Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে দুটি রিভার ফায়ার স্টেশনই নানা সমস্যায় ধুঁকছে

‘এমভি অভিযান-১০’এ অগ্নিকান্ডের এক বছর আগামিকাল

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৩৫ এএম

ঝালকাঠীর সুগন্ধা নদীতে ‘এমভি অভিযান-১০’ নৌযানে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে প্রায় ৬৫ জন নারী-পুরুষ শিশুর প্রাণহানীর এক বছর পার হতে চললেও দক্ষিণাঞ্চলের অর্ধ শতাধিক নৌ রুট সহ দেড় হাজার কিলোমিটার নদ-নদী ও সন্নিহিত এলাকার অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে বিপুল জানমাল রক্ষার ন্যূনতম উদ্যোগ নেই। সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যমান দুটি রিভার ফায়ার স্টেশনে জনবল সহ অগ্নি নির্বাপন সরঞ্জাম অপ্রতুল। এ অঞ্চলের শতাধিক লঞ্চ ও স্টিমার ঘাট সহ সন্নিহিত এলাকার নিরাপত্তা বিধানে ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও শুধুমাত্র বরিশাল রিভার ফায়ার স্টেশনে ‘অগ্নি ঘাতক’ নামে ৩০ বছরের পুরনো একটি ‘রিভার ফায়ার ফাইটার’ রয়েছে। পটুয়াখালী রিভার ফায়ার স্টেশনে শুধুমাত্র ১টি স্পিডবোট নিয়ে ঐ অঞ্চলের নদ-নদী ও নৌপথে ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম (?) চললেও সম্প্রতি কিশোরগঞ্জের নিকলি রিভার ফায়ার স্টেশনের জন্য নির্মিত একটি রিভার ফায়ার ফাইটার সেখানে রা হলেও তা খুব শীঘ্রই সরিয়ে নেয়ার আদেশও জারী হয়েছে।
গত বছর ২৩ ডিসেম্বর শেষ রাতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি অভিযান-১০’এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে প্রায় ৬৫ যাত্রী নিহত হন। সেদিন সারা দেশের মত গোটা বিশ^ই এ অগ্নি দুর্ঘটনায় এতগুলো মানুষের প্রাণহানীতে ব্যথিত হয়েছিল। পোড়া লাশের গন্ধে ঝালকাঠীর বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বন্ধ বার্ণ ইউনিট চালু করে অভিযান-১০’এর দগ্ধ যাত্রীদের চিকিৎসায় ঢাকা থেকে বিশেষ মেডিকেল টিম আনা হয়।
সকলেই আশা করেছিল নদ-নদী নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথের নিরাপত্তায় এ অঞ্চলে রিভার ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বরিশাল ও পটুয়াখালীতে বিদ্যমান দুটি রিভার ফায়ার স্টেশনের মান উন্নয়ন হবে। প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়ার দাবী ছিল আমজনতার। কিন্তু গত এক বছরেও সে লক্ষ্যে কোন উদ্যোগের খবর পাওয়া যায়নি।
সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের এ দুটি রিভার ফায়ার স্টেশনে কোন ‘রিভার এ্যাম্বুলেন্স’ নেই গত দেড় দশকেরও বেশী সময় ধরে। এমনকি গোটা দক্ষিণাঞ্চলে শুধু বরিশাল রিভার ফায়ার স্টেশনে ৫ জন ডুবুরী পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৪ জন। এমনকি পটুয়াখালী রিভার ফায়ার স্টেশনটি প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পরেও কোন জনবল মঞ্জুরী মেলেনি। তবে সম্প্রতি প্রেষণে দুজন ডুবুরী নিয়োগ করা হয়েছে।
বরিশাল স্টেশনে ৩০ বছরের পুরনো রিভার ফায়ার ফাইটারটিতে এখন কোন অত্যাধুনিক অগ্নি নির্বাপন সরঞ্জাম নেই। এমনকি অনেক দুর্যোগময় মুহূর্তে এ ফায়ার ফাইটারটি সঠিক দিক খুঁজে পেতেও সমস্যায় পরে। গত বছর ঝালকাঠীর অদূরে সুগন্ধা নদীতে ‘এমভি অভিযান-১০’ নৌযানে অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে বরিশাল থেকে ‘এমএল অগ্নিঘাতক’ দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে রওয়ানা হয়ে ঘন কুয়াশায় পথ হারিয়ে কীর্তনখোলা নদীর চড়ায় আটকে যায়। অগ্নিঘাতক-এ জিপিএস ও ফগ লাইট সহ আরো অত্যাধুনিক নৌ সরঞ্জাম সংযোজনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন ওয়াকিবহাল মহল। পাশাপাশি অত্যাধুনিক অগ্নি নির্বাপন নৌযান মোতায়েনও জরুরী।
দক্ষিণাঞ্চলে দুটি রিভার ফায়ার স্টেশনই হাতে গোনা জনবল নিয়ে সংকটে ধুঁকছে। ফলে নৌপথে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা সহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এসব রিভার ফায়ার স্টেশন সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারছেনা। অবিলম্বে এসব রিভার ফায়ার স্টেশনের মান উন্নয়নের সাথে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের দাবী দক্ষিণাঞ্চলের আমজনতার।
পাশাপাশি বরিশালের হিজলা, ঝালকাঠী, বরগুনা ও ভোলাতে অনুরূপ আরো একাধিক রিভার ফায়ার স্টেশন স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ সহ নৌযান ব্যবসায়ী ও নৌ পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারীগণও।
নৌযান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন যাত্রী চলাচল সংস্থার অন্যতম পরিচালক সাঈদুর রহমান রিন্টু ও মঞ্জুরুল আহসান ফেরদৌস দেশের বৃহত্তম নৌপথ ও নৌ-পরিবহন এলাকা হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এ অঞ্চলের প্রতিটি জেলা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে অবিলম্বে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সহ রিভার ফায়ার স্টেশন স্থাপনের দাবী জানান। পাশাপাশি বিদ্যমান দুটি রিভার ফায়ার স্টেশনের আধুনিকায়নেরও যৌক্তিকতাও তুলে ধরেন তারা।
এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর বরিশাল অঞ্চলের উপ-পরিচালকের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, আমরা এসব বিষয়ে সবসময়ই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছি। কুায়াকাটা ও ভোলার ইলিশাতে দুটি রিভার ফায়ার স্টেশন স্থপনের নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ডুবুরীর সংখ্যা বৃদ্ধির একটি কার্যক্রমও গ্রহণের কথা জানান তিনি। অদূর ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে আরো রিভার ফায়ার স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবিহত করবেন বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ