিধি মো: কবিরুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কমিটির প্রতিনিধিদের দেয়া বক্তব্য কার্যত বাস্তবায়ন হয়নি বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ