Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইপিএম পদ্ধতিতে সবজি চাষে লাভবান সীতাকুণ্ডের কৃষক

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) উপজলা সংবাদদতা | প্রকাশের সময় : ২৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে ৩ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন শীতকালীন সবজির চাষাবাদ হয়েছে এবার। সেই লক্ষ্যে সীতাকুণ্ড কৃষি বিভাগও সবজি উৎপাদনে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। তবে এবার প্রথম বারের মত আইপিএম পদ্ধতিতে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনে কৃষক পরিবারগুলো অনেক লাভের মুখ দেখেছেন বলে কৃষক পরিবারগুলো জানিয়েছেন। আইপিএম পদ্ধতির এ কার্যক্রমে পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে উপজেলার টেরিয়াইল, ধর্মপুর, বারৈয়াঢালা ও লালানগর এলাকায়। এ কার্যক্রমে উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মো. হাবিবুল্লাহ’র নেতৃতে একটি টিম গঠন করা হয়।
এ টিমে কাজ করছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শামসুল আলম, মো. শাহ আলম ও পিপাস কান্তি চৌধুরী। এদিক উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সবজি উৎপাদনের বহুল প্রচলিত, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইপিএম পদ্ধতিতে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনে রবি মৌসুমে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষি বিভাগ। এতে করে বিষ ও কীটনাশকের ব্যবহার ও কমেছে এবং নিরাপদ সবজি সংগ্রহ করতে পেরে খুশি ভোক্তারাও। বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে রোগ সহনশীল আধুনিক জাত ব্যবহারসহ আধুনিক পদ্ধতিতে যেমন মালচিং পদ্ধতি, নেট হাউজের মাধ্যমে সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। রোগ ও পোকামাকড় দমনের জন্য বিভিন্ন যান্ত্রিক পদ্ধতি যেমন হলুদ আঠালো ফাঁদ, নীল আঠালো ফাঁদ ও সাদা আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে ফেরোমন ফাঁদও পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যবহার করা হচ্ছে জমিতে। আর এসব পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন না হলে বিভিন্ন ধরনের জৈব বালাইনাশক যেমন তামাক পাতার গুঁড়ো ও ডিটারজেন্ট পাউডার, নিমের তেল, উপকারী ছত্রাক ট্রাইকোডার্মা ভেরিডি, ট্রাইকোডার্মা হার্জিয়ানাম, উপকারী ব্যাকটেরিয়া, বেসিলাস থ্রুয়েঞ্জিয়েন্সিস ব্যবহার করা হচ্ছে এখন। তার পরেও রোগ বালাই দমন না হলে অনুমোদিত মাত্রায় কেমিক্যাল পেস্টিসাইড ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া কেমিক্যাল পেস্টিসাইড ব্যবহার করলে কৃষকদের পোস্ট হারভেস্ট ইন্টারভেল মেনে চলার জন্যও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল ব্লকের অভিজ্ঞ এক কৃষক মো. জামাল উল্লাহ বলেন, চলতি বছরে ১৮ শতক জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। এতে আমার খরচ পরেছিল মাত্র ১০ হাজার টাকা। আর বাজারে ৩০ টাকা কেজি হিসেবে পাইকারীতে ফুলকপি বিক্রি করেছি ৩৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, রোগ ও পোকামাকড় দমনে সেক্স ফেরোমন ফাঁদসহ আইপিএম পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদনে এবার পোকার আক্রমন দেখা যায়নি। ফলে সবজি উৎপাদনে আগের চেয়ে অনেক গুণ বেশি লাভবান হয়েছি।
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মো. হাবিবুল্লাহ জানান, পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের ৫০০ কৃষকদের হাতে কলমে আইপিএম পদ্ধতিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন শেখানো হচ্ছে। চলতি রবি মৌসুম এবং খরিপ-১ মৌসুমের লাউ, কুমড়া, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, করলা, ধুন্দল, বেগুন, টমেটো, সিম, বাঁধাকপি, ফুলকপি ইত্যাদি ফসল চাষে আইপিএম পদ্ধতির প্রয়োগ করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমান রবি মৌসুমে সীতাকুণ্ডে ৩ হাজার ৮৪০ হেঃ জমিতে বিভিন্ন শীতকালীন সবজি চাষাবাদ হয়েছে। তারমধ্যে শুধু বারৈয়াাঢালা আইপিএম মডেল ইউনিয়নে ১০০একর জমিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন হবে প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ