Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকায় তুলা আবাদ ও উৎপাদনে আশার আলো

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:৪৬ এএম

সাড়ে ৮ লাখ টন খাদ্যপণ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে পাট আবাদ সম্প্রসারণে সফলতার পরে এখন তুলা নিয়েও যথেষ্ট আশার আলো দেখাচ্ছেন কৃষি বিজ্ঞানীগন। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের তুলা আবাদ নিয়ে গবেষণায় ইতিবাচক ফল মিলছে। বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামীম ক্যাম্পাসের গবেষণা খামারে বিগত দুটি মৌসুমের মত এবারো রবি মৌসুমে তুলার আবাদ করছেন। এমনকি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেখানে ডিসেম্বরের শেষভাগে তুলা উত্তোলন শুরু হয়েছে, সেখানে দক্ষিণাঞ্চলে পুরো রবি মৌসুমজুুড়ে এর আবাদ শুরু হচ্ছে। ফলে এ মৌসুমে বিভিন্ন রবি ফসলের সাথে তুলার আবাদ হচ্ছে। ড. শামীম বিদেশী দুটি জাতের তুলার আবাদ করে ইতিমধ্যে সফলতা লাভ করেছেন। চলতি রবি মৌসুমেও ওইসব জাতের পাশাপাশি দেশে উদ্ভাবিত হাইব্রীড জাতের তুলার আবাদ শুরু হচ্ছে।
পাশাপাশি তুলা উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে বরগুনার আমতলীতে একটি সম্প্রসারণ উপকেন্দ্র স্থাপন করে বরিশাল, ঝালকাঠী, পটুয়াখালী ও বরগুনার বিভিন্নস্থানে তুলা আবাদ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। বিগত রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ২৫-৩০টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করে সরেজমিনে কৃষকদের হাতে কলমে তুলা আবাদ প্রযুক্তি ও বীজ হস্তান্তর করা হয়েছে। ফলে কৃষকদের মাঝে তুলা আবাদে আগ্রহ বাড়ছে। তবে এ অঞ্চলে তুলার বাজার তৈরীও এখন জরুরী বলে মনে করছেন কৃষিবীদগন।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক কৃষিবীদ মোঃ আক্তারুজ্জামান দক্ষিণাঞ্চলে তুলা উৎপাদনের বিষয়টি নিয়ে গবেষণা সহ বোর্ডের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রচেষ্টার কথাও জানিয়েছেন।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড ইতিমধ্যে গবেষণার মাধ্যমে ১৮টি উচ্চ ফলনশীল তুলার জাত উদ্ভাবন করেছে। দক্ষিনাঞ্চলে এরমধ্যে ‘সিবি-১২’ ও ‘সিবি-১৩’ সহ কয়েকটি জাতের আবাদ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীগন। আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত হাইব্রীড জাতের তুলার উৎপাদন সাড়ে ৪ টন থেকে পাঁচ টন পর্যন্ত । যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও বেশী বলে তুলা উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে দেশে প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২ লাখ ১০ হাজার বেল তুলা উৎপাদনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক। দেশে এখনো চহিদার মাত্র ২ ভাগের কিছু বেশী তুলা উৎপাদন হলেও এবার তা গত বছরের চেয়ে প্রায় ১৫ হাজার বেল বেশী । দক্ষিনাঞ্চলে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারের মাধ্যমে দেশে তুলার ঘাটতি থেকে কিছুটা হলেও উত্তরণ ঘটবে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। চলতি মৌসুমে দেশে তুলার দর ৩ হাজার ৪শ থেকে ৩ হাজার ৮শ টাকায় বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। এমনকি বেসরকারী বেশ কিছু সুতাকলও এবার দেশের বাজার থেকে তুলা ক্রয় করতে শুরু করেছেন বলেও জানা গেছে। ফলে ভাল দাম পাওয়া নিয়ে কৃষকরা যথেষ্ট আশাবাদী।
কৃষিখাতে দেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমির ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনের প্রেক্ষিতে তুলা উন্নয়ন বোর্ড এবং কৃষি মন্ত্রনালয় তুলার আবাদী জমি ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে বলে জানিয়েছে। এলক্ষ্যে উচ্চ ফলনশীল তুলার আবাদী জমি বৃদ্ধির পাশাপাশি রবি মৌসুমে দক্ষিনাঞ্চলের বিশাল অনাবাদী জমিকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
দক্ষিণাঞ্চলে খরিপ-২ মৌসুমে আমান ধান ঘরে তোলার পরে বিপুল জমি অনাবাদী থাকছে। এ অঞ্চলে গত খরিপ মৌসুমে ৮ লাখ ৭০ হাজার হেক্টরে আমন আবাদ হলেও রবি মৌসুমে বোরো আবাদের পরিমান ৩ লাখ ৭০ হাজার হেক্টরের মত। এর বাইরে শীতকালীন শাকসবজি, গম, ভুট্টা ও তরমুজ সহ আরো প্রায় ১ লাখ হেক্টরে নানা রবি ফসল আবাদ হলেও প্রায় সাড়ে ৪ লাখ হেক্টরই অনাবাদী থাকছে।
দক্ষিণাঞ্চলে রবি মৌসুমে বিপুল কৃষি জমি অনাবাদী নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকার মধ্যেই কৃষি মন্ত্রালয়ের নির্দেশে তুলা উন্নয়ন বোর্ড কম থেকে মাঝারী লবনাক্ত ও খরা প্রবন এলাকায় তুলা চাষ সম্প্রসারণে গবেষনা কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে হাইব্রিড জাতের তুলা চাষও শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচীর আওতায় গত বছর বরিশাল সদর ও বাবুগঞ্জ সহ ঝালকাঠীর গাবখান এলাকা এবং বরগুনার আমতলী ও সন্নিহিত কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে তুলার আবাদে সফলতা এসেছে। গত বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবার পরে দক্ষিণাঞ্চলের মাঝারী লবনাক্ত জমিতে প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করে কৃষকদের হাতে কলমে তুলা উৎপাদন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিচ্ছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, তামাকের পরিবর্তে তুলার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছেন তারা। তামাক পরিবশে ও জনস্বস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হলেও তুলা শুধু পরিবেশ বান্ধবই নয়, তা বাতাস থেকে কার্বণ শোষন করে স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখছে। এমনকি তুলা আবাদে কৃষকরা দেড় হাজার টাকা ব্যয় করে এখন সাড়ে ৫ হাজার টাকা আয় করছেন।
আর এসবের ধারাবাহিকতায় দক্ষিন ও দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চল এবং উপকূলীয় উচু ভূমিসহ নদী তীরবর্তী কম থেকে মাঝারী লবনাক্ত জমিতে তুলার আবাদ সম্প্রসারণে কর্মসূচীতে সফলতা আসছে। এতে করে আগামী ১০ বছরে দেশে তুলার আবাদী জমির পরিমান আরো অন্তত দশ হাজার হেক্টর বৃদ্ধি করা সম্ভব বলেও মনে করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড সহ মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ