Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিগন্তজোড়া সরিষা আবাদ আশাশুনিতে

জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি (সাতক্ষীরা) থেকে | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

আশাশুনি উপজেলায় এ বছর রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। ফসলের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে প্রকৃতি ভাল থাকলে রেকর্ড পরিমাণ সরিষা উৎপাদন হবে। আশাশুনি উপজেলায় আমন ধান চাষের পর বিপুল পরিমাণ জমি অনাবাদি থেকে যায়। যার মধ্যে কিছু জমিতে নির্দিষ্ট বিরতির পর বোরো ধান চাষ করা হয়ে থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বোরো ধান চাষের আগে এবং আমন ধান কাটার পর সময়টিতে অতিরিক্ত একটি ফসল নেওয়ার পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে কাজ করে আসছে। তাদের পরিশ্রম দিনে দিনে ব্যাপকভাবে কাজে আসতে দেখা গেছে। সীমিত এই সময়ে পড়ে থাকা জমিতে বিনা চাষে সরিষা চাষ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কৃষি বিভাগ পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে উপজেলার মাঠে মাঠে হলুদ রঙা গালিচায় শোভা পাচ্ছে সরিষার ক্ষেত। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ ভরে গেছে সরিষা ফুলে। চির সবুজের বুকে এ যেনো কাঁচা হলুদের আল্পনা। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই যেনো ফুলের মেলা। ইতোপূর্বে বেড়ের মধ্যে উঁচু জমিতে সরিষা চাষ হতো। বর্তমানে মাঠে বিলে বিলে সরিষার ক্ষেত সকলকে উদ্বেলিত করে তুলেছে। সরিষা চাষের পাশাপাশি মৌবাক্স স্থাপন করেছেন অনেকেই। মধু আহরণের জন্য মৌচাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
গত বছর ২০২১ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কৃষি বিভাগ কাজ করে অনেকটা সফল হয়েছিল। অর্থাৎ গত বছর কৃষি বিভাগ ২১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছিল। পুরাপুরি ভাবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও কাছাকাছি অর্থাৎ ১৯০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছিল। এ বছর ২০২২ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৫০ হেক্টর জমিতে। সুখের খবর হলো এবার তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে গেছে। এবং ৩৫০ হেক্টরের স্থলে ৩৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ সম্ভব হয়েছে। প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে ১.৩ মেঃটন করে সরিষা উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি সেটি সম্ভব হয় তবে আশাশুনি উপজেলায় এবছর রেকর্ড পরিমাণ ৪৫৫ মে.টন সরিষা উৎপাদিত হবে। বর্তমান সময়ে সোয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি সরিষার তেলের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি সরিষার তেলের চাহিদাও বেড়ে গেছে। সরিষা ঘরে উঠলে চাষিরা ব্যাপক লাভবান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমন ধান কাটার পূর্ব মুহূর্তে ক্ষেতে সরিষা ছড়িয়ে দিতে হয়। এর কয়েকদিন পর ধানা কাটা হয়ে হেলে জমিতে যতটুকু জো থাকে তাতেই সরিষা চাষ শেষ হয়ে যায়। বিনা চাষে ও কম খরচে সরিষা চাষের ফলে চাষিরা অতিরিক্ত ফসল হিসাবে সরিষা ঘরে তুলতে সক্ষম হওয়ায় আগামীতে আরও বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাজিবুল হাসান জানান, আশাশুনির মাটির গুণাগুণ অনুধাবন করে বারি সরিষা ১৪, ১৭, ৯ ও ১৮, টরি ৭, বিনা ৯, বিএডিসি ১ জাতের সরিষা বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রণোদনা, কীটনাশক ও সারের পাশপাশি কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। রিলে বা বিনা চাষে সরিষা বপনের মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। অর্থাৎ ধান কাটার পূর্বে ক্ষেতে সরিষা বীজ ছড়িয়ে দেয়া হয়। ধান কাটার পর সেখানে সরিষা অঙ্কুরুদ্গমন হয়ে গাছ গজিয়ে বড় হতে থাকে। আমরা চেষ্টা করেছি মৌসুমের শুরুতে বীজ সরবরাহ করতে। এবং অশানুরুপ সাড়া পেয়েছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ইনশাল্লাহ ভালই ফসল ঘরে তুলতে পারবে। সরিষা ঘরে তোলার সাথে সাথে একই জমিতে বোরো আবাদ সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ