Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন কুমিল্লার যেসব নারী

| প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : স্বাধীনতা সংগ্রামে কুমিল্লার বেশ ক’জন নারী দেশ মাতৃকা রক্ষায় জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। আবার অনেকেই যুদ্ধে না গেলেও উত্তাল সেই সময়টিতে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। কেউ সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মধ্যদিয়ে গণজাগরণ সৃষ্টি করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে কুমিল্লার যেসব নারী বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে গেজেটভুক্ত ছাড়াও অনেক নারী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন, যারা বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন। কুমিল্লার নারীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন এমন কয়েকজনের মধ্যে রয়েছেনÑ কুমিল্লা ফরিদা বিদ্যায়তনের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সেলিনা বানু ও তার মেয়ে কুমিল্লা জেলা ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রী শিরিন বানু মিতিল। মুক্তিযুদ্ধে সেলিনা বানু মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। আর তার মেয়ে শিরিন বানু মিতিল পুরুষ বেশে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। সেলিনা বানু ও শিরিন বানু মিতিল দুজনই মারা গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কুমিল্লার মেয়ে অধ্যাপিকা মমতাজ বেগম মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সংরক্ষিত আসনের সাবেক মহিলা এমপি জোবেদা খাতুন পারুল গোবরা ক্যাম্পে কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ইস্পাতের মতো ভূমিকা ছিল কুমিল্লার রামঘাট এলাকার মহীন চন্দ্র পালের মেয়ে ভিপি নিলীমা পালের। আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের অনুপ্রেরণায় তার স্ত্রী নার্গিস সুলতানা স্বামীর সাথেই ভারতে গিয়ে ট্রেনিং গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। কুমিল্লার বুড়িচংয়ের পাল্টি রাজাপুর গ্রামের তৈয়ব আলীর সহধর্মিণী নার্গিস আক্তার খানম মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেছেন। বায়ান্নর অন্যতম ভাষাসৈনিক অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি এ্যারোমা দত্ত ভারতে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রগতিশীল আন্দোলনে কুমিল্লার অন্যতম সংগঠক ছিলেন রোকেয়া সুলতানা শীলা। সাবেক সংসদ সদস্য আনসার আহমেদের সহধর্মিণী রোকেয়া সুলতানা শীলা একাত্তর সালে ভারতের বিভিন্ন অংশে অবস্থান করে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কুমিল্লার অন্যতম মহিলা ক্রীড়া সংগঠক রাশেদা রহমান রাশু স্বাধীনতা যুদ্ধে যখন অংশ নেন, তখন তিনি কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রী। সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মধ্যদিয়েও মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন পাপড়ী বসু। মুক্তিযুদ্ধের গানসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় কুমিল্লার রাজপথ কাঁপিয়ে রেখেছিলেন পাপড়ী বসুসহ আরো অনেকে। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া কুমিল্লার নারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারা শহীদ হয়েছেন তারা হলেনÑ বি-বাড়িয়ার আখউড়া নান্দীগ্রামের আঞ্জুমান আরা, নবীনগরের পোকারেরন্নেসা ও মর্জিনা বেগম, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের হোসনে আরা বেগম, আম্বিয়া খাতুন, সুফিয়া বেগম, রমিজা খাতুন, করিমা, কুমিল্লা সদরের মাঝিগাছার জাহানারা বেগম, শিবপুরের আরফলের নেসা, আমেনা বেগমসহ আরো অসংখ্য নাম না জানা নারী মুক্তিযোদ্ধা। কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সফিউল আহমেদ বাবুল বলেন, ‘১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে কুমিল্লার নারীরা প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে কুমিল্লার অনেক নারীই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। আবার অনেকে সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিলেও মুক্তিযোদ্ধাদের  আশ্রয় দিয়েছেন, তাদের জন্য খাবার তৈরি করেছেন, বিভিন্ন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শত্রুদের খবরাখবর সংগ্রহ করে এনেছেন, পাক বাহিনী ও রাজাকারদের দৃষ্টি এড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রশস্ত্র গোপন করে রেখেছেন আবার বিপজ্জনক স্থান সম্পর্কে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্বাভাস এনে দিয়েছেন এবং আহত যোদ্ধাদের শুশ্রƒষা করা, ওষুধপত্র সরবরাহ করা, কাপড়-চোপড় সংগ্রহ করা ইত্যাদি কাজগুলো করেছেন। গেজেটে নাম না থাকলেও কুমিল্লার অনেক মা-বোন মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অনেকে শহীদ হয়েছেন। তাদের বীরত্ব জাতি সবসময় স্মরণে রাখবে। কুমিল্লার সকল পুরুষ ও নারী মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সেবা ও কল্যাণে কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ