Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঠান্ডায় দুর্ভোগ বেড়েছে উত্তরাঞ্চলে

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৭.৮ ডিগ্রি

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

হিমালয় থেকে আসা হিমেল হাওয়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় সমগ্র উত্তরাঞ্চলের জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দিনরাত কুয়াশায় ডেকে থাকায় ঠাণ্ডার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের প্রতিবেদন।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে কদিন পর কুয়াশা সরিয়ে সকাল বেলায় সূর্য উঠেছে। যদিও তা ছিল তাপহীন। কুয়াশা না থাকলেও তাপমাত্রা ছিল নিচের দিকে। গতকাল রোববার সকাল ৭টায় রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি চলতি মৌসুমে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছরের শুরু হয় ১৩ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস দিয়ে। ২ জানুয়ারি ১১ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩ জানুয়ারি ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ জানুয়ারি ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ জানুয়ারি ১০ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ জানুয়ারি ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ জানুয়ারি ৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ৮ জানুয়ারি ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গত ৮ দিনে তাপমাত্রা কমেছে সাড়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। চলতি সপ্তাহে আরও কমতে পারে তাপমাত্রা। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত রাজশাহীতে শীতের তেমন তীব্রতা অনুভূত না হলেও গত ২-৩ সপ্তাহ ধরে শীত বেড়েছে। সূর্যের দেখা মিললেও নেই তাপ। এ কারণে দিনভরই শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। বিপর্যস্ত হয়েছে সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যবসা বাণিজ্য ও কৃষি।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সংবাদদাতা জানান, প্রচণ্ড শীতে গোটা চুয়াডাঙ্গা জেলা থমকে গেছে। শীত ও কুয়াশাচ্ছন্ন জেলার মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। স্বাভাবিক কর্মজীবনে দেখা দিয়েছে স্তবিরতা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় শিশু ও বৃদ্ধসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড থাকায় প্রচণ্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। জেলা ব্যাপী মাঝারি শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল রোববুুুুার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৯৫ শতাংশ। এর আগে সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিলো। ওই সময় বাতাসের আদ্রতা ছিলো ৯৭ শতাংশ। গত ২১ দিন থেকে এ জেলায় ক্রমাগত তাপমাত্রা কমছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকায় সূর্যের দেখা মিলছেনা। তবে গতকাল সকাল ৮টার দিকে সূর্য দেখা যায়। রাত বাড়ার সাথে সাথে তাপমাত্রা কমে হাঁড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। এর ফলে জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়ছে। এ আবহাওয়া আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। গত ৬ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ৭ জানুয়ারি শনিবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিলো। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে শীতজনিত রোগ নিউমোনিয়ায় শিশু ও বৃদ্ধসহ এ পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ফুলপুর (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের ফুলপুরে হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে মানুষ। গত কদিন ধরে শুধু শীত পাশাপাশি ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। শৈত্যপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় সর্বত্র কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে এলাকার সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবনযাত্রা। খেটে খাওয়া মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কনকনে ঠান্ডায় বৃদ্ধ ও শিশুদের মাঝে ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শীতকালিন ফসল সরিষা, গম, আলু, বেগুন, পিয়াজ, মরিচ ও বোরো ধানের বীজতলায় শীত রোগ আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাপমাত্রা কমে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় শীতবস্ত্রের দোকানে উপছে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চাদর, জ্যাকেট, সোয়েটার, ব্লেজার, কম্বল, লেপ-তোষকসহ গরম কাপড় কেনার ধুম পড়েছে। বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় দোকানিরা বেশ খুশি। বাজার ঘুরে ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে।
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের উপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। গতকাল রোববার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বেড়েছে কনকনে ঠাণ্ডার মাত্রা। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষজন। রেহাই পাচ্ছে না পশুপাখিরাও। গরম কাপড়ের অভাবে তীব্র শীত কষ্টে ভুগছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করেই কাজে বের হতে হচ্ছে শ্রমজীবীদের। তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমরসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার চরাঞ্চলের মানুষজন।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত নানা রোগ। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু। কুড়িগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট বেডের বিপরীতে দ্বিগুনেরও বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। বর্হিবিভাগেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ