Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিকে আরো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সংসদে প্রেসিডেন্টের ভাষণ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম

দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাঙালি জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহবান জানান। প্রেসিডেন্ট তার ভাষণে বলেন, আমরা জাতীয় জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ অতিবাহিত করছি।
এরআগে সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রেসিডেন্টের আগমণের ঘোষণা দিলে সশস্ত্র বাহিনীর একটি বাদক দল বিউগলে ‘ফ্যানফেয়ার’ বাজিয়ে রাষ্ট্রপ্রধানকে সম্ভাষণ জানান। অধিবেশন কক্ষে প্রেসিডেন্ট প্রবেশের পর নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। সংসদে প্রেসিডেন্টের জন্য স্পিকারের ডান পাশে লাল রঙের গদি সম্বলিত চেয়ার রাখা হয়। স্পিকারের অনুরোধের পর প্রেসিডেন্ট তার লিখিত ভাষণের সংক্ষিপ্তসার পডেন। এসময় তার মূল বক্তব্য পঠিত বলে গণ্য করার জন্য স্পিকারকে অনুরোধ জানান আবদুল হামিদ।
সংবিধান অনুযায়ী এটাই সংসদে প্রেসিডেন্টের শেষ ভাষণ। আগামী ২৪শে এপ্রিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে। আগামী ফেব্রয়ারিতে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৮ সালের ২৪শে এপ্রিল দেশের ২১তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন আবদুল হামিদ। সংবিধান অনুযায়ী তার আরেক দফা প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ নেই। সংবিধানের ৫০(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, একাধিক্রমে হউক না হউক দুই মেয়াদের অধিক প্রেসিডেন্ট পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকিবেন না।
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ তার ভাষণে বলেন, অর্থনীতিতে নানান সমস্যার পরও চলতি অর্থবছরের বাজেট আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা সামগ্রিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইতিবাচক। মাথাপিছু জাতীয় আয় পূর্ববর্তী অর্থবছর থেকে ২৩৩ মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৩ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে।
বর্তমান সরকারের বিভিন্ন অর্থনৈতিক উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার কৃষি, গার্মেন্টসসহ ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের সরাসরি উপকারভোগী প্রায় ৭ কোটি ৩২ লাখ ব্যক্তি ও প্রায় ২ লাখ প্রতিষ্ঠান। সরকার কর্তৃক কৃষি উৎপাদনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিগত অর্থবছরে মোট ১৫ হাজার ১৭২ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা ভর্তুকি এবং ৩৯ হাজার কোটি টাকা সরল সুদে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বিশেষ প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার বীজ, সার এবং কীটনাশক বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
আব্দুল হামিদ বলেন, হর্টিকালচার, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ও প্রাণিসম্পদ খাতে পর্যাপ্ত ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় এ পর্যন্ত ১ লাখ ৮৭ হাজারের অধিক সুবিধাভোগীর অনুক‚লে স্বল্প সুদে প্রায় ২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মাছ ধরা বন্ধকালীন ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২ লাখ ৪৫ হাজারের অধিক জেলে পরিবারকে প্রায় ৯৬ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টনের অধিক খাদ্যশস্য ভিজিএফ হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি ৮ লাখের বেশি মৎস্যচাষি ও খামারিকে প্রায় ৯০৩ কোটি টাকা নগদ এবং উৎপাদন উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে বস্ত্র ও পাট খাতের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং তৈরি পোশাকখাত থেকে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিনের সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও ঢাকাই মসলিন পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সরকার ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ,ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’-সেøাগান নিয়ে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’র আওতায় ৫০ লাখ ১০ হাজারের অধিক নিম্নআয়ের পরিবারকে ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল এবং ২৪ টাকা দরে ৫ কেজি আটা বিতরণ করছে। খোলা বাজারে খাদ্য বিক্রয় (ওএমএস) চালু আছে দেশের সব উল্লেখযোগ্য হাট-বাজারে। এ ছাড়া সরকার টিসিবির মাধ্যমে ১ কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল সরবরাহ করছে। এখন প্রত্যন্ত গ্রামেও একজন দিনমজুরের বেতন দিনে কমপক্ষে ৭০০ টাকা। একইসঙ্গে বেড়েছে জাতীয় উৎপাদন। বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা সত্তে¡ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষিত রয়েছে এবং বর্তমানে দেশে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ১৪ লাখ মেট্রিক টন, যা সন্তোষজনক। এ ছাড়া এবারে দেশব্যাপী আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্লান প্রণয়ন করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’-এর আওতায় ৬৪টি জেলায় প্রায় ৫ হাজার ২৬৩ কিলোমিটার নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখননের কাজ চলছে। ফলে ১০৯টি ছোটো নদী, ৫৩৩টি খাল ও ২৬টি জলাশয় পুনরুজ্জীবিত হবে। এছাড়া প্রধান প্রধান নদীসমূহে ড্রেজিং ও নদী ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্য প্রদান, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল ও দূরদর্শী নেতৃত্বে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক জোরদারকরণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শ্রমবাজার স¤প্রসারণে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ৬টি মেট্রোরেল সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম উড়াল মেট্রো ট্রেন চালু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। ২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি এমআরটি’র মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে। তিনি আরো বলেন, সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ শ্লোগান বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ১০০ ভাগে উন্নীত হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রেসিডেন্টে


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ