Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ছাতকে সোনালী চেলা নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে সেতু: ঘুচবে দুই উপজেলাবাসীর দুর্ভোগ

ছাতক (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:৫৭ পিএম

সুনামগঞ্জের ছাতকে সোনালী চেলা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে সুনামগঞ্জের ছাতকের সাথে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্ঠান্ত স্থাপন হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জ দুই উপজেলার ব্যবসা-বাণিজ্য আরও প্রসারিত হবে। ঘুচবে এ
অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের চরম দুভোর্গ।

জানা যায়, ছাতক-দোয়ারা ও কোম্পানীগঞ্জের কিছু অংশ নিয়ে একসময় বৃহত্তর ছাতক ছিল। পরবর্তীতে দোয়ারা ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিভক্তি হয়। এই তিন উপজেলার উত্তর সীমান্তে রয়েছে ভারত। ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেঁষে সোনালী চেলা ও মরা চেলা নদী এসে যুক্ত হয়েছে সুরমা নদীতে। মূলত নদী কেন্দ্রিক এখানে গড়ে উঠে পাথর, চুনাপাথর, বালুসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য। এসব ব্যবসা-বাণিজ্য প্রাচীন যুগ থেকে চলে আসছে। যে কারণে এখানে গড়ে উঠেছে একাধিক শিল্প কারখানা। তেরটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ছাতক উপজেলা। এ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সোনালী চেলা নদী। ওই নদী পথে নৌকা দিয়ে পরিবহন হয় বালু পাথর। নদীর ওপারে রয়েছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নসহ অন্যান্য এলাকা। ছাতকের ইসলামপুর ও কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল দুই ইউনিয়নকে বিভক্তি করে রেখেছিল সোনালী চেলা নদী। হেমন্ত ও বর্ষায় মানুষ খেয়া নৌকায় পারাপারের একমাত্র ভরসা ছিল। সে হিসেবে এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের দূভোর্গ পোহাতে হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় এলাকাবাসীর দাবী ছিল সোনালী চেলা নদীতে একটি সেতু নির্মাণের কিন্তু নির্মিত
হয়নি। অবশেষে নির্মাণ কাজ শুরু করেছে বর্তমান আওয়ামীলীগের সরকার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ছাতকের ইসলামপুর
ইউনিয়নের গোয়ালগাঁও ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল ইউনিয়নের আমবাড়ী নামক স্থানে সোনালী চেলা নদীর ওপর সেতু
নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। ২০২০ সাল থেকে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। দুই উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে স্বপ্ন এখন পূরণ হতে চলছে। সেতু ও এ্যাপ্রোচের কাজ শেষ হলে কোম্পানীগঞ্জ থেকে সরাসরি ছাতকের ইসলামপুর ইউনিয়নের গনেষপুর গ্রাম সংলগ্ন সুরমা নদীর খেয়াঘাট পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। পরবর্তীতে মরা চেলা নদীতে আরও একটি ব্রিজ নির্মিত হলে নোয়ারাই হয়ে
ছাতক সুরমা সেতুর সাথে সংযুক্ত হবে সড়ক যোগাযোগ। তখন সারা দেশের সাথে ওই এলাকার মানুষের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আর বাঁধা থাকবেনা। প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও। এদিকে সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর শুরু হবে সেতুর দুই পাশের ১হাজার মিটার এ্যাপ্রোচের কাজ। ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এ সেতুটির নির্মাণ কাজ করছে মেসার্স নরারুন নামের ঢাকার এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ কোটি টাকা।

ছাতকবাজার একতা বালু উত্তোলন সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি মুরাদ আদনান বলেন, সোনালী চেলা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পর চালু হলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বুড়িডহর, লামলিগাঁও, চাটিবহর পূর্বপাড়া, সেরপুরবাজার, আমটিলাবাজার ও আমবাড়ি এলাকার হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে। নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক সমছু মিয়া ও টিলাপাড়া গ্রামের বালু ব্যবসায়ী আপ্তাব আলী বলেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে ছাতক শহরটি তাদের পাশে। এ জন্য তারা আমবাড়ি থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা যোগে সুরমা নদী হয়ে ছাতক শহরে যাতায়াত করে আসছেন। সোনালী চেলা নদীতে সেতুটি স্থাপন হওয়ায় তারা খুশি। সেতুটি চালু হলে সড়ক পথে গনেষপুর খেয়া ঘাট পর্যন্ত তারা দ্রুত যাতায়াত করতে পারবেন। এতে সময়ও বাঁচবে। ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গোয়ালগাঁও গ্রামের জাহিদ মিয়া, ছালেক আহমদ, জিল্লুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, মুরাদ মিয়া, ইসলামপুর গ্রামের জাবেদ মিয়াসহ আরো অনেকেই জানান, গোয়ালগাঁও, ইসলামপুর, আফজলপুর, মধ্যগনেষপুর, মৌলভীরগাঁও, নোয়াগাঁও, নিয়ামতপুর, জামুরা, গনেষপুর, বাহাদুরপুরসহ আশপাশ গ্রামের হাজার হাজার মানুষের বর্ষাকালে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। বর্ষায় নৌকা আর হেমন্তে তারা পায়ে হেটে চলেন। সেতুটির কাজ শেষ হলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে দূভোর্গ ঘুচবে। উন্নয়নমূলক কাজ করায় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

ছাতক উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, সোনালী চেলা নদীর ওপর নির্মিত গোয়ালগাঁও সেতু নির্মাণ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ কোটি টাকা। সেতুর কাজ প্রায় ৬০ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ওই সেতুর ছাতক অংশে ২শ মিটার ও কোম্পানীগঞ্জ অংশে ৮শ মিটার এ্যাপ্রোচের কাজ বাকি রয়েছে। এটি ছাতকের বৃহত্তম সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৪৭০মিটার। ১৩ জোড়ার ২৬টি পাকা পিলারের কাজ শেষ হয়ে গ্রার্ডার স্থাপনের কাজ চলছে। ছাতক অংশে গ্রার্ডার স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগে। চলছে কোম্পানীগঞ্জ অংশের গ্রার্ডার স্থাপনের কাজ। এছাড়া এলজিইডির অধীনে উপজেলার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে বটেরখাল নদীতে বিনন্দপুর-খলাগাঁও এলাকায় ১২ কোটি ৮লাখ টাকা ব্যয়ে ৯৯ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুর কাজ। সাড়ে ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ছনবাড়ীবাজার এলাকায় ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ব্রিজ, সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চানপুর বাজার এলাকায় ৫২ মিটার দৈর্ঘ্য ব্রিজ, ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৮ মিটার দৈর্ঘ্য কুপিয়া ব্রিজ, আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে কালারুকা-তাজপুর
সাড়ে ৭কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজ, সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গোবিন্দগঞ্জ-বসন্তপুর সড়কের ৫ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ, ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মঈনপুর-কাঠাশলা এক কিলোমিটার আরসিসি রাস্তার কাজ শুরু হবে, ৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নোয়ারাই-বালিউড়া রাস্তার ৪৮মিটার দৈর্ঘ্য মাগুড়া ব্রিজ, প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে চরমহল্লা চানপুন রাস্তায় দুটি ব্রিজ, ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাতগাঁও-মড়লপুর ২কিলোমিটার আরসিসি রাস্তাসহ ধারণ-আমেরতল ২কিলোমিটার আরসিসি রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে।

উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আফছার আহমেদ জানান, ছাতক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী সোনালী চেলা নদীর ওপর নির্মিত গোয়ালগাঁও সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। সেই হিসেবে দ্রুত গতিতে নির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ পর্যন্ত সেতুর ৬০ভাগ কাজ হয়েছে। নিয়মিত তদারকি করছে উপজেলা এলজিইডি অফিস। সেতুর ছাতক অংশে ২শ মিটার ও কোম্পানীগঞ্জ অংশে ৮শ মিটার এ্যাপ্রোচের কাজ হবে। ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য এ সেতুটি ছাতকের বৃহত্তম সেতু। ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ কোটি টাকা। তিনি বলেন, মরা চেলা নদীতে আরেকটি ব্রিজ হবে। পাশে আরও একটি কালভার্ট নির্মাণ করে নোয়ারাই সড়কের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন হবে।
গত ১৩ ডিসেম্বর দুপুরে সোনালী চেলা নদীর ওপর নির্মানাধীন সেতুটির কাজ পরিদর্শন করেছেন সাবেক চীফ ইঞ্জিনিয়ার খলিলুর রহমান, সিলেটের এডিশনাল চীফ ইঞ্জিনিয়ার প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস, সুনামগঞ্জের এক্সইএন মাহবুব আলমসহ উর্ধতন কর্মকর্তাগন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ