Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলে এবারো ৫০ লাখ টন দানাদার খাদ্য উৎপাদনের সম্ভবনা করোনা সহ একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কৃষিযোদ্ধাগন

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:২৫ পিএম | আপডেট : ৪:২২ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২

ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াশ’,‘অশণি’ ও ‘সিত্রাং’এর মত ভয়াবহ প্রকৃতিক দূর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেই বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় এবারো প্রায় ৫০ লাখ টন দানাদার খাদ্য ফসল উৎপাদন হচ্ছে। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে মাঠে এখন ফসল কাটার ধুম চলছে। দিগন্ত বিস্তৃত সোনালী জমির ধানের ছড়া সবার চোখ যুড়ায়। এ অঞ্চলের কৃষি যোদ্ধাগন এবার দুটি খরিপ মৌসুমে প্রায় ২৭ লাখ টন আমন ও আউশ উৎপাদনের পরে এখন আরো ১৮ লাখ টন বোরো ও গম আবাদে মাঠে নেমেছেন। সদ্যসমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় ৮ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের মাধ্যমে প্রায় ২০ লাখ ৬০ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষ্য অতিক্রম হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭৫ ভাগ জমির আমন কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে খরিপ-১ মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ৬ লাখ টন আউশ চাল উৎপাদন হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।

একইসাথে চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩ লাখ ৬৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের মাধ্যমে ১৬ লাখ ১৮ হাজার ৩৮৪ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে এখন মাঠে কৃষি যোদ্ধাগন। চলতি রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে আরো প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫৫ হাজার টন গম উৎপাদনের লক্ষ্যেও কৃষিযোদ্ধাগন কাজ শুরু করেছেন।
অপরদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ ভরকরে নজিরবিহীন প্রবল বর্ষনের পরেও এবার দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ১৫ লাখ টন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিযোদ্ধাগন আবাদ সম্পন্ন করেছেন। দেশে উৎপাদিত প্রায় ২ কোটি টন শীত ও গ্রীস্মকালীন সবজির প্রায় ২০ লাখ টনই দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় উৎপাদন হচ্ছে। এর প্রায় ১৫ লাখ টনই শীতকালীন সবজি।
বিগত খরিপ-১ মৌসুমে কাঙ্খিত বৃষ্টির অভাবে আবাদ কিছুটা ব্যাহত হবার পরেও দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় আবাকৃত জমি থেকে প্রায় ৬ লাখ টন আউশ চাল পাওয়া গেছে। তবে বৃষ্টির অভাবে বিগত মৌসুমে সারা দেশেই আউশের অবাদ কিছুটা হ্রাস পায়।
অপরদিকে সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে ৮ লাখ ৫৭ হাজার ১৩৮ হেক্টরে আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় ৮ লাখ ৭০ হাজার হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ২০ লাখ ৫৬ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষমাত্রাও অতিক্রম করবে বলে আশাবাদী ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। এরমধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের ৬ জেলাতেই ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৯৩৬ হেক্টর লক্ষ্য অতিক্রম করে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ১১২ হেক্টরে আমন আবাদ সম্পন্ন হয়। ফলে এ জেলাগুলোতে প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদন লক্ষ্য অতিক্রম করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলাতেও ১ লাখ ৬২ হাজার ১০২ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্য অতিক্রম করে প্রকৃত আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৯ হজার ৭৫৩ হেক্টরে। ফলে বৃহত্বর ফরিদপুরেও ৭.৪৬ লাখ টন আমন উৎপাদন লক্ষ্য অতিক্রম করছে বলে মনে করছে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। বৃহত্বর ফরিদপুরের আমন কর্তন প্রায় শেষ হলেও অপেক্ষাকৃত নিচু বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে বিলম্বিত আবাদের কারণে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫ভাগ জমির অমন কৃষকের গোলায় তোলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে আউশ ও আমনের সফলতার পরে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় এবার আরো প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টন বোরো চাল পাবার লক্ষ্যে বীজতলা তৈরী শেষের পথে। বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলায় জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহেই বীজ রোপন শুরু হচ্ছে। তবে ভাটি এলাকার বরিশালে আমন কর্তন সম্পন্ন হবার পরে বীজতলা তৈরী কেবল শুরু হতে যাচ্ছে। ফলে এসব জেলায় ফেব্রুয়ারীর শুরু থেকে মার্চের মধ্যভাগ পর্যন্ত বোরো আবাদ চলবে বলে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন জনিয়েছেন।
এদিকে ‘ব্লাস্ট’ সহ নানা ধরনের রোগের সাথে বিরূপ আবহাওয়ায় সম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলেও গমের অবাদ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে তবে চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হতে যাচ্ছে বলে আশাবাদী মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। ফলে চলতি মৌষুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে গমের উৎপাদন ১ লাখ ৫৪ হাজার টন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে ১.৬০ লাখ টনে পৌছতে পাড়ে বলে আশাবাদী ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলও।
বিগত প্রায় ৩টি বছরের করোনা মহামারী সংকটের মধ্যে কৃষি যোদ্ধাগনই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মূখ্য ভ’মিকা পালন করেন বলে মনে করছেন অর্থনতির শিক্ষকগন। তাদের মতে, একের পর এক প্রকৃতিক দূর্যোগ আর করোনা মহামারী সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে যে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরী করে তা থেকে উত্তরনে কৃষক ও কৃষির ভ’মিকা ছিল অপরিসীম। আর কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিকে সচল রাখতে নিরলশ পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কৃষিযোদ্ধারাই। বিগত খরিপ-১ ও ২ মৌসুম সহ চলতি রবি মৌসুমে বোরো, গম, তরমুজ ও শাক-সবজি উৎপাদনে প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকগন।
একের পর এক ঘূর্ণিঝড় ও প্লাবন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে আঘাত হানলেও দমে থাকেননি কৃষি যোদ্ধাগন। উপরন্তু বিদায়ী ভরা বর্ষা মৌশুমে দক্ষিণাঞ্চলে কাঙ্খিত বৃষ্টিও না হলেও গত অক্টোবরে শেষ বর্ষায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ ভর করে প্রবল বর্ষণে সব ফসলি জমি সয়লাব হয়ে যায়। অসময়ের অতিবর্ষণ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থাকে লন্ডভন্ড করে দিলেও কৃষিযোদ্ধাগন দমে থাকেননি। সাথে গত কয়েক বছরের করেনা সংকট কৃষি ব্যবস্থায় যথেষ্ঠ বিরূপ প্রভাব ফেললেও দমে থাকেননি দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিযোদ্ধাগন।
ফলে খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি এখনো যথেষ্ঠ শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলেই মনে করছেন কৃষিবীদগনও।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ