Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩ দিনেও উদ্ধার হয়নি ডিজেলবাহী কার্গো : পরিবেশ দূষণের শঙ্কা

ভোলা জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

ভোলার মেঘনায় ডিজেলবাহী কার্গো জাহাজ নিমজ্জিত হয়ে ভেসে গেছে অন্তত ১১ লাখ লিটার ডিজেল ও অকটেন। এসব ডিজেল মিশে গেছে পানিতে। এতে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। মেঘনা থেকে দ্রুত তেল অপসারণ করা না হলে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ডিজেলের দুর্গন্ধে মাছ শিকারে যেতে পারছেন না জেলেরা। কার্গো উদ্ধারে দেরি হলে ক্ষতির আশংঙ্কা।

সূত্র জানায়, গত রোববার রাতে সাড়ে ১১ লাখ লিটার ডিজেল নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা এমভি সাগর নন্দিনী-২ নামের একটি কার্গো যাচ্ছিল চাদঁপুরের উদ্দ্যেশে। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে সেটি নোঙর করা অপর একটি কার্গোর সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে তলা ফেটে বেরিয়ে যায় তেল। মুহূর্তে মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ে মেঘনায়। দ্রুত তেল নদীর পানিতে মিশে যাওয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পরিবেশবিদ এডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, তেল দ্রুত অপসারণ করা না হলে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে যারা এ পানি ব্যবহার করছে এবং মাছের উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।

দুর্ঘটনাকবলিত কার্গো সাগর নন্দিনী-২ এর মাস্টার মাসুদুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার দিন শুধু এক থেকে দেড় হাজার লিটার তেল উদ্ধার হলেও বাকি সব তেল পানিতে ভেসে গেছে। এতে প্রায় ১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি ইমাম হোসেন বলেন, কার্গোটি বর্তমানে পানির ৫৫ ফুট নিচে রয়েছে। এটি ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত উদ্ধার করা না হলে পুরোপুরি তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কার্গোর মাস্টার আরও বলেন, এটি উদ্ধারের চেষ্টা করছেন তারা। ইতোমধ্যে সাগর বধু-৩ নামের একটি জাহাজ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছে। উদ্ধারকারী জাহাজের ধারণক্ষমতা না থাকায় উদ্ধার অভিযান নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। কবে নাগাদ কার্গোটি পুরোপুরি উদ্ধার হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউ।

কার্গো উদ্ধারে সক্ষমতা নেই জানিয়ে বিআইডব্লিউটিএ যুগ্ম পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, আমরা কার্গোটির মালিকপক্ষকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে উদ্ধার করতে বলেছি, কারণ এটির ওজন বেশি থাকায় উদ্ধারকারী জাহাজের সক্ষমতা নেই। তেলের কারণে পানিতে কিছুটা প্রভাব তো পরছেই।

এদিকে দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। তবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন এবং পদ্মা ওয়েল কোম্পানির পক্ষ থেকে আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী চার কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তামিম আল ইয়ামিন বলেন, আমরা এখনও তদন্ত কমিটি গঠন করিনি, তবে করা হবে। কার্গোটি উদ্ধার এবং নিরাপত্তায় ২য় দিনের মতো কাজ করছে কোস্টগার্ড ও বিআইডব্লিউটিএ।
তদন্তকারী কর্মকর্তা পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিজিএম আসিফ মালেক বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত কার্গোটি উদ্ধারের পর বলা যাবে যে সেটিতে কি পরিমাণ ডিজেল অবশিষ্ট আছে। তারপর বলা যাবে আসলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে কিনা। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে কার্গো মালিকপক্ষ সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন।

এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা ওবায়দুল্লা বলেন, এ তেল ছড়িয়ে পড়লে মাছের মারাত্মক ক্ষতি হবে। বিশেষ করে মাছের প্রজনন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন কমে যাবে।

পরিবেশবিদ এডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন, ঘটনাস্থল থেকে সাগরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার, তাই বলা যায় এর প্রভাব সাগরেও পড়বে। তবে এক্ষুনি নিশ্চিত করে ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ