Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কুষ্টিয়ার গ্রামে গ্রামে ‘কুমড়ো বড়ি’ তৈরির ধুম

এস এম আলী আহসান পান্না, কুষ্টিয়া থেকে : | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুষ্টিয়ার গ্রামাঞ্চলের নারীরা। শীত মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে শুরু হয়েছে বাণিজ্যিকভাবে কুমড়ো বড়ি তৈরির কাজ, যা রোদে শুকিয়ে সরবরাহ করা হবে বাজারে।
শীতকালীন রসনা বিলাসের অন্যতম সুস্বাদু খাদ্য কুমড়ার বড়ি। কুষ্টিয়ার কুমড়ার বড়ি এখন শুধু গ্রাম অঞ্চলেই নয়। কুষ্টিয়ার তৈরি কুমড়ার বড়ি এখন সারাদেশে বিক্রি হচ্ছে। বড়ির চাহিদা থাকায় জেলার বিভিন্ন স্থানে বাণিজ্যিকভাবে বড়ি তৈরি হচ্ছে।
প্রায় ২ যুগ ধরে এ বড়ি তৈরি করে কুষ্টিয়ার ৫ শতাধিক পরিবার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সদর উপজেলার কবুরহাট, জগতি, আহাম্মদপুর, শিমুলিয়াসহ জেলার বিভিন্ন গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হয় কুমড়ো বড়ি। কুমড়ো বড়ি তৈরিতে এখন বেশ ব্যস্ত এসব গ্রামের নারীরা।
কবুরহাটের গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম জানান, আগের দিনে মেয়েরা রাতভর শিলপাটায় ডাল বেটে গুঁড়া করে তা সারা দিন রোদে শুকানোর পর কুমড়ো বড়ি তৈরি করত। এখন আর রাতভর শিলপাটায় ডাল গুঁড়া করতে হয় না। ডাল গুঁড়া করার মেশিনের সাহায্যে এক ঘণ্টার মধ্যেই অনেক ডাল গুঁড়া করে বড়ি তৈরি করা যায়। তবে একেবারে পরিশ্রম কমও নয়। এই বড়ি সারা বছর তৈরি করা গেলেও এটা শীতকালে বেশি তৈরি হয়, যে কারণে এ সময়ে কুমড়ো বড়ি তৈরি করেন অনেকেই।
শীতকালীন সব ধরনের তরকারিতে বাড়তি স্বাদ আনয়নের জন্য কুমড়া বড়ির কদর এখন গ্রাম ছাড়িয়ে শহরেও সমাদৃত হয় সমভাবে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষেরই নিত্যদিনের খাবারে তরকারির অতি প্রিয় অনুষঙ্গ এ কুমড়া বড়ি।
নারীরা জানান, বড়ি তৈরিতে মূলত চালকুমড়া এবং মাষকলাইয়ের ডাল লাগে। মাষকলাইয়ের ডাল ছাড়াও অন্য ডালেও তৈরি হয় এ বড়ি। রোদে মচমচে করে শুকালেই এর ভালো স্বাদ পাওয়া যায়। বড়ি তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে তারা জানান, বড়ি তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর চালকুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহিকুচি করে রাখতে হবে। তারপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া হলে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
পরে ডালের পানি ছেঁকে শিলপাটায় বেটে নিতে হবে, অথবা ডাল গুঁড়া করার মেশিনের সাহায্য নিতে হবে। এবার ডালের সঙ্গে কুমড়া মেশাতে হবে। খুব ভালো করে হাত দিয়ে মিশাতে হবে যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়। তারপর কড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে হবে। বড়ি তিন থেকে চার দিন এভাবে রোদে শুকানোর পর তা অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।
বড়ি তৈরির পর যদি তীব্র রোদ কিংবা তাপ না থাকে তাহলে হাড়ভাঙা খাটুনি আর দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রম সবই বৃথা যায়। কেননা বড়ি বানানোর পর যত দ্রুত তা রোদের তাপে শুকানো যায় ততই সুস্বাদু হয় এই কুমড়া বড়ি।
একই এলাকার আয়েশা খাতুন জানান, বছরে একবার এই কুমড়া বড়ি তৈরি করে থাকি। নিজেদের খাওয়া এবং মেয়ে জামাইর বাড়িতেতে পাঠানো লাগে।
জগতি এলাকার আনোয়ারা বলেন, এ ব্যবসায় সারাবছর চললেও ৬ মাস ভালো চলে। তবে পরিশ্রমের তুলনায় তারা তেমন মূল্য পান না। কুষ্টিয়ার তৈরি কুমড়ার বড়ি এখন গ্রামের বাড়ির আঙিনা ছেড়ে শহরে এমনকি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর কাঁচা বাজারেও স্থান করে নিয়েছে।
কুষ্টিয়ার তৈরি বড়ি জেলার চাহিদা পূরণ করে প্রতিদিনই বাইরে পাঠানো হচ্ছে। এখানকার তৈরি বড়ি অত্যান্ত ভালো ও সুস্বাদু হওয়ায় দিনদিন বেড়েই চলেছে কুষ্টিয়ার কুমড়া বড়ির চাহিদা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ