Inqilab Logo

বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চার দিনেও মেঘনা নদীর তেলবাহী জাহাজ উদ্ধার হয়নি : উদ্বেগ ইলিশ অভয়ারণ্য নিয়ে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:১৮ পিএম

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলায় ভোলায় মেঘনা নদীতে প্রায় এগার লাখ লিটার জ্বালানি তেলসহ ডুবে যাওয়ার চারদিন পর জাহাজটিকে টেনে তোলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জাহাজটি দ্রুত উদ্ধার কিংবা জাহাজে থাকা জ্বালানি তেল অপসারণ না করা হলে ইলিশ মাছের অভয়ারণ্যের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে কোস্ট গার্ড জানিয়েছেন বুধবার বিকেলে উদ্ধারকারী জাহাজ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর এখন জাহাজটি টেনে তোলার জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ চলছে। -বিবিসি বাংলা

কোস্ট গার্ডের একটি দল নদীতে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে কাজ করেছিলো গত দুদিন ধরেই। তবে জাহাজটিতে অক্ষত ট্যাংকারগুলোতে থাকা তেল কোনোভাবে বেরিয়ে আসলে নদীর জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে। আবার জাহাজটি ওপরে না ওঠানোর কারণে ঠিক কী পরিমাণ নদীতে ছড়িয়ে সে সম্পর্কেও কার্যত কোনো ধারণা করতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি জোয়ার ভাটার কারণে জাহাজ থেকে বেরিয়ে পড়া তেল দ্রুতই সমুদ্রের দিকে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ বা বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক মো. আব্দুস সালামও জানিয়েছেন যে উদ্ধারকারী দুটো বার্জ গিয়ে জাহাজ উদ্ধারের কাজ শুরু করেছে। “ দুটো বার্জই সেখানে পৌঁছে গেছে। তবে মনে রাখতে হবে যে সেখানে নদীতে প্রচণ্ড স্রোত তাই বিশেষ কিছু সময়ে কাজ করতে হয়।

তবে আমরা দ্রুত গতিতে কাজটি করার চেষ্টা করছি,” বলছিলেন তিনি। এর আগে শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এগার লাখ লিটার অকটেন ও পেট্রোল লোড করে চাঁদপুরের পাঁচ নম্বর ঘাটের পদ্মা ডিপোর উদ্দেশ্যে রওনা হয় জাহাজটি। রোববার ভোর চারটার দিকে ভোলার সদর উপজেলার তুলাতুলির কাছে মেঘনা নদীতে পৌঁছালে পিছন দিক থেকে আসা অপর একটি জাহাজ এটিকে ধাক্কা দেয়। এতে তেলবাহী জাহাজটির পিছনের ইঞ্জিন রুমের কাছে ছিদ্র হয়ে পানি প্রবেশ করে আংশিক ডুবে গেলে জাহাজে থাকা লোকজন চিৎকার করলে একটি বালুবাহী ট্রলার এসে তাদের উদ্ধার করে।

ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলছেন, ভোলাকে ঘিরে থাকা নদীগুলো বিশেষ করে মেঘনার প্রায় সর্বত্রই ইলিশের বিচরণ থাকে। “যদিও এখন মাছের মৌসুম নয় তারপরেও এটি ইলিশের বিচরণক্ষেত্র। আমরা দফায় দফায় সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলছি। আবহাওয়া ঠিক অনুকূলে নয় কিন্তু এর মধ্যেই চেষ্টা চলছে দ্রুত উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য। জাহাজের মালিকরাও যোগাযোগ করেছেন,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি। ওয়ার্ল্ড ফিশের তথ্য অনুযায়ী উৎপাদনের হিসেবে বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে ভোলা থেকেই বেশি ইলিশ পাওয়া যায়। গত অর্থবছরেই এ অঞ্চল থেকে প্রায় এক লাখ নব্বই হাজার টন ইলিশ পাওয়া গেছে। ভোলা একটি দ্বীপজেলা অর্থাৎ এর চারদিকেই নদী ।

তবে মূলত ভোলার উত্তর ও পূর্বে দিকেই বিস্তৃত মেঘনা নদী এবং উভয় নদীই গিয়ে মিলেছে বঙ্গোপসাগরে। আবার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের যৌথ গবেষণায় বলা হয়েছে মেঘনা অববাহিকাতেই ইলিশের উপস্থিতি বেশি, কারণ তাদের দরকারি খাদ্য উদ্ভিদ ও পানিকণা নদী ও মোহনাতেই বেশি থাকে। তাদের মতে বাংলাদেশের ইলিশের উৎপাদনের মাত্র দুই শতাংশ আসে পদ্মা নদী থেকে। এছাড়া বড় ও স্বাদের ইলিশ বেশিরভাগই আসে আসলে মেঘনা অববাহিকা থেকেই। আবার মেঘনায় সারা বছরই বিপুল পরিমাণ উদ্ভিদকণা ভেসে আসে ও মেঘনা দিয়ে সাগরের দিকে চলে যায়। এ কারণে ইলিশের দল খাবারের জন্য মেঘনা মোহনায় বছর জুড়েই ঘুরে বেড়ায়।

এসব কারণেই তেল পানিতে বেশি ছড়িয়ে পড়লে মাছের জন্য বিপর্যয় হতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকে। জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোল্ল্যা এমদাদুল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তেলের কারণে মাছের ডিম ও খাবারের ক্ষতি হবে এবং সে কারণে দ্রুত তেল অপসারণের ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। “জোয়ার ভাটার কারণে তেল এক জায়গায় স্থির থাকে না। অনেক তেল সমুদ্রেও চলে গেছে। ঘটনার পরদিনই কিছু মাছ অস্বাভাবিক বেশি ধরা পড়েছে। সেগুলো মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটে পাঠাবো পরীক্ষার জন্য,” বলছিলেন তিনি। নদীতে তেল বেশি ছড়ালে মাছের ডিম ও খাবার ক্ষতির শিকার হবে।

ওয়ার্ল্ডফিশের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশে এই মূহুর্তে চারটি প্রজনন ক্ষেত্র এবং ছয়টি অভয়াশ্রম আছে।চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে শুরু করে ভোলার লালমোহন উপজেলা পর্যন্ত ইলিশের সবচেয়ে বড় প্রজনন ক্ষেত্র। ইলিশের অভয়াশ্রমগুলো মূলত মেঘনা নদী ও এর অববাহিকা এবং পদ্মা ও মেঘনার সংযোগস্থলে অবস্থিত। এর মধ্যে চাঁদপুরে মেঘনা নদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার এলাকা, ভোলায় মেঘনা নদীর শাহবাজপুর শাখা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকা, তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা অন্যতম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ