Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গণপরিবহণে শিশু কন্ডাক্টর নিষিদ্ধ!

সড়ক পরিবহণ বিধিমালা-২০২২ চূড়ান্ত ২০ বছরের কম বয়সীরা বাস, মিনিবাস ও লেগুনার সুপারভাইজার হতে পারবেন না

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে এক লাখের বেশি শিশু কিশোর বাস-ট্রেম্পু-লেগুনা-পিকআপ-নসিমন-করিমনের ড্রাইভার হিসেবে কাজ করছেন। প্রশিক্ষণহীন, লাইসেন্সহীন এইসব শিশু চালক-সহযোগিদের দ্বারা পরিচালিত দেশে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ কর্মস্থলে এবং বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করছেন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা, প্রতিদিন সড়কে গড়ে এখন ৯শ’র বেশি ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের হাতে স্টিয়ারিংয়ের যানবাহনে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি। চালকের সাথে কাজ করছেন আরও একজন করে সহকারী। শিশু চালকের সাথে কাজ করে শিশু সহকারী। এতে দুর্ঘটনার সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। এখন আইন করে গণপরিবহণে শিশু ড্রাইভার, কন্ডাক্টর নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। আইন কার্যকর হলে বাস, লেগুনাসহ কোনো যানবাহনে ২০ বছরের কম বয়সী শিশুদের ড্রাইভার ও কন্টাক্টর হিসেবে কাজ করতে পারবে না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে আইন হয় কিন্তু সে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন হয় না। ফলে অনিয়ম চলতেই থাকে। সড়কে দুর্ঘটনা বন্ধে শিশু শ্রমিকের কাজ বন্ধ এমন আইন কিছুটা হলেও সুফল দেবে।

জানতে চাইলে সেভ দ্য রোডের মহাসচিব শান্তা ফারজানা ইনকিলাবকে বলেন, অপ্রাপ্ত বয়সের চালক ও পরিবহনের সহযোগী থাকার কারণে দিন দিন দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। এই দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনকে শিশু-কিশোররা যাতে চালকের আসনে বসতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু-কিশোরদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে হবে। তবে পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) আহসান হাবীব প্রামানিক ইনকিলাবকে বলেন, অপ্রাপ্ত বয়সের চলকদের এবং কন্ডাক্টরদের বিষয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানের পর কিছুদিন শিশু-কিশোরদের গাড়ি চালাতে ও সেবকের কাজ করতে দেখি না। কয়েকদিন পর আবার তারা গাড়ি নিয়ে বেড় হয়।
শিশু কন্টাক্টরের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের রোজগারে সংসার চলে। সংসারে অর্থের জোগান দিতেই বাধ্য হয়েই তারা কাজে নামেন। রোজগারের চিন্তা করে দুর্ঘটনার বিষয়টি আমলে নেন না তারা। রাজধানী ঢাকায় ট্রেম্পু-লেগুনা-পিকআপ এবং গ্রামগঞ্জে নসিমন-করিমনে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। কেউ ড্রাইভিং সিটে কেউ সহকারী হিসেবে কাজ করছেন।

তবে ২০ বছরের কম বয়সীরা বাস, মিনিবাস কিংবা লেগুনার কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার হতে পারবেন না। এমন নিয়ম রেখে ‘সড়ক পরিবহন বিধিমালা, ২০২২’ করেছে সরকার। সম্প্রতি ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’-এ দেওয়া ক্ষমতাবলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে। সড়ক পরিবহন খাতে দেখা গেছে, শিশুদের কন্ডাক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এতে বলা হয়, কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজারের লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ হবে কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রের উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) বা সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত অন্য কোনো কর্মচারী। কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার লাইসেন্স মঞ্জুরের শর্তে বলা হয়েছে, বয়স কমপক্ষে ২০ বছর হতে হবে।
কন্ডাক্টরের ক্ষেত্রে প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা পঞ্চম শ্রেণি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এবং সুপারভাইজারের ক্ষেত্রে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি বা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বিধিমালা অনুযায়ী মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়া দক্ষতা যাচাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজারের লাইসেন্সের মেয়াদোত্তীর্ণের ৩০ দিন আগে নির্ধারিত ফরমে নবায়নের জন্য লাইসেন্স ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণের ১৫ দিন পর আবেদন করলে মূল ফি-এর সঙ্গে প্রতি বছর বা এর অংশের জন্য বার্ষিক ফি-র শতকরা ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত ফি দিতে হবে।

২০ বছরের কম বয়সী কোনো ব্যক্তি কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার লাইসেন্স নিতে পারবেন না বা এমন কোনো ব্যক্তিকে কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজারের লাইসেন্স মঞ্জুর করা যাবে না বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শ্রেণির মোটরযান চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গণপরিবহন চালানো অনুমতিপত্র (পিটিএ) এবং কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার লাইসেন্স থাকতে হইবে। নিয়োগকারীকে নির্দিষ্ট ফরম অনুযায়ী নিয়োগপত্র এবং পরিচয়পত্র দিতে হবে। উভয়পক্ষের মধ্যে চুক্তিপত্র হতে হবে। গণপরিবহনে চালক, কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডোপ টেস্ট সনদ থাকতে হবে।

পরিবহনের চালক, কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজারকে ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬’ অনুযায়ী নির্ধারিত বেতন ও আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। নির্ধারিত কর্মঘণ্টা (একটানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি নয়, কমপক্ষে আধা-ঘণ্টা বিশ্রাম দিয়ে আবার তিন ঘণ্টা অর্থাৎ একদিনে আট ঘণ্টার বেশি নয় এবং সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি নয়) অনুযায়ী গণপরিবহনে দায়িত্ব পালন করতে হবে বলেও বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।

রাজধানীর গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ি, খিলগাঁও, রামপুরা, পুরান ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, গাড়ির (ট্রেম্পু- লেগুনা) চালকের আসনে শিশুরা। স্টিয়ারিংহাতে যানবাহনে করে বিভিন্ন জায়গায় চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন যাত্রীদের। এসব শিশু-কিশোরাদের হাতে গাড়ির স্টিায়ারিং থাকার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা আর এসব দুর্ঘটনায় অকালে ঝরছে সাধারণ মানুষের প্রাণ। আর শিশু-কিশোররা যেসব গাড়ি চালান এসব গাড়ির বেশিরভাগের নেই ফিটনেস। রাজধানীসহ সারাদেশে এখন লাখ লাখ ফিটনেসহীন লক্কর-ঝক্কর গাড়ি চালাচ্ছে শিশু-কিশোররা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, একজন প্রশিক্ষিত ও মাদকমুক্ত চালক নিরাপদ সড়ক ও নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করে। যেসকল বাস মালিক ১৮ বছরের কম বয়সী কিশোর দিয়ে গাড়ি চালান, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডিএমপিও এই লক্ষ্যে কাজ করছে। নতুন করে যারা পেশাদার ড্রাইভিং লাইন্সেস নিতে আসছেন, তাদের জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। আর ৮ম শ্রেণি পাস না হলে কাউকে ড্রাইভিং লাইন্সেস দেয়া হবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গণপরিবহণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ