Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিজয় মেলার নামে অবৈধ লটারি দুই সপ্তাহে হাতিয়ে নিল সোয়া কোটি টাকা

| প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা প্রশাসনের দুই কিলোমিটার দূরে সপ্তাহব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার নামে চলে জুয়া খেলা আর অবৈধ লটারি। এ লটারি/র‌্যাপেল ড্র’র নামে জুয়াড়িরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় কোটি টাকা। অনেকবার অভিযোগের পর প্রশাসন নামকাওয়াস্তে একদিন রাতে গিয়ে জুয়ার একাংশ বন্ধ করলেও অবৈধ লটারিসহ বিভিন্ন দল-উপদল হয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বড়সড় আকারে চালিয়ে যায়। কধুখীল স্কুল মাঠে শেষ তো এবার শুরু হয়েছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। উপজেলা পরিষদের কার্যালয় থেকে বের হলেই যেন না দেখার উপায় নেই এ দৃশ্য। ১৭ ডিসেম্বর থেকে বোয়ালখালী উপজেলা সদরে গোমদ-ী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সপ্তাহব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। বোয়ালখালী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের ব্যানারে এ মেলার আয়োজন। আয়োজনের আগে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে করা হয় মতবিনিময়। সেখানে আয়োজক পক্ষ কোনো ধরনের জুয়া চলবে না বলে ঘোষণা দেয়। তবে লটারি চলবে। এরপর লটারি জুয়া না হলেও জুয়ার বাপ বলে উল্লেখ করেন এক সাংবাদিক। এতে সবাই এক হাসলেও প্রতি উত্তর আসেনি আয়োজকদের পক্ষ থেকে। মেলা শুরু তো লটারিও শুরু। সেই সাথে বোয়ালখালী জুড়ে প্রচার ও অবৈধ লটারি বিক্রির জন্য প্রস্তুত অসংখ্য সিএনজি টেক্সি। সব মিলিয়ে এ দুই সপ্তাহে গ্রাম-গঞ্জের মা-বোনসহ সাধারণের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় সোয়া কোটি টাকা। সামনে আরো কয়দিন বাকি আছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, মেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের নামে চলছে অবৈধ লটারি। অর্ধশতাধিক ট্যাক্সি ও রিকশা দিয়ে লটারি বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন মোটরসাইকেলসহ আকর্ষণীয় পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে আসছে একশ্রেণির জুয়াড়িরা। টিকিট বিক্রেতাদের গাড়িগুলো পাড়া-মহল্লায় মাইক হাঁকিয়ে বিক্রি করে চলেছে। পৌর সদর বোয়ালখালীর পূর্ব গোমদ-ী অলী বেকারি এলাকার দিনমজুর যুবক বাবুল বলেন, কাজ শেষে বাড়ি ফেরার মুহূর্তে প্রচারণা শুনে ভাগ্য ফেরার লক্ষ্যে দিনের ইনকাম দিয়ে কিনে নিই বিজয় মেলার লাকি কুপন নামের অবৈধ লটারি। হ্যাঁ ৩০০ টাকার লটারি। সারা দিন পরিশ্রমের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেই লটারির ড্র হবে, আর বড় কিছু পুরস্কার পাব এ আশায় বুক বেঁধে অবস্থান নিই মাঠে। ড্র শেষ নাম তার কেউই উচ্চারণ করল না, মানে সহজ, সে কিছু পায়নি। অর্থাৎ দিনের ইনকাম ৩০০ টাকা শেষ। তিনি জানান, পরিবারের ৫ ছেলে মেয়ে ও অন্যরা না খেয়ে ক্ষুধায় কাতর প্রায় বাবার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। অবশেষে খালি হাতেই বাড়ি ফেরা দেখে যেন পরিবারে সবার দীর্ঘ নিঃশ্বাস। কিন্তু কেউ কিছু না বললেও ছোট ছেলে-মেয়ে দুটি যেন খাবার চায়ই। কিন্তু উপায় নেই তাই কাতর হয়ে নিজের অজান্তে ঘুম এসে যায় তাদের। আমও গেল সাথে ছালাও। এভাবে শুধু আমি বাবুল নয়। বোয়ালখালীতে প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন অবৈধ লটারির খপ্পরে। উল্লেখ্য, গত ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায়ও অবৈধ লটারির নামে জুয়া খেলা চলেছিল। এতে চটকদার প্রচারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। উপজেলা প্রশাসন একদিন হানা দিয়ে অবৈধ লটারি ও জুয়ার আসর ভেঙে দিয়েছিল। কিন্তু পরদিন সবকটি দপ্তরকে ম্যানেজ করে ফের অবৈধ লটারি শুরু হয়। আর দেখা মেলেনি প্রশাসনের। এহেন ভূমিকা নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। বিজয় মেলায় অবৈধ ব্যবসার জন্য ৫ লাখ টাকা উপড়ির বিনিময়ে অনুমতি নেয় বলে জানান লটারি বিক্রেতাদের কয়েকজন। মেলা কমিটিই উপজেলা প্রশাসন ও থানাকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব নিয়েছেন বলে দাবি করেন লটারির আয়োজক কয়েকজন। এদিকে অবৈধ লটারি প্রকাশ্যে চলায় উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে এককালীন ও দৈনিকভিত্তিক উপড়ি গ্রহণের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ