বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পুনরায় নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। রাত পৌনে ১২টায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২২১টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৩’শ ৩৪ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রার্থী ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের আমিরুজ্জামান পিয়াল পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৩’শ ৯৫ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন (স্বতন্ত্র, আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কৃত) হাতি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩২ হাজার ২’শ ৩ ভোট। আওয়ামীলীগের প্রার্থী এ্যাডঃ হোসনে আরা লুৎফা নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ২১ হাজার ৮'শ ভোট।
বিএনপি-জামায়াত বিহীন এবারের এই নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৮ এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৮৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন।
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহনের লক্ষ্যে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুজন কনস্টেবল, দুজন অস্ত্রধারী আনসার, ১০ জন আনসার-ভিডিপি সদস্যসহ মোট ১৫ জনকে মোতায়েন করা রাখা হয়। নগরীর ২২৯টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৮৬টি ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ঝুঁকিপূর্ণ এই ৮৬টি ভোটকেন্দ্রে একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ তিনজন কনস্টেবল, দুজন অস্ত্রধারী আনসার ও ১০ জন আনসার-ভিডিপি সদস্যসহ মোট ১৬ জনকে মোতায়েন করা হয়েছে।
নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে মোট ১১ প্লাটুন বিজিবি, ১৭টি র্যাবের টিম, পুলিশ, এপিবিএন ও আনসার ব্যাটালিয়ন সমন্বয়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স, ১১টি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ছয়টি রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্স সার্বক্ষণিক টহলে থাকে।
এছাড়া নির্বাচনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের জন্য ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৬ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। এর পাশাপাশি ২২৯টি কেন্দ্রের সবগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিং করা হয়। নগরীর ২২৯টি কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চলে। তবে ইভিএম ত্রুটির কারনে অনেক বিড়ম্বনায় পড়েন ভোটারগন। অনেক কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন হ্যাং হওয়া, আঙ্গুলের ছাপ না মেলার কারনে ভোটারগন ভোট প্রদান করতে পারেননি। দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বুথে ঢুকে ইভিএম মেশিনের সমস্যার কারনে ভোট দিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যান ভোটারগন। তাছাড়া ইভিএম সমস্যার কারনে বেশ কিছু কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের পরেও ভোট নেয়া হয়।
ইভিএমে ত্রুটির কারণে প্রথম দফায় নিজের ভোট দিতে পারেননি মোস্তফা। ১০ মিনিট ভোটকক্ষে অবস্থানের পর বাইরে এসে এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা আগেই আশঙ্কা করেছিলাম এই ইভিএম নিয়ে। অবশেষে সেটাই সত্য হলো। ভোট দিতে গিয়ে ইভিএম বিকল হয়ে পড়ে। এ কারণে ভোট দেয়া সম্ভব হয়নি। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তারা টেকনিশিয়ান ডেকে মেরামতের কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছি, ইভিএমে ত্রুটি আছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে বিড়ম্বনায় পড়বে ভোটারা। এখন বাস্তবেই তাই হচ্ছে।
নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিটি কলেজ কেন্দ্রে থেকে অভিযোগ করেন কাউন্সিলর প্রার্থী শাহাদৎ হোসেন। তিনি বলেন, সকাল থেকে ইভিএমে সমস্যার কারণে অনেকে ভোটার ভোট দিতে পারছেন না। দীর্ঘ অপেক্ষার পর অনেকেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
এদিকে, ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে রিটানির্ং কর্মকর্তা বলেছেন, ইভিএমসহ নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে এ কথা বলেন।
ইভিএমের ত্রুটির নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার অভিযোগের প্রেক্ষিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, এমন অভিযোগ জানার পর প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে ইভিএমের কোনো ত্রুটি ছিল না। একজন ভোটার ভোট দিচ্ছিলেন। তাকে একটু অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা না করে ইভিএমকে এবং নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন।
ইভিএমের কোনো ত্রুটি নেই উলেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, কিছু ভোটারের হাতের আঙুল পরিষ্কার না থাকায় ছাপ মিলছে না। যে কারনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। হাত পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ইভিএম মেশিনে কোন ত্রুটি নেই।
অপরদিকে, দুপুর আড়াইটার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে এ অসন্তোষের কথা জানান মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইভিএমে ভোটের ধারণা দিতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নগরীর পাড়া-মহলায় মক ভোটিংয়ের উদ্যোগ কোনো কাজে আসেনি। ভোটাররা দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে না পেরে বাড়ি ফিরে গেছেন। এতে আমরা যতটা ভোট পোলের আশা করেছিলাম ততটা হবে না।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছি। এখন তারা ভোট দিতে পারছেন না, এটা দুঃখজনক। এ বিষয়গুলো জানানোর জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসেছিলাম।
শুরুর দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে ডামি ইভিএমে প্রচারণা চালানোর অনুমতি চাইলেও এটাকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন বলে অনুমতি দেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশন নিজ উদ্যোগে পাড়-মহল্লায় মক ভোটিংয়ের আয়োহ করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের এই উদ্যোগ কোনো কাজেই আসেনি। তারা নিজেরাও করতে পারলো না, আমাদেরকেও করতে দিল না।
তিনি আরও বলেন, দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ২৪টি কেন্দ্র পরিদর্শন করে কোথাও সন্তোষজনক ভোট পোল পাইনি। ভোটাররা কেন্দ্রে এলেও ইভিএম জটিলতায় সময়মতো ভোট দিতে পারছেন না।
ইভিএমকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে-রিটার্নিং কর্মকর্তার এমন মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বোকার স্বর্গে বাস করি না। কীভাবে ভোট দিতে হয় তা জানি। প্রথমবার ভোট দিতে গিয়ে ইভিএম লক হয়ে যায়। এজন্য আমি নিচে নেমে আসি। পরে ২০ মিনিট পর বুথে গিয়ে ভোট দেই।
এদিকে, নগরীর প্রায় সব ভোট কেন্দ্রেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হলেও শেষের দিকে গননা কালে নগরীর ৪ নং ওয়ার্ডে আমাশু কুকরোল এলাকায় ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। এসময় বিজিবির গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে কাউন্সিলর প্রার্থী ও যুবলীগ নেতা হারাধন রায়কে আটক করে পুলিশ। এছাড়া আর কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।