Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রশ্নবিদ্ধ বাংলা নাটকের মান

রিয়েল তন্ময় | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

এক সময় দেশের নাটকের গল্প, সংলাপ, দক্ষ অভিনয় ও সামাজিক বক্তব্য, সর্বোপরি নির্মল বিনোদন দর্শককে বিমোহিত করে রাখত। কমেডি হোক আর সিরিয়াস হোক, নাটকের উপস্থাপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। বর্তমানের টিভি নাটকের মান প্রশ্নবিদ্ধ। কোয়ালিটির চেয়ে কোয়ান্টিটির সংখ্যা অত্যধিক। এর অন্যতম কারণ হয়ে রয়েছে, টিভি চ্যানেলগুলোর মার্কেটিং টিম। তাদের পছন্দ-অপছন্দের ওপর নাটকের প্রচার নির্ভর করে। এর মধ্যে চলছে ইউটিউব-এর দাপট। ভিউ পাওয়ার নেশায় অনেকে নাটকের মানের চেয়ে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন নাটক নির্মাণে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ফলে নাটক এখন শুধুই ভিডিও কনটেন্টে পরিণত হয়েছে। নাটক মানস¤পন্ন না হলেও ভিউ সংখ্যাই এর দর্শকপ্রিয়তা নির্ধারন করছে। যে নাটকের যত বেশি ভিউ হচ্ছে সেটিকেই সেরা হিসেবে ধরা হচ্ছে। ফলে নির্মাতা, প্রযোজক ও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা মানের দিকে খেয়াল না করে ভিউয়ের পেছনে ছুটছেন। এতে নাটকের ঐতিহ্য হারাচ্ছে দেশীয় নাটক। সাধারণত একটি নাটক পুরো না দেখলেও তা ভিউ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফলে নাটকের মান বিচার করা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে চটুল গল্পের ভাঁড়ামোপূর্ণ নাটকের সংখ্যা বেশি। নাট্যবোদ্ধারা বলছেন, এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকারের উপায় নেই। যারা এই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে রয়েছেন তাদের উচিত বিষয়গুলো নিয়ে ভাবা। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো এখনও চেষ্টা করছে নাটকের মান ঠিক রাখার। দর্শকদেরও এখানে দায়িত্ববোধের জায়গা রয়েছে। যারা নাটক নির্মাণ বা অভিনয় করছেন তাদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকায় থাকা জরুরি। নাট্যকার, অভিনেতা ও পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন দোদুল বলেন, আমরা যদি সচেতন হই, সেটা নির্মাতাদের জায়গা থেকে হোক বা চ্যানেলের জায়গা থেকে হোক, তাহলে নাটকের মান ধরে রাখা সম্ভব। রুচিশীল দর্শক আমরা হারাতাম না। একটি ভালো নাটক নির্মাণে নাট্যকারের কৌশল দরকার, পরিচালকের কৌশল দরকার। শিল্পীদের হাতে যদি আমরা ওই ধরনের ভালো চরিত্র তুলে দিতে পারি, তাহলে একজন শিল্পী ভালো অভিনয় করতে পারবে। শুধু তাকে সুন্দর সিচুয়েশনাল সংলাপ দিতে হবে, মানুষের ভালো লাগার মত সিচুয়েশন দিতে হবে। অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলা নাটকের মান নিয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে এটাই, বর্তমানে নাটকের ভিউ বাড়ানোর জন্য যে ধরনের নাম দেয়া হচ্ছে, তা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। একটি বাজে ট্রেন্ড শুশু হয়েছে যে, একটি নাম যদি হিট হয় অনেক পরিচালক সেই নামের প্রতি ঝাপিয়ে পড়ে। এতে বোঝা যায় শিল্পের জায়গা থেকে নাট্যকারের ক্ষমতা কমে গেছে। এখন এমন এক পরিস্থিতি যে, ঘরে ঘরে নাট্যকার জন্মে গেছে। আসলে নাট্যকারদের সংগঠনও তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি বা অন্য সংগঠনও কিছু করতে পারছে না। আল্টিমেটলি অজ্ঞরা এসব কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে নাটকের মান কমে যাচ্ছে। পড়াশোনা জানারা নাট্যকার হলে নাটকের মানও ভালো হতো। নাটকের মান ও অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ভিউ ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। ভিউ ব্যবসায়ীদের কাছে যারা জিম্মি তারা সমাজ নিয়ে ভাবেনা, পরিবার নিয়ে ভাবে না, পাশের মানুষটাকে নিয়েও ভাবে না। তারা সবসময় চিন্তা করে, যেকোনো একটা সাবজেক্ট নিয়ে নিজে হাইলাইটস হতে পারলেই উঠে গেল। আল্টিমেটলি এই ধরনের মেন্টালিটি থেকে যদি বের হয়ে না আসা যায়, তাহলে নাটকের মান ভাল হবে না। নাট্যকার ও নাট্যনির্মাতা দীপু হাজরা বলেন, নাটকের নাম নাটকের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা সত্য, অনেক নাট্যকার ভিউয়ের জন্য অশ্লীল কিংবা রুচি বিবর্জিত নাম ব্যবহার করা হয়। আমার মতে, শুরুতে দর্শক হয়তো নাম দেখে নাটকটি দেখা শুরু করে। কিছুক্ষণ পর আর নাটকটি দেখে না। কারণ, তারা নামের সাথে গল্পের মিল খুঁজে পায় না। আমি মনে করি, একটি নাটকের নাম নির্ধারনের ক্ষেত্রে গল্পের সাথে মিল রেখেই হওয়া উচিত। এটা ঠিক, নেটদুনিয়ায় ভিউই এখন একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেটিকে অস্বীকারও করা যায় না। তবে এই ভিউয়ের জন্য মানহীন নাটক তৈরি করা উচিৎ নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নাটকের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে ভালো নাটকও আছে। তবে সেই সংখ্যাটা কম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ