Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দুর্নীতি

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদন্তের নির্দেশ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০২ এএম

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারকে ভন্ডপীর উল্লেখ করে তার বিপুল দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গত ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৩ আব্দুল্লাহ আল খায়রুম স্বাক্ষরিত চিঠি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর দেয়া হয়ছে। চিঠিতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এবং এইচ বি আর আই এর সাবেক মহাপরিচালক লেবাসধারী ভন্ড পীর শামীম আখতারের দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে কার্যালকে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কাযালয়ে তার বিরুদ্ধে লিখিত এ অভিযোগ দিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইলিয়াস হোসেন নামে এক নির্বাহী প্রকৌশলী।

এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তদন্তের নির্দেশনা দেয়া চিঠি পাওয়া গেছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কি ব্যবস্থা নেয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আগে তদন্তের কাজ শেষ হলে বলা যাবে। তবে চিঠির ভাষাটা যথাযথ হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রেরিত দশ পাতার অভিযোগে বলা হয়, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার। তার আরেকটি পরিচয়ও রয়েছে। তিনি নারায়ণগঞ্জের ভূঁইগড়ের হাকিমাবাদ খানকা-ই-মোজাদ্দেদিয়ার ‘পীর সাহেব’। পীর হিসেবে তার নাম আল্লামা হযরত মোহাম্মদ শামীম আখতার (মাদ্দাজিল্লুহুল আলিয়াহ)। কম্বোডিয়াসহ বাংলাদেশের কয়েকটি স্থানেও রয়েছে এ খানকার শাখা। পীরের মুরিদরা গণপূর্ত অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার। বাস্তবায়ন করছেন মোটা অংকের উন্নয়নকাজ। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থা থেকে সুযোগ-সুবিধাও আদায় করে নিচ্ছেন। গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর পদে আসার আগে মোহাম্মদ শামীম আখতার ছিলেন হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) মহাপরিচালকের দায়িত্বে। সেখানে কখনো কখনো প্রকল্প পাস না করে, কখনো টেন্ডার হওয়ার আগে কোটি কোটি টাকার উন্নয়নকাজ পেয়ে যান মুরিদ ঠিকাদাররা। মাসে লাখ টাকা বেতনে প্রকল্পের পরামর্শক, কর্মকর্তা-প্রকৌশলী থেকে বাবুর্চি-মালির মতো পদগুলোয় মুরিদরা পান নিয়োগ। মুরিদদের সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে তৎকালীন মহাপরিচালকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে এইচবিআরআই থেকে একটি তদন্ত কমিটি। মুরিদদের ঠিকাদারিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদানসহ আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ নিয়ে স¤প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে এইচবিআরআইয়ের এ তদন্ত প্রতিবেদন। মোহাম্মদ শামীম আখতার গণপূর্তের শীর্ষ পদে যোগ দেন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। এরপর গণপূর্ত প্রশিক্ষণ একাডেমি, একটি পূর্ত ভবনের উন্নয়ন, প্রধান প্রকৌশলীর বাসভবন সংস্কারসহ একাধিক প্রকল্পের কাজ পেতে শুরু করেন মুরিদরা। এরই মধ্যে তারা জায়গা করে নিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তর ঠিকাদার সমিতিতে। সর্বশেষ গত ১৬ নভেম্বর প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে ঠিকাদারদের মতবিনিময় সভায়ও দুনীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ঠিকাদারা। গত ২০১৯ সালের এপ্রিলে ‘নন ফায়ার ব্রিক প্লান্ট’ নির্মাণের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম বিল্ডার্সের সঙ্গে চুক্তি করে এইচবিআরআই। আইন অনুযায়ী, ১০ থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এমনকি এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে এইচবিআরআইয়ের বাজেটও নেই। তার পরও ‘নন ফায়ার ব্রিক প্লান্ট’ নির্মাণের প্রায় ১৪ কোটি টাকার কাজ কিংডম বিল্ডার্সকে দেন সংস্থাটির তৎকালীন মহাপরিচালক, যার কাজ এখনো শুরু হয়নি। কিংডম বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুসরত হোসেনকে পীর সাহেবের ঘনিষ্ঠ মুরিদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এইচবিআরআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে। কিংডম বিল্ডার্স, কিংডম হাউজিং, কিংডম কনস্ট্রাকশনসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নুসরত হোসেন। সরকারি অবকাঠামো উন্নয়নে লিপ্তথাকা গুরুত্বপূর্ণ অধিদপ্তরগুলোর মধ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তর অন্যতম। কিন্ত গত প্রায় ২ বছরের মতো সময় ধরে দায়িত্ব পালনে সীমাহীন অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার। তার স্বজনপ্রীতি ও নানাবিধ অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ভেঙে পড়েছে হণপূর্ত অধিদপ্তরের চেইন অব কমান্ড। এখন কোন প্রকৌশলীই তার আদেশ নির্দেশ পালন করেন না। এতেকরে গণপূর্ত অধিদপ্তরে এক লেজেগোবুরে অবস্থার বিরাজ করছে। দায়িত্ব পালনের ২ বছরে তিনি সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর পাশ করা প্রকল্পগুলোর কাজ ছাড়া নিজ প্রস্তাবনায় নতুন কোন প্রকল্প পাশ করাতে পারেননি। এমন কি সরকারের নতুন নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি বলে জানা গেছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজের সংস্কার কাজ এবং সাতক্ষীরা ১০০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল হাসপাতালের কাজ গণপূর্ত অধিদপ্তরকে দিয়ে না করিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজেই সে কাজ করার জন্য লিখিত আবেদন করার পর থেকেই বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।

এছাড়া প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে গণপূর্ত অধিদপ্তরের কাজ কমিশনের মাধ্যমে পাইয়ে দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। মোহাম্মদ শামীম আখতারের আরেকটি পরিচয়ও রয়েছে। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্থা থেকে সুযোগ-সুবিধাও আদায় করে নিচ্ছেন। এ সংক্রান্ত অভিযোগ আমলে নিয়ে ইতিমধ্যেই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে তা অভিযোগে বলা হয়েছে।

গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর পদে আসার আগে মোহাম্মদ শামীম আখতার ছিলেন হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) মহাপরিচালকের দায়িত্বে। সেখানে কখনো কখনো প্রকল্প পাস না করে, কখনো টেন্ডার হওয়ার আগে কোটি কোটি টাকার উন্নয়নকাজ পেয়ে যান মুরিদ ঠিকাদাররা। মাসে লাখ টাকা বেতনে প্রকল্পের পরামর্শক, কর্মকর্তা-প্রকৌশলী থেকে বাবুর্চি-মালির মতো পদগুলোয় পান নিয়োগ। মুরিদদের সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে তৎকালীন মহাপরিচালকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে এইচবিআরআই থেকে একটি তদন্ত কমিটি। আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ নিয়ে স¤প্রতি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে এইচবিআরআইয়ের এ তদন্ত প্রতিবেদন।

গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এইচবিআরআইয়ের গবেষণা খাতে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এ গবেষণা খাতের এ টাকা থেকে ১ কোটি ১১ লাখ টাকায় ‘অটোমেটিক বøক মেকিং প্লান্ট’ স্থাপন করা হয়। এ কাজও পায় কিংডম বিল্ডার্স। ঠিকাদারকে সব বিল প্রদান করা হলেও প্লান্টটির কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। এ ধরনের কাজ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংস্থার অভিজ্ঞ ব্যক্তি বা প্রকৌশলীদের নিয়ে কমিটি গঠনের নিয়ম থাকলেও সে ধরনের কোনো কমিটিই হয়নি। এছাড়া তিনি যোগদানের পরে ৫/৬ শতাধিক কর্মকর্তার বদলী করেছেন।

এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি মন্ত্রণালয়ে এসেছে আমি শুনেছি। আসলে যার নাম অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি এ অভিযোগ করেনি।

 

 

 



 

Show all comments
  • MRkarim Munna ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫১ এএম says : 0
    দেখলে তো মনে হয় সূফী সাধু বাবা।
    Total Reply(0) Reply
  • A T MahAbub ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫১ এএম says : 0
    দেখতে তো আল্লাহ ওয়ালা মানুষের চেহারা...
    Total Reply(0) Reply
  • Mar Sohel Rana ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫২ এএম says : 0
    এদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • MD Akkas ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৩৬ এএম says : 0
    এ বেটা ও জয় বাংলা হয়ে যাবে। আরেকটা নাটক শুরু।
    Total Reply(0) Reply
  • শুভ্র ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১১:৫৮ এএম says : 0
    ঢাকা ৪ নং ডিবিশনের প্রকৌশলী তো দুনীতির প্রধান হাতিয়ার তার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া জরুরী তার প্রধানমন্ত্রী কে ও গোনার সময় নেয়।। সে দুনীতি করবে পারলে ঠেকাক একথা আমার সামনে বলেছে। তার নাম ইন্জিনিয়ার মাহাবুব
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ