Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পদ্মা রিভার ক্রসিং হয়ে পায়রা ও রামপালের আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১১:১৩ এএম | আপডেট : ১১:১৪ এএম, ২০ ডিসেম্বর, ২০২২

প্রায় ৫ হাজার ৮শ কোটি টাকা ব্যায়ে রামপাল ও পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে মোংলা/ বরিশাল ও গোপালগঞ্জ হয়ে ঢাকার আমীন বাজার পর্যন্ত নির্মিত ৪শ কেভি সঞ্চালন লাইন চালুর মধ্যে দিয়ে জাতীয় গ্রীডে ২ হাজার ৬৪০ মোগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে পায়রা থেকে বরিশাল-গোপালগঞ্জ হয়ে পদ্মা নদী পার হয়ে পরিক্ষামূলকভাবে ঢাকার আমীন বাজার গ্রীড সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ পৌছানোর মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সুচিত হয়েছে। পরবর্তিতে ১৭ ডিসেম্বর দুপুর ৩.৪৬ মিনিটে ৪শ কেভি লাইনটির ১ম সার্কিট ও ৩.৪৮ মিনিটে ২য় সার্কিটের মাধ্যমে বানিজ্যিক ভাবে পায়রার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত হয়েছে। একইসাথে রামপালে ‘বাংলাদেশÑইন্ডিয়া ফ্্েরন্ডশিপ থার্মাল পাওয়ার স্টেশন’র বিদ্যুৎ মোংলা-গোপালগঞ্জ হয়ে আমীন বাজার গ্রীড সাব-স্টেশনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয়েছে। তবে রামপাল পাওয়ার স্টেশনের দুটি ইউনিটই এখনো পরিক্ষামূলক ভাবে উৎপাদনে রয়েছে। খুব শিঘ্রই বানিজ্যক ভিত্তিতে ইউনিট দুটির উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে পূর্ণ লোডে যুক্ত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
অপরদিকে উৎপাদন শুরুর প্রায় ৩০ মাস পরে দেশের অন্যতম বৃহত পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির মধ্যে দিয়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরন ও সঞ্চালন ব্যবস্থায় নতুন মাইল ফলক রচিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের দুটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানীর সমান মালিকনায় প্রায় ১৯ হাজার ৫শ কোটি টাকা ব্যয়ে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ চুক্তি স্বাক্ষরের পরে ২০২০-এর ফেব্রুয়ারীতে পরিক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। ঐবছরই ১৫ মে প্রথম ইউনিট এবং ৮ ডিসেম্বর ২য় ইউনিট বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। গত ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের অন্যতম বৃহত এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করেন।
তবে এতদিন বৃহত এ উৎপাদন কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবারহ করা সম্ভব হয়নি ট্রান্সমিশন লইন নির্মিত না হওয়ায়। ফলে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিটের কখনো ১টি, আবার মাঝে মধ্যে ২টি ইউনিটই অর্ধেক লোডে চালিয়ে শুধু পশ্চিম জোনের ২১টি জেলার পূর্ণ চাহিদা মেটান হচ্ছিল। এতে গত ১০ মাস ধরে দেশব্যাপী লোডসেডিং-এর কোন ছোয়া লাগেনি বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১ জেলার পশ্চিম জোনে।
পায়রা থেকে বরিশাল-গোপালগঞ্জ হয়ে ১৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪শ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন সংযুক্তির ফলে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরহে আর কোন বাধা রইল না। বাংলাদেশ সরকার ও পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী-পিজিসিবি’র যৌথ অর্থায়নে প্রায় ২ হাজার ৮শ কোটি টাকা ব্যায়ে ১৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ পায়রা-বরিশাল-গোপালগঞ্জ ৪ লাখ ভোল্টেজের ডবল সার্কিট সঞ্চালন লাইনটি নির্মান কাজ ২০১৭ সালে শুরু হয়ে ২০২৩-এর জুনের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। এ গ্রীড লাইনের বেশীরভাগ এবং গোপালগঞ্জে সাব-স্টেশনের নির্মান কাজ ইতোপূর্বে শেষ হলেও রামপাল-মোংলা-গোপালগঞ্জ হয়ে পদ্মা নদীর ওপর রিভার ক্রসিং টাওয়ার সহ ৯ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মানের দুরুহ কাজ সম্পাদনে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে সব অপেক্ষার পালা শেষ করে ১৪ ডিসেম্বর পরিক্ষামূলক ভাবে এবং ১৭ ডিসেম্বর বানিজ্যিক ভাবে পায়রা ও রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয়েছে।
তবে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পরিক্ষামূলক ভাবে চালুর পরে বিভিন্ন ধরনের পরিক্ষা নিরিক্ষা অব্যাহত থাকায় রোববার পর্যন্ত পায়রা’র ১টি ইউনিট সচল রেখে সেখান থেকে ৬শ মেগাওয়াটের মত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবারহ হচ্ছিল। খুব শিঘ্রই রামপালে বানিজ্যিক উৎপাদন শুরুর পরে সেখান থেকে মোংলা-গোপালগঞ্জ হয়ে আমীনবাজার পর্যন্ত বানিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবারহ শুরু হচ্ছে। সাথে পায়রা’র দুটি ইউনিট থেকেও পূর্ণলোডে, ১,৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। ফলে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পায়রার বিদ্যুৎ আমীন বাজার হয়ে জাতীয় গ্রীডে সরবারহ করা হবে বলে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তত্ববধায়ক প্রকৌশলী-অপারেশন শাহ আবুল হাসিব জানিয়েছেন।
চীনা কারিগরি সহায়তায় পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধনখালী ইউনিয়নে পায়রা নদী তীরে কয়লা ভিত্তিক ৬৬০ মেগাওয়াটের একক সর্ববৃহত দুটি ইউনিট থেকে ৪শ কেভি ডবল সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে ১৬৩ কিলোমিটার উত্তরে গোপালগঞ্জে বরিশালÑফরিদপুরÑঢাকা জাতীয় মহাসড়কের পাশে নির্মিত সাব-স্টেশনে পৌছছে। সেখান থেকেই মোংলাÑগোপালগঞ্জ সঞ্চালন লাইনে যুক্ত হয়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে তা ঢাকার আমীন বাজার হয়ে জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত হয়েছে।
এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের ১ হাজার ২৭০ কোটি টাকা সহ ২ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা ব্যায়ে রামপাল-মোংলা-গোপালগঞ্জ-আমীনবাজার ৪শ কেভি ডবল সার্কিট লাইনটি নির্মিত হয়েছে বলে জানা গেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ