Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দখল-দূষণে আনোয়ারার ৫ খাল

বোরো চাষের সেচ শঙ্কা কৃষকদের

নুরুল আবছার তালুকদার, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০২ এএম

দখলে-দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ৫ খাল। প্রভাবশালীদের দখল, কারখানার বিষাক্ত বৈর্জ্য, খাল খনন প্রকল্প কাজে অনিয়ম ও মাছ শিকারের জন্য খালে বাঁধের কারণে খালগুলো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এসব খালের মধ্যে সাপমারা খাল, ইছামতি খাল, শাহ মোহছেন আউলিয়া খাল, কেয়াগড় কান্দুরী খাল ইজারা বিলের সংযোগ খাল ও শ্রীমতি খাল এখন মৃত প্রায়। এতে করে এসব খাল থেকে সেচের পানি গ্রহণে বোরো চাষে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছেন দখল-দুষণের বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তর দেখবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাপমারা খালের দু’পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান-স্থাপনা, ইছামতি খাল ভর্তি কচুরিপানা, অন্যান্য খালগুলো মাছ শিকারের জন্য বাঁধ নির্মাণসহ পানি চলাচল বন্ধ থাকায় অনেকটা শুকিয়ে গেছে। এসব খাল এখন মৃত খালে রুপ নিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ছড়িয়ে আছে এই ৫ খালের শাখা উপশাখা। এসব খালের পানিতে চলে বারখাইন, বরুমচড়া, বটতলী, হাইলধর, চাতরী, পরৈকোডা ও আনোয়ারা সদরের বোরো চাষ। কিন্তু দখল-দূলণ আর বাঁধ নির্মাণের ফলে খালগুলো এখন মৃত খালে রূপ নিচ্ছে।
কর্ণফুলি নদীর মোহনা থেকে শঙ্খ নদী পর্যন্ত বয়ে চলেছে সাপমারা খাল। এ খালের পানি দিয়ে রায়পুর, বারশত, বটতলী ও জুইদন্ডী ইউনিয়নের কৃষকদের রবিশস্য-চাষাবাদ ছাড়াও জৈদ্দারহাট, আন্নর আলী সিকদারহাট, ওয়াহেদ আলী চৌধুরী বাজার ও জুঁইদন্ডী চৌমহনী বাজারের সব মালামাল চট্টগ্রাম শহর থেকে নৌকাযোগে আনা নেয়া হত। বর্তমানে খালের দু’পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকান। মাছ শিকারিরা খালের মাঝে শতাধিক বাঁধ দিয়েছে। এতে করে খালটি এখন মুমূর্ষ অবস্থা।
অন্যদিকে প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন খাল ইছামতি। খালটি উত্তরে শিকলবাহা খাল হয়ে মিলিত হয়েছে কর্ণফুলী নদীর সাথে আর দক্ষিণে শঙ্খ নদীতে মিলিত হয়। এক সময় চট্টগ্রাম শহরে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল এ খাল। এই খাল দিয়ে নিয়মিত চলত আনোয়ারা-চাক্তাই-ফিরিঙ্গিবাজার লঞ্চ সার্ভিসও। ইছামতি খালের অসংখ্য শাখা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রবাহিত হয়েছে, যা থেকে বছরজুড়ে বোরো রবিশস্য চাষাবাদ চলে। এছাড়া খাল পাড়ের মানুষরা গোসল ও খাওয়ার কাজে ব্যবহার করত এ খালের পানি। ইছামতি খালকে কেন্দ্র করে সনাতনি ধর্মাবলম্বীদের প্রতিবছর বসে ইছমতি মেলা। এসময় পূর্ণ লাভের আশায় শতশত নারী-পুরুষ এই খালে স্নান করে।
কিন্তু ২০২০ সালে পানি উন্নয় বোর্ড খালের দক্ষিণ পাশে বরুমচড়া ভরা শঙ্খের মুখে হাইড্রোলিক বাঁধ নির্মাণ ও উত্তর পাশে ইছামতি-শিকলবাহা খালের সংযোগস্থলে সøুইচ গেট নির্মাণ কাজ শুরু করলে বন্ধ হয়ে পড়ে নৌচলাচল ও খালে পানি চলাচল। এই সুযোগে প্রভাবশালীরা কারখানার বর্জ্য ফেলে খালটি দখলের চেষ্ঠা করছে। এ কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে বোরো চাষও ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় খালটিকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এগিয়ে আসার দাবিও জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এছাড়া দখল-দূষণে বৈরাগ ইউনিয়নের কাপকো হাউজিং এলাকা থেকে চাতরী কেয়াগড় পর্যন্ত কান্দুরী খালটির প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকয় চলছে দখলের উৎসব, এ খাল খননের কাজ শুরু হলেও সেখানে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
রায়পুর ইউনিয়নে পশ্চিম রায়পুর থেকে সরেঙ্গা শঙ্খ নদী পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার ইজারা বিলের সংযোগ খাল ও বটতলী থেকে আইরমঙ্গল হয়ে বরুমচড়া গোদারপাড় পর্যন্ত প্রবাহিত শ্রীমতি খালেরও করুন দশা।
শ্রীমতি খালটির বটতলী রুস্তম হাটের পাশ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার জুড়ে দখল-দূষণে বিপর্যস্ত।
বরুমচড়া এলাকার জাফর আহমদ বলেন, খালে আগের মতো পানি থাকেনা, বোরো ও রবিশস্য চাষের ভরা মৌসুমে পানি সংকটে পড়ি। এসময় কৃষকদের বেশি খরচে নলকূপ থেকে পানি দিয়ে চাষ করতে হয়। খাল উদ্ধার করতে হলে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মানজুর এলাহী বলেন, ইছামতি খাল নিয়ে আমরা একটা ক্লোজার করছি। এই ক্লোজার নির্মাণ কাজ শেষ হলে কৃষকদের পানি সংকটের সমস্যার সমাধান হবে। খাল দখল- দুষনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তর দেখবে। আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ জোবায়ের আহমদ বলেন, খাল ও জলাশয় হল দেশের রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যম। এসব খাল দখল ও দূষণ মুক্ত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ