Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অপ্রসস্ত মহাসড়কে বিবেকহীন প্রতিযোগীতায় বরিশালÑফরিদপুর- ঢাকা জাতীয় মহাসড়ক মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৫:৩৪ পিএম

বরিশালÑফরিদপুর ও বরিশাল-পটুয়াখালীÑকুয়াকাটা জাতীয় মহাসড়কটি ইতোমধ্যে মরনফাঁদে পরিনত হয়েছে। গত ২৬ জুন দক্ষিণাঞ্চবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হবার পরে ফরিদপুরের ভাংগা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কটির ক্ষমতার তুলনায় যানবাহনের চলাচল কয়েকগুন বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন লাশের মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে। এ মহাসড়কে দূর্ঘটনা এখন নিত্যকার ঘটনা। ফলে প্রতিদিনই আহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এমনকি গত ২৭ জুন থেকে এ মহাসড়কে প্রায় প্রতিটি দূর্ঘটনায়ই একাধিক মানুষের প্রাণহানী ঘটছে। এমনকি দূর্ঘটনা কবলিত যানবাহনগুলোও ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।

কিন্তু অপ্রসস্ত সড়কে দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌছার বিবেকহীন প্রতিযোগীতায় জানমালের ক্ষতি বেড়ে চললেও তা নিয়ন্ত্রনে সড়ক পরিবহন কতৃপক্ষ সহ পুলিশ ও প্রশাসনের তরফ থেকেও তেমন কোন উদ্যোগ নেই। গত জুনের শেষভাগ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বরিশাল থেকে ফরিদপুরের ভাংগা পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৫টি করে দূর্ঘটনা ঘটছে। এসব দূর্ঘটনায় ১ থেকে ছয়জন পর্যন্ত যাত্রীর প্রাণহানী ঘটছে। দূর্ঘটনা কবলিত যানবাহনের চালক ও সহকারীর প্রাণহানীর ঘটনাও ক্রমশ বাড়ছে। সবশেষ গত শুক্রবার বরিশাল-ফরিদপুর মহাসড়কের মহানগরীর কাশীপুর এলাকায় দুটি বাসে মুখোমুখি সংঘর্ষে ১ চালক নিহত হয়েছেন। এক হিসেবে জানা গেছে, গত জুনের শেষ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ মহাসড়কে অর্ধশতাধিক যাত্রীর প্রাণহানী ছাড়াও ৫ শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন।
পদ্মা সেতু চালু হবার পরে বরিশাল থেকে ১৬০ কিলোমিটার দুরের ঢাকায় সাড়ে ৩ ঘন্টার মধ্যে যাত্রীদের পৌছে দেয়ার নিশ্চয়তায় বেশীরভাগ যাত্রীবাহী বাসই বিবেকহীন প্রতিযোগতায় নেমেছে। কিন্তু বরিশাল থেকে ৯৫ কিলোমিটার দুরের ভাংগা পর্যন্ত এ মহাসড়কটি মাত্র ১৮Ñ২৪ ফুট প্রস্থ। উপরন্তু অনেক স্থানেই মহাসড়কটির অবকাঠামোগত অবস্থা খুবই নড়বড়ে। ১৯৬০-৬৫ সালের মধ্যে মাত্র ৫টন ক্ষমতার বহক্ষম ১২ ফুট প্রস্থ মহাসড়ক নির্মানের পরে বিগত ৬০ বছরে দুপাশে আরো ৬ থেকে ১০ ফুট প্রসস্ত করা হলেও বহন ক্ষমতা আর বাড়েনি। কিন্তু সে মহাসড়কেই এখন ৩৬ টন বহনক্ষম ভারী যানবাহন চলছে। ফলে বার বার মেরামত ও পূণর্বশন করেও মহাসড়কটির স্থায়ীত্ব এক বছরের বেশী নয়।
অপরদিকে ২০১৫ সালে ফরিদপুর থেকে ভাংগাÑবরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করার সরকারী সিদ্ধান্তের পরে ২০১৮ সালে এলক্ষে ভ’মি অধিগ্রহনে সরকার ১৮শ কোটি টাকা ছাড় করে। পাশাপাশি প্রস্তাবিত ৬লেন মহাসড়কের সম্ভব্যাতা সমিক্ষা ও নকশা প্রনয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়। কিন্তু পরামর্শক চুড়ান্ত নকশা জমা দিলেও তাতে বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়ায় বিষয়টির আর কোন অগ্রগতি হয়নি। পাশাপাশি ভ’মি অধিগ্রহন কাজ সম্পন্ন করার মেয়াদ ২০২০ সালে নির্ধরিত থাকলেও ২০২২-এর শেষে এসেও তা আলোর মুখ দেখেনি ।
উপরন্তু দাতার অভাবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পটির ভবিষ্যত খুব আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে নেই। ফলে এ মহাসড়কটি ৬ লেনে উন্নীত করণের কাজ কবে শুরু হবে তা বলতে পারছেন না কেউ।
আর অপ্রসস্ত ও নড়বড়ে মহাসড়কে সীমাহীন গতির অসম ও বিবেকহীন প্রতিযোগীতা দক্ষিণাঞ্চলের অগনিত মানুষে প্রাণ কেড়ে নেয়া থেকে শুরু করে জনমালকে ক্রমাগত ঝুকিপূর্ণ করে তুললেও তা থেকে উন্নরনে কারে মাথা ব্যাথা নেই।
এ ব্যাপারে বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জানান, আমরা ভ’মি অধিগ্রহনে অনেক আগেই ফরিদপুর,মাদারীপুর,গোপালগঞ্জ,বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনকে প্রস্তাবনা দিয়েছি। তবে বিষয়টি খুব কাঙ্খিত গতিতে এতদিন না এগুলেও সম্প্রতি একাজে গতি এসেছে। চলতি অর্থ বছরের মধ্যেই বেশীরভাগ ভ’মি অধিগ্রহনের কাজ চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছবে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে মহাসড়কে দূর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশের তরফ থেকে সম্ভব সবকিছু করার দাবী করা হলেও যাত্রী সহ সাধারন মানুষের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষন করা হয়েছে। সশ্লিষ্ট জেলা ও হাইওয়ে পুলিশকে আরো আন্তরিক হবারও পরামর্শ দিয়েছেন নামপ্রকামে অন্ছিুক একাধিক যাত্রী ও সাধারন মানুষ। 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ