Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাথর কোয়ারি সচলের দাবিতে জাফলংয়ে মানববন্ধন

ফয়সাল আমীন, সিলেট থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

বৈশ্বিক কারণে অর্থনীতির মন্দায় অস্থির বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। আমদানি নিয়ে টানাপোড়নে বাংলাদেশ। অথচ সিলেটের পাথুরে সম্পদকে কাজে না লাগিয়ে বিদেশ থেকে চলছে পাথর আমদানি। এতে করে সিলেটের স্থানীয় অর্থনীতির অন্যতম চাকা পাথরে রাজ্য নিস্তব্ধ। ফলে স্তব্দ হয়ে গেছে মানুষের জীবন-জীবিকা। আমলাতান্ত্রিক জটিলার গ্যাঁড়াকলে পড়ে পাথর সম্পদ নির্ভর অর্থনীতির এমন অবস্থা উত্তরণে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালাচ্ছে বিক্ষুদ্ধ মানুষ। তারপরও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। স্থানীয় এমপি ও মন্ত্রী ইমরান আহমদ ডিও লেটার দিয়েছেন পাথর উত্তোলনের যৌক্তকতা নিয়ে তবুও নির্লিপ্ত সংশ্লিষ্টরা। এরকম অবস্থায় সিলেটের জাফলংসহ সবকটি পাথর কোয়ারি (ইসিএ বহির্ভূত এলাকায়) পরিবেশসম্মত ও সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন করার সুযোগ দানের দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল দুপুরে পিয়াইন পাথর উত্তোলন ও ব্যবসায়ী সংগঠনের উদ্যোগে এক দফা এক দাবি নিয়ে স্থানীয় নলজুরি পয়েন্টে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকেই পাথর কোয়ারি সচল করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দাবি দাওয়া সংবলিত ফেস্টুন, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে নলজুরি পয়েন্টে বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন জড়ো হতে থাকে। মানববন্ধনে জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার অর্ধশত ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেয়।
পিয়াইন পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালিকের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল আহমদ, তামাবিল চুনাপাথর, পাথর ও কয়লা আমদানি কারক গ্রুপের সভাপতি এম লিয়াকত আলী, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম, ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক, লোকমান হোসেন শিকদারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। কর্মসূচিতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও সামাজিক সংগঠন ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সচিব রুবেল আহমদ।
বক্তারা বলেন, জাফলংসহ সকল পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন, সংগ্রহ ও সরবরাহ করে অত্রাঞ্চলসহ দেশের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এই পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। বেকার হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক শ্রমিক। বর্তমানে তারা অনাহার-অর্ধাহারে দিনযাপন করছে। তাই শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে পরিবেশসম্মত ও সনাতন পদ্ধতিতে কোয়ারি সচল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। এদিকে কর্মসূচির সাথে একমত পোষণ করে সকাল থেকে গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার সকল ক্রাশার মিল বন্ধ রাখা হয় এবং ওই সময় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
এদিকে, পাথর কোয়ারি সচলের পক্ষে গ্রহযোগ্য যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব বরাবরে ডিও লেটার প্রেরণ করেছেন সিলেট-৪ আসনের এমপি ও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মংসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। গত ২৬ অক্টোবর এই ডিও লেটার প্রদান করেন তিনি। সেই সাথে অনুলিপি প্রেরণ করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব, মহাপরিচালক খনিজ সম্পদ ব্যুরো, যুগ্নসচিব (অপারেশন-২) বিদ্যুত জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় ও সিলেট জেলা প্রশাসককে। তবুও দাবি পূরনে সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে রহস্যজনক কারনে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, স্থানীয় অর্থনীতি ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকার স্বার্থ পরিপন্থি কাজের পাশাপাশি সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ^াস, সমর্থন নষ্টের পাঁয়তারায় লিপ্ত দেশের একাধিক শিল্প গ্রুপ। নিজেদের স্বার্থে পাথর উত্তোলন বাধাগ্রস্থ করছে, কারন তারা আমদানিমুখী। তাদের সাথে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট আমলারা। সরকার জনগণের স্বার্থকে বিবেচনায় নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন, এতে ক্ষমতাসীন রাজনীতিক দলের প্রতি আস্থাহীন এলাকার আপামর মানুষ। তারা মনে করছেন, রাজনীতিক দল ও স্থানীয় নেতারা জনস্বার্থ রক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ। এর নেতিবাচক প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনে পড়বে বলে মনে করছেন রাজনীতিক সচেতন মহল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ