বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
করোনা পরিস্থিতি উন্নতির পর থেকে অর্থনীতিতে চাহিদা বৃদ্ধিতে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বেশ বাড়ছে। একই সময়ে বৈদেশিক সম্পদের পরিমাণ হ্রাস এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যাংক খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধিতে ভাটা চলছে। এতে ব্যাংক খাতে চলছে তারল্য সঙ্কট। এই বাস্তবতায় চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য ‘বাস্তবধর্মী মুদ্রানীতি’ প্রণয়ন করতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সঙ্কট মোকাবিলায় নতুন মুদ্রানীতিতে বাজারে টাকার প্রবাহ আরও বাড়ানো ও বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনার ওপর জোর দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত নেয়া শুরু হয়েছে। আগামী ১৫ জানুয়ারি নতুন এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।
অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, বাজারে টাকার জোগান আরও বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতিতে আরও চাপ তৈরি হবে। তখন সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বাড়বে। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত সিলিংয়ের (সর্বোচ্চ সীমা) মধ্যেই বাজারে টাকার জোগান বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হবে, যাতে মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য মুদ্রানীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হলো- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা, যাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও মুদ্রানীতির অন্যতম কাজ। এসব লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে।
গতকাল নতুন মুদ্রানীতির ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচালকসহ সব নির্বাহী পরিচালক এবং ডেপুটি গভর্নরদের মতামত নেয়া হয়। এ সময় তারা বাস্তবভিত্তিক মুদ্রানীতি প্রণয়নের পরামর্শ দেন। জানা গেছে, এই সপ্তাহেই রাজধানীর একটি হোটেলে দেশের অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয়া হবে। এর আগে এ মাসের শুরুতে কয়েকজন অর্থনীতিবিদের কাছ থেকেও মুদ্রানীতির ওপর মতামত নেয়া হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, এখন থেকে বছরে দু’বার মুদ্রানীতি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন মুদ্রানীতি আগামী ১৫ জানুয়ারি ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে নতুন মুদ্রানীতির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতামত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাজারে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি এবং বিনিময় হারের স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিতে বলছেন অনেকেই। সবার মতামতের ভিত্ততে বাস্তবধর্মী মুদ্রানীতি দেয়ার চেষ্টা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজারে রিজার্ভ মুদ্রা বাড়ানোর বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ শতাংশ। এর বিপরীতে অক্টোবর পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। মূলত এবার বৈদেশিক মুদ্রার অন্তঃপ্রবাহ কম হওয়ায় রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার অন্তঃপ্রবাহ কমার কারণ হচ্ছে প্রবাসী আয় ও বৈদেশিক ঋণ ছাড়ে নিম্নগতি। এ ছাড়া রফতানি আয় বাড়লেও তা কাঙ্খিত হারের চেয়ে কম রয়েছে। রিজার্ভ মুদ্রার পাশাপাশি ব্যাপক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রাও নিচেই রয়েছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গত অক্টোবর পর্যন্ত বার্ষিক ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। এদিকে, চলতি মুদ্রানীতিতে জুন পর্যন্ত রিজার্ভ ও ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি ধরা আছে যথাক্রমে ৯ শতাংশ ও ১২ দশমিক ১ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে এই সিলিংয়ের মধ্যেই রিজার্ভ ও ব্যাপক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে, যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে বাজারে প্রয়োজনীয় টাকার জোগান বাড়ানো সম্ভব হয়। তবে চলতি অর্থবছরে সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা আগেই অতিক্রম হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে বার্ষিক ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এর বিপরীতে গত অক্টোবর পর্যন্ত বেসরকারি ঋণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ। অন্যদিকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৩ শতাংশ। এর বিপরীতে অক্টোবর পর্যন্ত বেড়েছে ৩২ দশমিক ১১ শতাংশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।