Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড়ঘেরা গহীন অরণ্য যেন অপহরণকারীদের অভয়ারণ্য

গত ৪ মাসে ৩১ জন অপহরণের শিকার

উখিয়া (কক্সবাজার) উপজেলা প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১:৪৮ পিএম

কক্সবাজারের টেকনাফের বিস্তীর্ণ পাহাড়ের গহীনে অভয়ারণ্য তৈরি করে তুলেছে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা। স্থানীয়দের সাথে নিয়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা সমানতালে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে যাচ্ছে।সর্বশেষ গত রবিবার (৮-জানুয়ারী) ভোরে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং এলাকায় ক্ষেত পাহারারত চার কৃষককে অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ নিয়ে গত ৪ মাসে মোট ৩১ জনের অপহরণের ঘটনা ঘটে। অপহৃতদের মধ্যে ২০ জন স্থানীয় ও ১১ জন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, গত শনিবার রাতে স্থানীয় কৃষকের রোপিত ও চাষাবাদের ভূট্টা ক্ষেতে বন্যহাতীর দল নামে।পাহারারত কৃষকরা হাতিদের পাহাড়ের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ফিরে এসে টং ঘরে ঘুমিয়ে যায়। রাত প্রায় দেড়টার দিকে স্থানীয় পাহাড় থেকে অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত ১৫ থেকে ২০ জনের দল অস্ত্রের মুখে ঐ কৃষকদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর মুক্তিপণ হিসেবে জনপ্রতি পাঁচ লাখ টাকা করে ২০ লাখ দাবি করে আসছিল। অবশেষে মঙ্গলবার (১০-জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে হ্নীলা পাহাড়ি এলাকা থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে অপহৃত ৩ জন ছাড়া পান। কিন্তু আব্দুস সালাম নামে একজনকে এখনও তাদের কাছে জিম্মি করে রেখেছে।

জিম্মি দশা থেকে ফিরে আসা কৃষকরা হলেন, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেচুয়াপ্রাং এলাকার গুরা মিয়ার ছেলে আব্দুর রহমান, রাজা মিয়ার ছেলে মুহিব উল্লাহ ও ফজলুল করিমের ছেলে আব্দুল হাকিম।
অপহৃত একই এলাকা আবুল হোছনের ছেলে আব্দুস সালামকে সন্ত্রাসীরা ফেরত দেয়নি। সালামের পরিবারের সদস্যরা পুলিশ ও গণমাধ্যমে বিষয়টি জানানোর কারণে ও ভিডিও বক্তব্য দিয়েছেন বলে সালামকে ফেরত পেতে হলে মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করছে সন্ত্রাসীরা।

গত ৪ মাসে প্রায় ৩১ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল, পরে মুক্তিপণের মাধ্যমে প্রত্যেকেই অপহরণ অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে বলে সুত্রে জানা যায়।

গত ১৮ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪ টায় টেকনাফের বাহারছাড়া ইউনিয়নের জাহাজ পোড়া এলাকার একটি পাগাড়ের অয়াদিদেশে খালে মাছ ধরতে গেলে একদল অস্ত্রধারী এক কলেজ শিক্ষার্থী সহ ৮ জনকে অপহরণ করে গহীন পাহাড়ে নিয়ে যায়। অপহৃতদেরভস্বজনদের কাছে মোবাইলে মুক্তিপণ দাবি করেছিলভবলে স্বজনরা জানান। পরে মোটা অংকের মুক্তপণ দিয়ে টেকনাফের বাহারছাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা রিশিদ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ উল্কাহ, সৈয়দ আমিরের ছেলে মোস্তফা, তার ভাই করিম উল্কাহ, মমতাজ মিয়ার ছেলে রিদুয়ান৷ রুস্তম আলীর ছেলে সলিম উল্লাহ, কাদের হোসেনের ছেলে নুরুল হক, রশিদ আহমদের ছেলে নুরুল আবসার, নুরুল হকের ছেলে নুর মোহাম্মদকে অপহরণ করেন।
এই ৮ জন একটি মোটা অংকের মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছিল বলে জানা যায়। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে ফিরে অপহৃতরা জানিয়েছেন, গহীন পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে অসংখ্য সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গ গুলোই সুন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা। অপহৃতদের নিষ্টুর অত্যাচারের কাহিনীও তারা বর্ণনা করেছেন।

১০ নভেম্বর টেকনাফের মহেশখালী পাড়া থেকে অপহৃত ১১ জন রোহিঙ্গা কে উদ্ধার করে অপহরণ চক্রের ৪ সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয় এপিবিএন পুলিশ। অপহরণ চক্রের তিনজন রোহিঙ্গা ও একজন স্থানীয় ছিল বলে এপিবিএন নিশ্চিত করেছিল।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অপহৃতদের স্বজনদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, গত ৮ অক্টোবর টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের বড় ঢেইল এলাকার মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে আবদুর রহমান (১৬) কে অপহরণের একদিন পরে ছেড়ে দেয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা।রহমানের স্বজন সাবেক ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম জানান ভুক্তভোগী কিশ্যোর হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার স্বজনরা কেউ মতো বাইল ফোন ব্যবহার না করায় মুক্তিপণের টাকা চাইতে না পারায় রহমানকে শারীরিক নির্যাতন করে ছেড়ে দেয়।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মরিচ্যাঘোনা এলাকা থেকে ৪ জনকেও অপহরণ করেছিল সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসীদের ঢেরা থেকে কৌশলে পালিয়ে আসার সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছিল হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী এলাকার মোঃ শাহজাহান ও মোঃ মেহেদী। অপর দু'জন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম পানখালী এলাকার মৃত ওলা মিয়ার ছেলে নজির আহমদ এবং তার ছেলে সাদ্দাম হোসেন দুদিন পরে মুক্তিপণের মাধ্যমেই বাড়ি ফিরেন।

এ ব্যাপারে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হালিম জানান, গত ৪ মাসের হিসেবে উনার কাছে নেই। কারন উনি টেকনাফ থানায় যোগদান করেছেন প্রায় ২ মাস হচ্ছে। এই দুই মাসে গত সপ্তাহে ৪ জন অপহরণ ও ইতিপুর্বে ৮ জনকে অপহরণের ব্যাপারে অবগত থাকলেও কোন ভিক্টিম বা তাদের আত্মীয় স্বজন এ পর্যন্ত থানায় অভিযোগ বা এজাহার করেননি। উনারা স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনে ভিক্টিমদের উদ্ধারের জন্য প্রানপণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।

কক্সবাজারের আইন শৃংখলা কমিটির সভায় এসব অপহরণের ঘটনার গভীর উদ্বেগ জানান টেকনাফের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ এরফানুল হক চৌধুরী। তিনি বলেন, এ ধরনের অপহরণের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলছে। সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা মানুষকে অপহরণ পুর্বক মুক্তিপণ আদায় করছে যা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ফলে মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর সংকট দেখা দিচ্ছে। এরুপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হবার জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা প্রয়োজন হয়ে পড়ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ