Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বির্তকিত একটি প্রতিষ্টানকে বার বার বিনা টেন্ডারের আউটসোর্সিংয়ে লোক নিয়োগের সুযোগ

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৩ পিএম | আপডেট : ৬:৪৩ পিএম, ১০ জানুয়ারি, ২০২৩

ডিজিটাল বাংলাদেশে তথা নিকট ভবিষ্যতের স্মার্ট বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশের অনিয়ম দুর্নীতির ব্যাপকতা কোনভাবে দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। শিক্ষিত তথা পদস্থ পদে প্রাতিষ্টানিকভাবে দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে চলছে দিন-কা-দিন। বিশেষ করে সেবার স্থানগুলোতে দুর্নীতির গতি প্রকৃতি চাপিয়ে যাচ্ছে অতীতের সব হিসেব। চলমান এমন কার্যক্রমে জনমন ধারনা দৃড় হয়েছে যে দুর্নীতি ছাড়া স্বাভাবিক কোন কাজ হয়না দেশে। দুর্নীতি মেনে নিয়ে পথ চলতে পারলে সব কাজ পরিস্কার, হবে মুসকিলে আহসান। কেন এমন ধারনা পোষবে না মানুষ। সেবার অন্যতম খাত স্বাস্থা বিভাগ। সেই স্বাস্থ্য বিভাগের অপরিহার্য অঙ্গ সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়। সেই কার্যালয়ে আউটসোর্সিংয়ে লোকবল সরবরাহে টেন্ডার ছাড়াই বার বার একটি বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সম্প্রতি। এছাড়াও সিভিল সার্জন অফিসের গড়ে উঠা একটি দালাল চক্র ও কতিপয় কর্মচারী মিলে চলতি অর্থবছরে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোন নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। কিন্তু এহেন অপকর্ম গুলোর বিহীতের নামে নতুন দুর্নীতির আরেক অধ্যায় সৃষ্টি হবে বলে অভিমত অনেকের। গতবছরের ৩ নভেম্বরে এসব বিষয়ে একটি সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। আজ বুধবার (১০ জানুয়ারি) সেই কমিটি সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে তদন্ত করেছেন। গত নভেম্বরে বিষয়টি নিয়ে যখন গণমাধ্যম সরব হয় তখন গঠন করা হয় একটি তদন্ত কমিটি। সে কমিটিতে রয়েছেন হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক ও সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন। সে কমিটির আজ বুধবার সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে শুরু করেন তদন্ত।

সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এস এম শাহরিয়ার বলেন- বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠনের পেক্ষিতে আজ সে ব্যাপারে তদন্ত হয়।
২০২০-২১ অর্থবছরে সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আয়া, ওয়ার্ড বয়, নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ করা হয় ৯৯ জনকে। ঢাকার ‘সরকার আউটসোর্সিং এন্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস লি.’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সেজে আউটসোর্সিংয়ের লোকবল সরবরাহের কাজ ভাগিয়ে নেয় সিলেটের একটি চক্র। তখন চাকুরি দেয়ার কথা বলে এক একজন কর্মচারীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা হারে। সিভিল সার্জন অফিসের একটি চক্র দালাল লাগিয়ে বেকার তরুণ- তরুণীদের সংগ্রহ করে। এরকম ৯৯ জনের কাছ থেকে ২/৩ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয় প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার মতো।

দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাসে মাসে কর্মচারীদের বেতন দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয় না নিয়মিত। এমনকি টানা ৭ মাস বেতন না দিয়েই কাজ করিয়েছে এসব কর্মচারীকে দিয়ে।

এনিয়ে বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অভিযোগ দেন সিভিল সার্জন অফিসে । এরপরও পুনরায় টেন্ডার আহবান না করে আবারও মেয়াদ বৃদ্ধি করে দেয়া হয় ২০২১-২২ অর্থবছরেরর। এরই মধ্যে অনেক কর্মচারী বেতন ভাতা না পেয়ে ছেড়ে চলে যায় চাকুরি। এরপর ওই পদটিও পুনরায় আরও কোনো চাকুরী প্রার্থীর কাছ থেকে ২/৩ লাখ টাকা নিয়ে নিয়োগ করা হয়।

সর্বশেষ কোনো প্রকার টেন্ডার ছাড়াই ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের টেন্ডার আহবান ব্যতীত বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানের অনূকুলে সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। অনুমোদন পেয়েই কর্মরত কর্মচারীদের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মূলত ওই টাকাগুলো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সিভিল সার্জন অফিসের সংঘবদ্ধ চক্র ভাগাভাগি করে লুটে নেয়।

আউটসোর্সিংয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী সম্প্রতি চাকুরিচ্যুত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের মনোপাড়া গ্রামের ফখরুল ইসলামের পূত্র এনামুল হক গণমাধ্যমকে জানান, চাকুরি পাওয়ার আগেই সিভিল সার্জন অফিসের ল্যাব এটেনডেন্ট সেলিম মুন্সীর মাধ্যমে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে যোগদান করেন। সারা বছরে তার বেতন ছিলো প্রায় ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। সেই টাকাই যেখানে উঠেনি, উল্টো বছর যেতে না যেতে অনুমোদনের কথা বলে পুনরায় ৩০ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। এরপর চলতি বছরের জন্য আবারও টাকা চায়। অথচ টানা ৭ মাস পর্যন্ত বেতন দেয়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এনামুল হক আরও জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে মামুনুর রশীদ বাবলু পুনরায় ৫০ হাজার টাকা চায়। একপর্যায়ে টাকা চায়। আরো ৩০ হাজার। ওই টাকা না দেয়ায় কোন কারণ ছাড়াই চাকুরি থেকে বাদ দেয়া হয় তাকে।

এছাড়া সিভিল সার্জন অফিসে জনবল সরবরাহকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ঢাকার সরকার আউটসোর্সিং এন্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস লি.-এর কার্যসম্পাদন সন্তোষজনক নয়। মাসের পর মাস বেতন ভাতা না দেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠে এই প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সিলেট স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে সরকার আউটসোর্সিং এন্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস এর ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এমনকি সেখানকার আউটসোর্সিং এর কর্মচারীরাও তাদের ২০২১-২২ অর্থবছরের জুন মাসের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জানান। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রধানরাও বেতন ভাতা না পাওয়া কর্মচারীদের দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়ছেন। অভিযোগের এমন যৌক্তিক বাস্তবতার পরও পুনরায় টেন্ডার ছাড়া বিতর্কিত সরকার আউটসোর্সিং এন্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস লি.-এর মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ