পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আওয়ামী লীগ সরকার গ্রেফতার করে ভোটাধিকারের আন্দোলন বন্ধ করতে চেয়েছিল মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এতে করে আন্দোলন আরো বেগবান হয়েছে। সারাদেশ আন্দোলনে প্রকম্পিত হচ্ছে। সরকার যত বেশি অত্যাচার করবে ততবেশি মানুষ ফুঁসে উঠবে। আমাদের আর পিছু হটবার পথ নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাবো। তাই আন্দোলন আরো তীব্র করতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে, দেশের মানুষকে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। আসুন এই শপথ নিয়ে নতুন অঙ্গীকার করি। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলতেই থাকবে।
গতকাল সোমবার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর রাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে সন্ধ্যা ৬টার দিকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকৈ মুক্ত হয়ে বের হয়ে আসেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সাদা পাজেরো জিপে করে বিএনপি মহাসচিব বেরিয়ে আসনে। হুড খোলা গাড়ির ওপর থেকে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান ও বক্তব্য দেন। এরপরই ক্রিম কালারের গাড়িতে কারাগারের প্রধান ফটকে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনিও গাড়ির ওপর থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।
গত রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাইকোর্টের দেয়া ৬ মাসের জামিন আদেশ বহাল রাখলে এই দুই নেতা মুক্তির পথ খুলে যায়। এজন্য গতকাল দুপুর থেকেই বিএনপি নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন। মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের জামিনের বিষয়টি কেন্দ্র করে কারাগার কর্তৃপক্ষ কারাগার এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করে। কারাগারে আসা বন্দীদের আত্মীয়স্বজন ও দর্শনার্থীদের কারাগার এলাকায় প্রবেশকালে তল্লাশি করা হয়। বিকেল থেকে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস কারাগারের ফটকে অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর সঙ্গে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, শামীমুর রহমান শামীম, এসএম জাহাঙ্গীর, ফরহাদ হোসেন আজাদ, শাহ রিয়াজুল হান্নান, আনোয়ার হোসাইন, ইউনুস মৃধা, শায়রুল কবির খান প্রমুখ।
কারাগার থেকে বের হয়েই মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। সেখানে আগে থেকেই বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী তাদের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। বিএনপির অন্যতম শীর্ষ এই দুই নেতা নয়াপল্টনে পৌঁছালে দলের নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তুলেন। মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে স্বাগত জানান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, দলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুবদল সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না প্রমুখ।
এসময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রিয় ভাইয়েরা মহান আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ও আপনাদের আন্দোলের মাধ্যমে আমরা মাত্র দুইজন মুক্তি পেয়েছি। আরো সবাই এখনো কারাগারে। শুধু বন্দি নয় তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। একটা সেলের মধ্য ৫-৭ জনকে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমানোর জন্য এদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করছে। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী কারাগারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। আমি অবিলম্বে আমাদের তাদের মুক্তি দাবি করছি। আমি বিশ্বাস করি, অবিলম্বে জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন সফল হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মির্জা আব্বাস বলেন, ৩২টা দিন এই সরকার কেড়ে নিয়েছে। আমাদের জীবনে এই বয়সে অসুস্থ অবস্থায় আমরা দেশের কথা, দেশের মানুষের ভাগ্যের কথা, মানুষের ভোটাধিকারের কথা বলতে গেছি। এটা কী আমাদের অন্যায় হয়ে গেছে? আমরা কী কোনো অন্যায় করেছি? আমরা কোনো অন্যায় ও পাপ করিনি। এই সরকার আমাদেরকে একে একে বেশ কয়েকবার জেলে নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিটা নিঃসন্দেহে আনন্দের হলেও সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- জেলখানায় আমাদের হাজার হাজার ছেলে বন্দি রয়ে গেছে। এই ছেলেদের দুঃখ-দুর্দশা আপনাদের আমি বর্ণনা করতে পারবো না এই মুহুর্তে। ওই নেতাকর্মীরা কি অবস্থায় আছে এক আল্লাহ মা’বুদ জানেন। আমরা দেখে এসেছি। তবে এই সরকারের কাছে আশা করাটা খুব মুশকিল। তারপরও বলব- আপনারা (সরকার) এই কারাবন্দিদের প্রতি দয়া করে একটু বিবেকবান হবেন, বিবেককে কাজে লাগান। একটু দেখে যান তারা কেমন আছে?
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, পত্রিকায় দেখলাম সরকার মানবতার কথা বলেছে। আমি আহবান জানাব- এই বন্দিদের প্রতি আপনারা মানবিক হন। এরা চোর, ডাকাত নয়। এরা সব রাজনৈতিক কর্মী। ওরা দেশের মানুষের কথা বলার কারণেই আজকে কারাগারে। কারাবন্দি অবস্থায় নিজের পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
রাজধানীর নয়াপল্টনে গত ৭ ডিসেম্বর পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের জামিন গত রোববার বহাল রাখে সর্বোচ্চ আদালত। মির্জা ফখরুল-আব্বাসকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।
মির্জা ফখরুল ও আব্বাসকে ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে তাঁদের বাসা থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরদিন তাঁদের নয়াপল্টনে ৭ ডিসেম্বর বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মামলায় মির্জা ফখরুল ও আব্বাসের জামিন আবেদন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তিনবার নাকচ হয়। সর্বশেষ ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে তাঁদের জামিন আবেদন নাকচ হয়। এ অবস্থায় তাঁরা হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট রুলসহ দুজনের ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ পরদিন বুধবার আবেদন করে, যা আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।