Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমার ওপর নির্মাতা আমজাদ হোসেনের কোনো প্রভাব নেই সাজ্জাদ হোসেন দোদুল

রিয়েল তন্ময় | প্রকাশের সময় : ১৯ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:৫৪ এএম

নির্মাতা, নাট্যকার ও অভিনেতা সাজ্জাদ হোসেন দোদুল প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার মরহুম আমজাদ হোসেনের ছেলে। বাবার পথ ধরেই তিনি মিডিয়ায় এসেছেন। অভিনেতা হয়েছেন, নির্মাতা ও নাট্যকার হয়েছেন। তবে বাবার পথ ধরে মিডিয়ায় এলেও এক্ষেত্রে বাবার প্রভাবে তিনি প্রভাবান্বিত হননি। বরং তিনি নিজ মেধা, যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছেন। বহু বছর ধরেই তিনি মিডিয়ায় বিচরণ করছেন এবং বাবার পরিচয়কে ছাপিয়ে নিজের পরিচয়ে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার বাবা আমজাদের হোসেনের প্রভাব আপনার ওপর কতটা রয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, আমি আমজাদ হোসেনের সন্তান, এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। তবে তাঁর সন্তান হই আর যাই হই না কেন, সচেতনভাবে আমি দুটো বিষয় এড়িয়ে চলি। প্রথমত, আমি আমজাদ হোসেনের মত লিখব না, দ্বিতীয়ত কোনো নাটক বা সিনেমা বানাব না। আমি আমার মত বানাব। রক্ত কথা বলে একটা কথা আছে। যে চলে আসতে পারে। এটা আমি খুব সচেতনভাবে ছেঁটে ফেলি। কারণ, আমজাদের হোসেনের সময়ের মত যদি এখন আমি ২০২৩ এ সিনেমা বানাই, তাহলে তা সময়ের সাথে যাবে না। আমজাদ হোসেনের মতো ১৯৭০, ৮০, বা ৯০ দশকের মতো এখন সিনেমা বানালে হবে না। তিনি তাঁর সময়ের সমাজ ও সংস্কৃতিকে ধারণ করেছেন। সেগুলো ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিয়েছে। আমাকে সেই সময়ে পড়ে থাকলে দর্শক তা গ্রহণ করবে না। আমাকে চলমান সময়কে ধারণ করতে হবে। এখন প্রযুক্তির যুগ, মানুষের মন ও মননে অনেক পরিবর্তন ঘটে গেছে। আমাকে এই পরিবর্তনের সাথেই যেতে হবে। আমজাদ হোসেনের ছেলে হলেই যে তার মত করে সবকিছু করতে হবে, তা আমি বিশ্বাস করি না। আমি আমার মত করেই এগিয়ে যাব। তবে মৌলিক জায়গাটা অবশ্যই ঠিক থাকবে। আমজাদ হোসেন মেহনতি মানুষের কথা তার চলচ্চিত্রে ও লেখায় তুলে ধরতেন। আমিও সেই কথাই বলি এবং বলব সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে।
আমরা জানি, আরেক প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম আপনার গুরু। তাঁর দ্বারা আপনি কতটা প্রভাবিত হয়েছেন?
আমার গুরু চাষী নজরুল ইসলাম। তবে এক্ষেত্রেও আমার একই কথা। আমি তার মতো করে কোনো কিছু নির্মাণ করব না। আমি আমার মতো করেই নির্মাণ করব। তার কাছ থেকে আমি নির্মাণের গ্রামার শিখেছি। সেটাকে কাজে লাগিয়েই আমি আমার মতো নির্মাতা হয়েছি।
এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি, বর্তমানে ‘মুসা’ নামে আপনার নির্মিত একটি ধারাবাহিক চলছে। এ নিয়ে কিছু বলুন।
মুসা ধারাবাহিক নাটকটি বৈশাখী টিভিতে চলছে। এই নাটক দিয়ে আমি ১৫ বছর পর অভিনয়ে ফিরেছি। পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয় করছি। নাটকটির রেসপন্স খুব ভালো পাচ্ছি।
অভিযোগ রয়েছে, এ সময়ের নাটকের গল্প ঘুরেফিরে একই রকম। একই ধরনের গল্পের বৃত্তে আটকে আছে...
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এখন টেলিভশনের লোগোটা উঠিয়ে দিলে মনে হবে, সব নাটক একই রকম। গল্প এক, পাত্র-পাত্রীও এক। দর্শকের পক্ষে নাটক আলাদা করা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাই আমার দুঃখ। এই যে, আজকে গ্রামের নাটকের যে প্যাটার্ণ চলছে, এটা কিন্তু আমি তৈরি করেছিলাম। খড়ের পুতুল, বাবুদের ফুটানি, টেরি বাবু এসব নাটক দিয়ে একটা ধারা সৃষ্টি করেছিলাম। আমি মরে গেলে হয়তো সবাই বলবে, এসব নাটকের প্যাটার্ণ, এসব নাটক, এই ধরনের নির্মাণশৈলী আসছে দোদুলের হাত দিয়ে। এ ধারাটা এখন ঠিক নেই।
এর কারণ কি?
এর কারণ হচ্ছে, যখন আমাদের হাত থেকে নাটক অন্যের হাতে যাচ্ছে, সেটা ইনব্রিডিং হতে হতে যাচ্ছে। আমরা যদি এই ইনব্রিডিং হতে না দিতাম, সেটা আমাদের জায়গা থেকে হোক বা চ্যানেলের জায়গা থেকে হোক, একটু সচেতন থাকতাম, তাহলে আমাদের নাটকের মান আরও ভালো হতো।
অভিযোগ রয়েছে, এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নাটকে কমেডির নামে ভাড়ামোটা বেশি হচ্ছে...
এখানে নাট্যকারের কৌশল দরকার, পরিচালকের কৌশল দরকার। শিল্পীদের হাতে যদি আমরা ওই ধরনের ভালো চরিত্র তুলে দিতে পারি, তাহলে একজন শিল্পী ভালো অভিনয় করতে পারবে। আমাদের ত্রুটিটা হচ্ছে, আমরা প্রথমেই মাথায় রাখছি নাটকটি কমেডি হতে হবে। নাটকটি দিয়ে দর্শককে হাসাতে হবে। নাটকটি লেখার সময় একই জিনিস ভাবা হচ্ছে। অথচ গল্পটি এমন হওয়া উচিৎ যা গল্পের ধারাবাহিকতায় সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আসবে। শিল্পীর অভিনয়ের মধ্য দিয়েই তার প্রকাশ ঘটবে। এক্ষেত্রে হাসানোর জন্য তাকে চোখ, মুখ, ঠোঁট বাকা করতে হবে না। ভাড়ামো করতে হবে না। শুধু তাকে সুন্দর সিচুয়েশনাল সংলাপ দিতে হবে।
তাহলে কি নাট্যকারের ঘাটতি আছে?
আমাদের মিডিয়াতে অনেক মেধাবী নাট্যকার ও পরিচালক আছেন। আবার এমন পরিচালকও আছেন, যারা ক্যামেরাম্যান নির্ভর। আবার অনেকে পরিচালনায় আসেন শখের বশে। তখন তার একটা স্ক্রিপ্ট দরকার। অথচ সে জানে না, কে ভালো লিখে। এই না জানা ও অজ্ঞতার কারণেই অনেক ক্ষেত্রে নাটকের নামে যা-তা হয়।
এর থেকে বের হয়ে আসার উপায় কি?
আসলে সব কিছুর একটা সিস্টেম দরকার। একটা প্রক্রিয়া দরকার। একটা সাংগঠনিক জায়গা প্রয়োজন। আমি চেষ্টা করেছিলাম, আমার সহযোগী যারা আছেন তাদের নিয়ে। কিন্তু সেটা বেশি দূর এগোয়নি। যতদূর এগিয়েছিলো, সেটা যদি কন্টিনিউ করত তাহলে আমরা আজ একটা সিস্টেমের মধ্যে থাকতাম।
বর্তমান সংগঠনগুলো কতটা সরব?
আপনারা বলেন, সংগঠনগুলো কি কাজ করছে? আমি যখন আন্তঃসংগঠনের আহ্বায়ক ছিলাম, তখন উত্তরা ও পূবাইলের বিভিন্ন শুটিং হাউজে গিয়ে আর্টিস্টদের সাথে, ডিরেক্টরদের সাথে, টেকনিশিয়ানদের সাথে, ফুল ইউনিটের সাথে বসে ১৫/২০ মিনিট কাউন্সিলিং করতাম। কাউন্সিলিং করে বলতাম, আমরা এই সময়টা থেকে এই সময়টা কাজ করব। এর বাইরে কাজ করব না। সপ্তাহে আমাদের একদিন ছুটি দরকার। প্রত্যেকরই ব্যক্তিগত জীবন আছে। আমাদের ডিসিপ্লিন হতে হবে। অভিনয় শিল্পী সংঘ হয়তো তার শিল্পীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। কিন্তু প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন সব সময় চেয়ে আসছে এটা। সব কিছুর একটা সিস্টেম দরকার, প্রক্রিয়া দরকার।
সংগঠনের নেতারা কি এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে বা করছেন?
সবাই তো আসলে নেতা হতে চায়। আর এখানে সেখানে তাদের বলতে শোনা যায় আমি অমুক সংগঠনের তমুক নেতা। কিন্তু আমি এত বছর ধরে প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের নেতা। আমি আজ পর্যন্ত আমার ফেসবুকে আপডেট দেই নাই, আমি কোন কোন সংগঠনের সাথে আমি জড়িত বা কোন কোন সংগঠনে আমার কি পদ আছে। কেউ দেখাতে পারবে না। কিন্তু এখনকার নেতাদের দেখা যায়, আপডেট দিয়ে ফেসবুক ভরে ফেলছে, সে কতবড় নেতা কোন জায়গার নেতা। আমি পরিচয় দিতে চাইনি, কারণ আমার নিজস্ব পরিচয় আছে। আমার ফ্যামিলির পরিচয় লাগে না, আমার সাংগঠনিক পরিচয় লাগে না। আমি ডিরেক্টর, আমি প্রোডিউসার, আমি নাট্যকার, আমি অভিনেতা, আমি কবি, আমি ছোট গল্পকার, আমি ঔপন্যাসিক। যারা আইডেনটিটির ক্রাইসিসে ভোগে তারা শুধু এসব করে, কাজটা করে না। তারা চায় শুধু বিভিন্ন সভা সেমিনারে যাবে বক্তব্য দেবে। তারা সংগঠনের কাজ করতে চায় না।
ভিউয়ের জন্য নাটকের কুরুচিপূর্ণ নাম আমাদের সংস্কৃতিকে কোথায় দাঁড় করাচ্ছে?
আমি ভালো বা মন্দ, সেই কথাতে যাব না। আমি বলব এটা একটা বিজনেস। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বিজনেস। এখানে ভালো কিছু না দিলে একটা সময় তারা টিকতে পারবে না। জামাই বউয়ের গল্প বা বউ শাশুড়ির গল্প সবাই করছে। ভালো কিছু নাহলে কিন্তু দর্শক টাকা খরচ করে ইন্টারনেট খরচ করে দেখবে না। একসময় এটা বন্ধ হয়ে যাবে। ভিউয়ের ক¤িপটিশনে না গিয়ে, এই সেন্সরবিহীন মুক্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজেদের মেধার বিকাশ ঘটানোর অনেক সুযোগ আছে। এই জায়গাটাকে কাজে লাগানো উচিত। টিকে থাকার জন্য ভালো কিছু করা উচিত। নয়তো একদিন হারিয়ে যেতে হবে। যারা এসব করছে, তারা একদিন আর থাকবে না। দর্শক তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। এখনোও ভালো নাটকগুলো ২০/২৫ মিলিয়ন ভিউ আছে। যারা নাটক নষ্ট করছে, তাদের ভিউ ২/৩ মিলিয়ন , কিছু কিছু নাটক হয়তো ৫/৬ মিলিয়ন ভিউ আছে। আল্টিমেটলি এই জায়গাটা থাকবে না। আমাদের গুড ক¤িপটিশন থাকা দরকার।
এর থেকে পরিত্রানের উপায় কি?
বিশ্ব পরিবর্তনশীল। আধুনিকায়নের যুগে আমাদেরও সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে হবে। আমরা বিটিভিতে ছিলাম, নিউমেটিক অ্যাপে ছিলাম, এর মধ্যে আমরা এখন কার্ডে চলে আসছি। এখন অনেক স্যাটেলাইট চ্যানেল বাংলাদেশে। এখন বিশ্বে অসংখ্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। এদের সাথে যদি আমরা নিজেরা পরিবর্তিত না হই, তাহলে ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট ধরতে পারব না। আমার একটা দাবী ছিল, একক নাটক বলে পৃথিবীতে কোথাও কিছু নেই। আমাদের দেশেও এর প্রয়োজন নেই। যেহেতু ডিউরেশন ৪০ মিনিট আমরা এটাকে শর্টফিল্ম বলতে পারি। তাহলে যাদের ভালো শর্টফিল্ম হবে তারা আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালে যেতে পারবে। এখন সিনেমার ক্ষেত্রে থার্টি ফাইভ মিলিমিটার ফিল্মের প্রয়োজন হয় না। ভালো ক্যামেরা দিয়ে শুট করে ভালো রেজুলেশনে শুট করে যে কেউ আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে পারছে। ফলে আমি কেন এই জায়গাটায় যাব না? কেন এই জায়গাটা ধরব না? বাংলাদেশে অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু বাক্য আছে একক নাটক, প্যাকেজ নাটক। কেন এগুলো? এই বাক্যগুলো দিয়ে কাজকে সম্মানহীন করা হয়, সেই মেধাবী মানুষকে সম্মানহীন করা হয়। এই জায়গাগুলো আমি চাই না। আমি চাই কোয়ালিটি।
শিল্পীদের সেটে দেরি করে আসার অভিযোগ নিয়ে কি বলবেন?
সবাই চিন্তা করে শিডিউলটা বিক্রি করে দেব। ডে পেমেন্টটা পেয়ে যাব। ডে পেমেন্ট পেয়ে যাবার যে টেন্ডেন্সি, এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। একটা সিঙ্গেল নাটক বাংলাদেশে ৮০ হাজার ৯০ হাজার বা এক লাখ টাকায় নির্মিত হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা দিয়ে নাটকের মান কখনোই উন্নত করা সম্ভব নয়। এটা করা হচ্ছে, বেঁচে থাকার জন্য। এখন শিল্পীরা চিন্তা করে, আমি ডে পেমেন্ট হিসেবে ৫ দিনের কাজটা যদি কোনভাবে ১০ দিনে করতে পারি, তাহলে বেশি টাকা পাব। তারও তো বাঁচতে হবে পরতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, একজন শিল্প ও কলাকুশলী কিন্তু মানুষ, মেশিন নয়। তাকে যদি রাত ২টা পর্যন্ত কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে হয় এবং পরের দিনের কাজের কস্টিউম গোছাতে হয়, তাহলে সে খাবে কখন, ঘুমাবে কখন! এসব কারণে অনেকের শুটিংয়ে আসতে দেরি হয়। এটা একটা ডিসিপ্লিনের মধ্যে আনা দরকার। আমি চেষ্টা করেছিলাম সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শুটিংয়ের সময় নির্ধারণ করতে। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। হলে এ সমস্যা হতো না।
চরিত্রের জন্য শিল্পীদের সেভাবে সময় দিতে দেখা যায় না এখন...
আমি ‘৮৬ সালে ফিল্মে নতুন মুখের সন্ধানে সুযোগ পেয়েছিলাম। ‘৮৭ তে অডিশনে আমি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম। সে সময় শহিদুজ্জামান সেলিম, জাহিদ হাসানরাও ছিল। তখন দুই-তিন ধরে রিহার্সেল করতাম। স্ক্রিপ্ট নিয়ে ভাবতাম। এখন এটা দেখছি না। একটা আর্টিস্ট যদি তার ক্যারেক্টার না বুঝে, তার কস্টিউম না বুঝে, তাহলে তার অভিনয় ভালো হওয়ার কারণ নেই। তাছাড়া সময় ও বাজেটের কারণেও এর ব্যত্যয় ঘটছে। রিহার্সেলের জন্য যদি একদিন হাতে রাখা হয়, তাহলে নাটকের মানও ভালো হবে। এটা এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
কাজের পরিমান বাড়ছে কিন্তু গুণগত মান কি বাড়ছে?
এখন সবাই এত কমার্শিয়াল হয়ে যাচ্ছে যে, শুধু টাকাটাই চিনছে, কাজটা চিনছে না। আমার কথা হচ্ছে, টাকাও চিনতে হবে, কাজও চিনতে হবে। একটা কথা আছে মানুষ নাকি নিজেকে বেশি ভালোবাসে। কিন্তু আমরা মিডিয়ার লোকেরা নিজেকে নয়, টাকাকেই বেশি ভালোবাসে। তবে এখানে কিছু এ গ্রেডের আর্টিস্টের খামখেয়ালিও দায়ী। তার ধারনা, সবাই তার জন্যঅপেক্ষা করতে বাধ্য। অন্য আর্টিস্টরা হয়তো তার সামনে বলতে পারছে না। বললে হয়ত বলবে পরের নাটকে তাকে নিয়েন না। অমুকের সাথে আমি স্ক্রিন শেয়ার করিনা। হয়তো সেই ভীতি থেকে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলে না। তবে এতে যে ঐ আর্টিস্ট শুধু নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা নয়, আরও দশ জনের ক্ষতি করছে।
স্টার কাস্টিংাই কি বেশি অনিয়ম করে?
আমি স্টার কাস্টিংয়ে বিশ্বাসী না। যেমন ধরুন, আমি শাকিব খানকে নিলাম। শাকিব কি আমাকে গ্যারান্টি দিতে পারবে যে, ছবিটা সুপারহিট হবে? তিন কোটি টাকা ব্যবসা করবে? তাহলে আমি শাকিব খানকে ৮০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দেব। নাটকে কোন সুপারস্টার কি গ্যারান্টি দিতে পারবে যে, আমি অভিনয় করা মানেই এটা ২৫/৩০ মিলিয়ন ভিউ হবে। যদি এই গ্যারান্টি দিতে পারে তাহলে তাকে আমি একটা সিঙ্গেল নাটকের জন্য ৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দিব। বিষয়টা হচ্ছে, নাটক ও সিনেমার গল্প এবং পরিচালকের মেধা। একজন ডিরেক্টরের চেয়ে বড় স্টার আর কেউ নয়।
নির্মাণের পাশাপাশি অভিনয় করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন কি?
আমার সমস্যা হয় না। আমি থার্টি ফাইভ মিলিমিটারের সিনেমায় কাজ করেছি। সে সময় শট দিয়ে মনিটর দেখার সুযোগ ছিল না। এখনতো মনিটর আছে। শট দিয়ে দেখার সুযোগ আছে। ভুল হলে তা কারেকশন করা যায়। আর পরিচালক হয়ে যখন অভিনয় করি তখন সবকিছু আমার মাথায় থাকে। অন্যান্য শিল্পীদের যেমন বুঝিয়ে দিতে হয়, আমাকে তো বোঝাতে হয় না। তাই আমার সমস্যা হয় না।
নির্মাণ ও অভিনয় কোনটা আপনার কাছে অগ্রগণ্য ?
লেখালিখি ও নির্মাণ। নির্মাণটাই আমাকে বেশি টানে।
সেটে শিল্পীদের ডিরেকশন দেয়ার একটা অভিযোগ রয়েছে, এ ব্যাপারে আপনি কি বলবেন?
আমার সেটে এই দুঃসাহস কারো নাই। আমি যে লেভেলের নির্মাতা, আমার এখানে এই দুঃসাহস কেউ দেখাবে না। যারাই এই কাজটা করে তাদের বোঝা উচিত, এটা তার কাজ নয়। এটা ডিরেক্টরের কাজ। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাহলে তার দায় ডিরেক্টরের। সে কেন এটা অ্যালাও করছে। এটা উচিত না।
চলচ্চিত্র নির্মানে আপনার ভাবনা কি ?
দুটো সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা করছি। একটা বানাবো বাস্তবধর্মী, আরেকটা রোমান্টিক। নতুন ছেলে-মেয়ে খুজছি। আমার টার্গেট হচ্ছে, এখন থেকে প্রতি বছর দুইটা সিনেমা বানাবো। একটা হচ্ছে, নিজের চাহিদা মেটাতে আরেকটা কিছু আর্টিস্ট তৈরি করতে। প্রতিবছর একটি ছেলে, একটি মেয়ে ফিল্মে আনব।
অ্যাওয়ার্ড পাওয়া নিয়ে কি বলবেন?
আমার জীবনে আমি অসংখ্য অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। আমার সংরক্ষণে এখন কিছুই নেই। বাসা পরিবর্তনের সময় সব হারিয়ে গেছে। আমি একাধিকবার বাচসাস পুরস্কার পেয়েছি। ট্রাব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি অনেকবার। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন থেকেও অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। অ্যাওয়ার্ড আসলে কাজের প্রতি দায়ীত্ব যেমন বাড়ায়, তেমনি কাজ করতে আরও আগ্রহী করে তুলে। এটা সম্মান। আপনি যখন আপনার কাজের যোগ্য সম্মান পাবেন, তখন কাজের ¯পীডটা আরও বাড়বে।
২০২৩ এ আপনার কি কি কাজ দর্শক পাচ্ছে?
২০২৩-এ আমার অনেক কাজ পাবেন। একক নাটক পাবেন অনেক। সিরিয়াল পাবেন। দুইটা চলচ্চিত্র পাবেন। কিছু উপন্যাস পাবেন । ছোট গল্পের বই পাবেন। আর কিছু গান পাবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ