Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মতলবের সড়কে থামছে না মৃত্যু

দেড় মাসে সড়কে ঝরল ১০ প্রাণ : মোটরসাইকেল দুর্ঘটনাই বেশি

মাহবুব আলম লাভলু, মতলব (চাঁদপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

গত ২৫ নভেম্বর থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চাঁদপুরের মতলব (উত্তর) উপজেলার বিভিন্ন সড়কে ১০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একজন শিশু ও একজন স্কুলছাত্রী রয়েছেন। এ উপজেলায় দিন দিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বেপরোয়া মোটরসাইকেল, অটোরিক্সা, ট্রাক্টর ট্রলিগাড়ি চালকদের দৌরাত্ম। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা মোটরসাইকেলে। যার ফলে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কে মৃত্যু থামছে না। এ উপজেলা সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে অবরোধ ও মানববন্ধন করা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ হচ্ছেনা। দিন দিন তা বেড়েই চলেছে।
গত ২৫ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬ টার দিকে মতলব উত্তর উপজেলার ভাটি রসুলপুর নামক স্থানে মোটরসাইকেল ও অটো রিক্সার সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল আরোহী ২ যুবক নিহত হয়েছে। নিহতরা হলেন সুলতানাবাদ ইউনিয়নের টরকী গ্রামের মহসিন বেপারীর ছেলে সালাউদ্দিন (২২) ও রুস্তম বেপারীর ছোট ছেলে মহাম্মদ (২১)।
২৬ নভেম্বর মতলব উত্তর উপজেলার বাগান বাড়ি ইউনিয়নের হাফানিয়া নামক স্থানে বেড়িবাঁধের ওপর ট্রলি গাড়ি আর মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ৩ জন নিহত হয় ও তানভীর গুরুতর আহত হয়। আহত তানভীরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২ ডিসেম্বর সকাল নয়টা চল্লিশ মিনিটের সময় মৃত্যু বরণ করেন। সংঘর্ষে ঘটনায় ৪ জনে মৃত্যু হলো। নিহতরা হলেন, চান্দ্রা কান্দি গ্রামের আবিদ আলীর ছেলে মো. সেলিম মিয়া (৩০), খাগুরিয়া গ্রামের আঃ রশিদ মিয়াজীর ছেলে শান্ত (২৫), সরজান বকাউলের ছেলে মো. রাশেদ (২২) ও ঘটনার ৬ দিন পর হাসপাতালে চিকিৎসা ধীন থাকা মো. নাছির উদ্দীন বেপারীর ছেলে তানভীন।
গত ৫ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৬টার সময় প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে চাঁদপুর মতলব উত্তরে লেগুনা গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে দশম শ্রেনীর এক ছাত্রী মুক্তা আক্তার নিহত হয়। নিহত মুক্তা আক্তার উপজেলার শরীফ উল্লাহ স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেনীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী ছিল। সকালে লালপুর গ্রামের মিজান স্যারের বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় লালপুর বেড়িবাঁধে স্থানে লেগুনা গাড়ি থেকে নামার সময় মুক্তা আক্তার ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মুক্তা আক্তার উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের রঙ্গুখারকান্দির আয়েত আলীর মেয়ে। গত ১৮ ডিসেম্বর দুপুর ১টায় উপজেলার ফরাজি কান্দি ইউনিয়নের চর মাছুয়া নামক স্থানে মোটরসাইকেল-অটো রিক্সা মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী মো. মমিন (২০) নিহত হয়। মো. মমিন উপজেলার চরকালিয়া তফাদার পাড়ার মো. সুজন মিয়ার ছেলে।
গত ২৮ ডিসেম্বর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত আক্তার হোসেন প্রধান ২৯ ডিসেম্বর রাত ৯ টায় বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের মৃত্যু বরণ করেন। গত বুধবার দুপুরে মোটরসাইকেলের যাত্রী হিসেবে চলার সময় মতলব উত্তর বেড়িবাঁধ সটাকি অংশে পেছনের চাকা পাংচার হওয়ায় পরে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার সে মারা যায়। সে ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের আমিনপুর গ্রামের মো. খোকন মেম্বারের ছোট ভাই আক্তার হোসেন প্রধান।
গত ৬ জানুয়ারি দুপুরে উপজেলার হানিরপাড় গ্রামের ফকির বাড়ির মসজিদের কাছে সিমেন্ট বহনকারী অবৈধ টলি গাড়ির ধাক্কায় আট বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থী রাকিব নিহত হয়েছে। শিশুটি জুম্মার নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসা টলি গাড়ির ধাক্কায় শিশুটি মাথায় ও হাতে আঘাত পেয়ে গুরুত্বর আহত হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় আহত রাকিবের পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে শিশুটিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। রাকিব উপজেলার হানিরপাড় গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক নাজির ঢালীর ছেলে ও সে হানিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র।
স্থানীয়রা মনে করছেন লাইসেন্স বিহীন চালকরা বেপয়ারা ট্রলি গাড়ী ও মোটরসাইকেল চালানোর কারনে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। উভয় পক্ষের কোন অভিযোগ না থাকায় লাশ দাফনের অনুমতি দেয়া হয়। মামলা না হওয়ায় দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনাটি ধামা চাপা পড়ে যায়। ঘটনা ঘটনাই থাকে, অন্যায় অন্যায়ই থেকে যায়, কে দোষি, কে দোষি না এ গুলো আর শনাক্ত করা যায় না। এ সমস্ত দুর্ঘটনার ব্যাপারে দায়ী ব্যাক্তিদের শনাক্ত না করা হলে এমনি ভাবেই অনেক মায়ের বুক খালি হতে থাকবে। আইন শৃঙ্খলা ও পুলিশ বাহিনী যদি কোন ব্যবস্থা না নেয় তাহলে অন্যায়কারীরা পার পেয়ে যায়।
মতলব উত্তর থানার ওসি মো. মহিউদ্দিন বলেন, পরিবারের অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে পুলিশ নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু বেপরোয়া চালকেরা গতিবিধি না মামানর কারণে অধিকাংশ দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো হলো- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, চালকদের অদক্ষতা, চালকদের শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, কিশোর-তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, ওভারটেকিংয়ের চেষ্টা, বারবার লেন পরিবর্তন, ট্রাফিক আইন না মানা ও চলন্ত অবস্থায় মুঠোফোনে কথা বলা। এ ছাড়া জনগনের মাঝে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, হেলমেট ব্যবহার না করার কারণে দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ