বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাস, চোরাচালান, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, আধিপত্য বিস্তার, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, গ্রুপে-গ্রুপে গোলাগুলিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে রোহিঙ্গারা। রাতের আধার নেমে আসলে শুরু হয় সাধারণ মানুষের আতঙ্ক। সর্বশেষ গত সোমবার ২৬ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তের গুলিতে মোহাম্মদ হোসেন প্রকাশ শফিক (৪০) নামের রোহিঙ্গা নেতা (হেড মাঝি) নিহত হয়েছে।
এর আগে ৯ডিসেম্বর বালুখালী ৮-ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-৪০ ব্লকে পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়েন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এসময় সলিম উল্লাহ ও রিদুয়ান নামে 2 রোহিঙ্গা নিহত হয়। এর আগে শুধু অক্টোবর মাসেই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন ৯ রোহিঙ্গা। দিনদিন সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে এ অবস্থায় ক্যাম্পের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেয়া তথ্য মতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত খুন ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টা অপহরণ মাদক অস্ত্র সহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা হয়েছে ১১ শতের বেশি। তন্মধ্যে মাদকের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৮২৪টি খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৫ টি দর্শন ও ধর্ষণ চেষ্টায় মামলা হয়েছে ২৫ টি এবং অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৭৫টি।
স্থানীয়দের মতে যদি রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো না যায় তবে উখিয়া-টেকনাফের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তাই রোহিঙ্গাদের চলাফেরার উপর নিয়ন্ত্রণে দাবি জানিয়েছেন তারা। উখিয়ার কুতুপালং এলাকার বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন জানান গেল এক মাসের ঘটনা মনে করলে এখানে গা শিউরে উঠবে। মূলত প্রত্যাবাসন নিয়ে দাঁড়ায় কথা বলে তাদের কোন শহর নানাভাবে হামলা করা হয়। একই সাথে নির্বিঘ্নে ইয়াবা ব্যবসা চাঁদাবাজি এবং আধিপত্য বিস্তার করতে খুনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে তারা। কিন্তু সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতৃত্বে থাকা অপরাধীকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কারণে প্রতিনিয়ত অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে।
পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ যার প্রভাব পড়তে পারে স্থানীয়দের মাঝে।
তাই রোহিঙ্গা অধু্য্যষিত এলাকা উখিয়া-টেকনাফে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দিয়ে যে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখাল তার বিনিময়ে কি পেল বাংলাদেশ?
রোহিঙ্গা সংকটের ৫ বছর ক্যাম্পে দেড় লাখের বেশি শিশুর জন্ম!
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ৫ বছরে প্রতিটি পরিবারে যুক্ত হয়েছে নতুন করে ২ থেকে ৩ সদস্য। এ সময়ের মধ্যে ক্যাম্পে জন্ম নিয়েছে নতুন দেড় লাখের বেশি শিশু। লাখ লাখ রোহিঙ্গার কারণে দিন দিন নানামুখী সংকটে কক্সবাজার। এদিকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ‘রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই লেভেল সাইড ইভেন্টে’যে পাচঁটি প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমি ৫টি প্রস্তাব তুলে ধরি। প্রস্তাবগুলো হলো- রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনৈতিক সমর্থন ও মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা; আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, জাতীয় আদালত এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলমান মামলায় সমর্থন প্রদান; জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা; আসিয়ানের পাঁচ-দফা ঐকমত্যে মিয়ানমারের অঙ্গীকারসমূহ এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করা এবং মিয়ানমারে জাতিসংঘসহ মানবিক সহায়তাকারীদের নির্বিঘ্নে প্রবেশ নিশ্চিত করা।
কিন্তু মিয়ানমারের টালবাহানা আর রোহিঙ্গাদের শর্তে আটকে আছে প্রত্যাবাসন। দু’দেশের মধ্যে চুক্তি হলেও শুরুই হয়নি কার্যক্রম। দু’বছরে ছয় দফায় ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করা হলেও নেইপিদোর তরফে তালিকা যাচাই-বাছাইয়ে নেই কোনো সাড়া।
কথা হয় ৭০ বছর বয়সী দিল মোহাম্মদের সঙ্গে। এ নিয়ে দুবার মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়েছেন তিনি। কিন্তু এবার নিরাপদে স্বদেশে ফিরতে চান দিল মোহাম্মদ। তার মতো কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারাও নিজ দেশ ফিরতে চান।
তাই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সেই ৫ টি প্রস্তাব গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিৎ আন্তর্জাতিক মহলের। এটি না হলে রোহিঙ্গারা হয়ে উঠবে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের আতঙ্কের কারণ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।