Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শত কোটি টাকায় দফায় দফায় নৌযান সংগ্রহ হলেও পণ্য পরিবহন বন্ধ

বরিশাল-চট্টগ্রাম রুট | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে সরকারের শতাধিক কোটি টাকায় ৩টি নৌযান সংগ্রহ ও ২টির পুনর্বাসনের পরেও উপকূলীয় দুটি বিভাগীয় সদরের মধ্যে নিরাপদ নৌ যোগাযোগ সচল করার উদ্যোগ নেই বিআইডব্লিউটিসি’র। এমনকি গত দুই দশকে বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের কথা বলেই নৌযান সংগ্রহ ও পুনর্বাসনে সরকারের কাছ থেকে কয়েক দফায় বিপুল অর্থ গ্রহণ করেও রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি এ রুটে নিরাপদ নৌযোগাযোগ নিশ্চিত করণে খুব আগ্রহী নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ফলে বরিশাল থেকে ভোলা-হাতিয়া-সন্দ্বীপ হয়ে চট্টগ্রামের নিরাপদ নৌ যোগাযোগের ভবিষ্যত এখন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। উপরন্তু অতি সম্প্রতি ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল রকেট স্টিমার সার্ভিসটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছতে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চল থেকে নৌপথে চাঁদপুর হয়ে রেলপথে চট্টগ্রাম পৌঁছার বিকল্প পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে দক্ষিণাঞ্চল থেকে চট্টগ্রামগামী সাধারণ যাত্রীরা।
সর্বশেষ প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল-ভোলা-হাতিয়া-সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম রুটের জন্য ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ ও ‘এমভি আইভি রহমান’ নামের দুটি উপকূলীয় যাত্রীবাহী নৌযান সংগ্রহের পরে গত বছর ২ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলক পরিচালনা সম্পন্ন হয়। তবে নানামুখী প্রতিবন্ধকতার কথা বলে গত প্রায় এক বছরেও এর বাণিজ্যিক পরিচালন শুরু করেনি রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। তবে নৌযান দুটি বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের পরিবর্তে চট্টগ্রাম-হাতিয়া এবং কুমিড়া-গুপ্তছড়া রুটে চলছে।
এমনকি বরিশাল-চট্টগ্রাম রুটের কথা বলেই চীনা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটে ২০০২ সালে প্রায় ৩৩ কোটি টাকায় ‘এমভি বার আউলীয়া’ নামের একটি নতুন নৌযান সংগ্রহ ছাড়াও ২০০৯ সালে আরো প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘এমভি আবদুল মতিন ও এমভি মনিরুল হক’ নামের দুটি উপকূলীয় নৌযান পুনর্বাসন করা হয়। ‘এমভি বার আউলীয়া’ সংগ্রহের পরে গত ২০ বছরে তার পুনর্বাসন ও নতুন ইঞ্জিন সংযোজনে আরো প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এসব কিছুর বাইরেও বিশ্ব ব্যাংকের সুপারিশে দেশের উপকূলভাগে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনকে সরকার ‘গণ দায়বদ্ধ সেবাখাত’ হিসেবে ঘোষণা করে প্রতি বছর বিআইডব্লিউটিসি’কে নগদ ভর্তুকিও প্রদান করে আসছে।
কিন্তু এতসব কিছুর পরেও দেশের উপকূলীয় দুটি বিভাগীয় সদরের মধ্যে নিরাপদ নৌ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ ২০১১ সালের মে মাস থেকে। গত বছর ২ ডিসেম্বর বরিশালÑচট্টগ্রাম নৌপথে ‘এমভি তাজউদ্দিন আহদমদ’কে নিয়ে পরিক্ষামূলক পরিচালনের পরে বিআইডব্লিউটিসি’র তরফ থেকে নৌপথটির ‘বামনীর নালা’ ও ‘সেলিম বাজার টেক’ এলাকায় নাব্যতা উন্নয়নের অনুরোধ জানানো হয়। সে প্রেক্ষিতে অনেক আগেই ঝুঁকিপূর্ণ ঐ এলাকায় ড্রেজিং সম্পন্ন করে পুরো নৌপথটিকে ন্যূনতম ১৫ ফুট গভীরতার নৌযান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে বলে বিআইডিব্লিউটিএ’র চট্টগ্রাম জোনের পরিচালন পরিদফতরের উপ-পরিচালক জানিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র পরিচালক-বাণিজ্য আশিকুজ্জামানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, বরিশাল-চট্টগ্রাম নৌপথের ভাষানচরের কাছে ‘বামনীর নালা’ ও তার উজানে ‘সেলিম বাজার টেক’ এলাকায় নাব্যতা সঙ্কট রয়েছে। ফলে উপকূলীয় নৌযানগুলো ঐসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রম করেতে জোয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এ কারণে যাত্রীবাহী নৌযানগুলোকে বরিশাল বা চট্টগ্রামে পৌঁছতে দীর্ঘ সময় নদীতেই নোঙরে থাকতে হবে বিধায় উপকূলীয় যাত্রীবাহী স্টিমার সার্ভিসটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
কিন্তু বিআইডব্লিউটসি’র এসব বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীল মহল। তাদের মতে চট্টগ্রাম থেকে হাতিয়া হয়ে ভোলার ইলিশাঘাট পর্যন্ত কোথাও ন্যূনতম নাব্যতা সঙ্কট নেই। তবে অপর একটি সূত্রের মতে, গত বছর সংগ্রহ করা বিআইডব্লিউটিসি’র ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ ও এমভি আইভি রহমান’ নৌযান দুটির গতি ১০ নটের বেশি নয়। অথচ ভাটার সময় ইলিশাঘাট থেকে হাতিয়া হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৭-৮ নট গতিতে পানি সাগরে পতিত হয়। ফলে এসব নৌযান সাগরমুখী প্রবল স্রোত অতিক্রম করে চট্টগ্রাম থেকে বরিশালে পৌঁছতে ১৮-২০ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগবে বলে মনে করছেন কারিগরি বিশেষজ্ঞগণ। গত বছর ২ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলক পরিচালনে এমভি তাজউদ্দিন আহমদ ১৯ ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে উপকূলীয় নৌযোগাযোগ নির্বিঘ্ন করতে আরো দুটি উপকূলীয় নৌযান সংগ্রহের লক্ষে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ৫০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ একটি ডিপিপি একনেক-এর চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। প্রায় এক বছর পরে ৭শ’ যাত্রী বহনক্ষম উপকূলীয় নৌযান ‘এমভি তাজউদ্দিন আহমদ’ নির্মাণের লক্ষে বিআইডব্লিউটসি’র সাথে ‘থ্রি এ্যাংগেল মেরিন লিমিটেড অ্যান্ড দি কুমিল্লা শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড জেভি’র সাথে ১৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০ মাসে সরবরাহের কথা থাকলেও তিন দফায় ৪ বছর সময় বাড়িয়ে ৬৮ মাস পরে গত বছর এপ্রিলে নৌযানটি হস্তান্তর করে। প্রায় ১৯৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৯.৩৬ ফুট প্রস্থ এ নৌযানটিতে বেলজিয়ামের ‘এবিসি’ ব্রান্ডের মাত্র ৭শ’ অশ্ব শক্তির ইঞ্জিন সংযোজন করায় এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় মাত্র ১৮.৫২ কিলোমিটার।
অপরদিকে চট্টগ্রামের ‘এফএমসি ডকইয়ার্ড লিমিটেড’ এর সাথে ৫শ’ যাত্রী বহক্ষম অপর উপকূলীয় নৌযান, ‘এমভি আইভি রহমান’ নির্মাণের লক্ষে ২০১৫-এর ডিসেম্বরে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও ২০ মাসের পরিবর্তে ৪ দফায় আরো ৪৮ মাস সময় বাড়িয়ে গত বছর এপ্রিলে তা হস্তান্তরের পরে গত বছর ৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি নৌযানই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
তবে এ দুটি নৌযান যথাক্রমে চট্টগ্রামÑহাতিয়া ও কুমিড়া-গুপ্তচড়া রুটে যাত্রী পরিবহন করছে। ১৬৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রায় ৩৫ ফুট প্রস্থ ‘এমভি আইভি রহমান’এ বেলজিয়ামের এবিসি ব্রান্ডের মাত্র সাড়ে ৪শ’ অশ^ শক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন রয়েছে। ৫শ’ যাত্রীবহনক্ষণ এ নৌযানটিও পূর্ণ লোড নিয়ে ঘণ্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল বা ১৮.৫২ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলতে পারছে না। যাত্রী ও পণ্য মিলিয়ে নৌযানটির বহন ক্ষমতা মাত্র ১২৫ টন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ