Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার টাকা করার দাবি

বাস্তবায়ন না হলে ২৪ জানুয়ারির পর শিল্প ধর্মঘটের হুমকি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

পোশাক শ্রমিকদের জন্য ৬৫ ভাগ মূল মজুরিসহ ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ (বিজিডব্লিইউসি)। একই সঙ্গে অবিলম্বে পোশাক খাতের মজুরি বোর্ড পুনঃগঠনের দাবি করেছে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন বিজিডব্লিইউসি’র মহাসচিব সালাউদ্দিন স্বপন।
তিনি বলেন, করোনার কারণে দেশের প্রায় ৩ লাখ শ্রমিক চাকরি হারান ও মজুরি সঙ্কটে পড়েন। তারপরও তারা কর্মরত থেকে অর্থনীতির চাকা সচলের চেষ্টা করেন। দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের চলমান দুঃখ-কষ্ট থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকার এবং মালিকরা কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বিগত ৪ বছরেও শ্রমিকদের ভাগ্য বদলায়নি এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, পোশাকখাতের শ্রমিকদের জন্য বিগত ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা ঘোষণা করা হয়েছিল। ৪ বছরে মূল্যস্ফীতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিসহ বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানির দাম বাড়ায় গার্মেন্টসসহ অন্যান্য খাতের শ্রমিকদের জীবন আজ সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছে। এসময় সালাউদ্দিন স্বপন আক্ষেপ করে বলেন, আমরা মনে করেছিলাম সরকার শ্রমিকদের মজুরিকে পুনঃমূল্যায়ন করে ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে একটি নতুন মজুরির ঘোষণা দেবে। কিন্তু সেটা শ্রমিক সমাজ পেল না। তিনি প্রফেসর রিচার্ড এ্যাংকর এবং তার দলের ২০১৮ সালের এক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, জীবন ধারণের জন্য একজন শ্রমিকের প্রতিদিন ন্যূনতম ২ হাজার ১৮৮ কিলোক্যালোরি খাদ্য দরকার। পোশাক শ্রমিকদের খাদ্য সংক্রান্ত সে গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক শ্রমিককে মাসিক জনপ্রতি ৪ হাজার টাকা প্রয়োজন। সে হিসেবে পরিবারের ৪ জনের জন্য খাদ্য বাবদ দরকার ১৬ হাজার টাকা। আর বাড়ি ভাড়া বাবদ ১০ হাজার টাকা এবং ২ সন্তানের পড়ালেখার জন্য ন্যূনতম খরচ ২ হাজার টাকা প্রয়োজন। এছাড়া চিকিৎসা খরচ ন্যূনতম ২ হাজার টাকা, যাতায়াত বাবদ ১ হাজার টাকা, বিনোদন ২ হাজার টাকা, খাদ্য বহির্ভূত খরচ ১ হাজার টাকা ও ন্যূনতম সঞ্চয় ১ হাজার টাকাসহ মোট ৩৫ হাজার টাকা প্রয়োজন।
সংগঠনটির মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে সরকার ২৪ গ্রেডের অদক্ষ কর্মচারী ক্লিনারের ন্যূনতম মজুরি ১৫ হাজার ৮৫০ টাকা এবং ব্যাংকিং খাতের (২০২২ সাল) ২৪ হাজার টাকা ঘোষণা করে কার্যকর করেন। গ্লোবাল লিভিং ওয়েজ কোয়ালিশন পোশাক খাতের জন্য ন্যূনতম মজুরি ২১ হাজার ৬৪৮ টাকা হওয়া দরকার বলে অনুমান করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শ্রমিকদের ২০১৮ সালের পূর্বের মজুরি ছিল ৮ হাজার টাকা। বিগত ২০১৮ সালে ১ ডলার সমান ছিল ৮২ টাকা; সে হিসাবে তখন ৯৮ ডলার বেতন ছিল। ডলার অবমূল্যায়নের কারণে বর্তমান সরকারি রেট অনুযায়ী, ১ ডলার সমান ১০৬ টাকা হিসেবে বর্তমানে শ্রমিকরা ৭৫ দশমিক ৪৭ ডলার পায়।
গার্মেন্টস মালিকরা টাকা অবমূল্যায়নের কারণে ২৯ শতাংশ টাকা বেশি আয় করছেন। কিন্তু দ্রব্য মূল্যের চাপে যে শ্রমিকরা দিশেহারা হয়ে কোনো রকম জীবনযাপন করছেন গার্মেন্টস মালিকরা ২৯ শতাংশ বেশি আয় করার পরও শ্রমিকদের ন্যূনতম কোনো মহার্ঘ ভাতা বাড়াননি। যা অমানবিক। সংবাদ সম্মেলনে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, শিল্পের সামর্থ্যসহ পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ৮দফা দাবি উপস্থাপন করে। দাবি আদায়ে আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রত্যেক শিল্প এলাকায় শ্রমিক সমাবেশ আয়োজন করার ঘোষণা দিয়েছে বিজিডব্লিইউসি। এছাড়া ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় কেন্দ্রীয় শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠানের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দাবি আদায় না হলে ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় কেন্দ্রীয় শ্রমিক সমাবেশ থেকে শিল্পে ধর্মঘট আহ্বানসহ বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ