Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হস্তান্তরের সাড়ে তিন বছরেও চালু হয়নি

মাদারীপুর ২৫০ শয্যা আধুনিক হাসপাতাল ভবন

আবুল হাসান সোহেল, মাদারীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

কোটি কোটি টাকার সরঞ্জাম, সাত তলা বিশিষ্ট মাদারীপুর জেলা সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আধুনিক নতুন ভবন। কমতি নেই কোনো কিছুর। প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও পদ সৃজনের অভাবে দীর্ঘদিনেও চালু হয়নি। মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগ হাসপাতাল ভবনের সম্পূর্ণ নির্মাণকাজ শেষে সাড়ে ৩ বছর আগে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেছে। কবে নাগাদ জেলার একমাত্র ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি চালু হবে তা সংশ্লিষ্ট কেউ বলতে পারেন না। হাসপাতালটি সময়মতো চালু না হওয়ায় স্থানীয় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ভবনে রক্ষিত অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হওয়ায় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত জেলাবাসী। অবশ্য জনবল না থাকার অজুহাত দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেই চলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের সৈয়দারবালী মৌজার ওপর দাঁড়িয়েছে আছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নতুন সাত তলা ভবন। দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতাল। এতে ব্যয় হয় ৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর গণপূর্ত অধিদফতর স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে হাসপাতালটি। রয়েছে তিন কোটি টাকা মূল্যের সিটি স্ক্যান মেশিন। আছে ডিজিটাল এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ১০টি কার্ডিয়াক মনিটর, আধুনিক জেনারেটরসহ কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য রয়েছে লিফটের ব্যবস্থা। এতো কিছু থাকার পরও হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ রোগী ও স্বজনরা অথচ পাশের পুরনো ১০০ শয্যার ভবনে নাম মাত্র চিকিৎসা দিয়ে গুরুতর রোগীদের পাঠানো হয় বিভিন্ন মেডিকেলে কলেজে। ফলে মাঝপথেই অনেক রোগীর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ স্বজনদের। সদর উপজেলার পুর্বখাগদী এলাকা থেকে আসা রমজান মুন্সি বলেন, এতো সুন্দর হাসপাতাল করেছে, কিন্তু চালু হয় না। ফলে জেলাবাসী উন্নত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। আমরা চাই দ্রুত এই হাসপাতালটি চালু করা হোক।
কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আল জহির লিটন বলেন, এখানে কোনো রকম সেবা দিয়েই ফরিদপুর কিংবা ঢাকা পাঠানো হয়। তখন মাঝপথে অনেক রোগীর মৃত্যু হয়। এই হাসপাতালটি চালু হলে সাধারণ রোগীরা উপকৃত হবে। জনস্বার্থে দ্রুত এটি চালু করা দরকার।
এদিকে ২৫০ শয্যা বিশিস্ট হাসপাতাল পুনার্ঙ্গভাবে চালুর দাবিতে চলতি বছর ১৪ অক্টোবর মাদারীপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ নানা পেশার মানুষ গণঅনশন কর্মসূচি পালন করেছে। নিরাপদ মানসম্মত চিকিৎসা চাই, এ দাবিতে গণঅনশন করে সংগঠনের নেতা এড. মশিউর রহমান পারভেজ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন হাসপাতাল চালুর দাবিতে আন্দোলনস করে আসছি। কিন্তু জনস্বার্থে আন্দোলনের প্রতি কেউ সাড়া দেয়নি।
এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. নুরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে কনসালট্যান্টের পদসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। ফলে হাসপাতালে আগত রোগীদের চিকিৎসা দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। ২৫০ শয্যার হাসপাতালটি চালু হলে রোগীর চাপ অনেকাংশে কমে যাবে। রোগীরা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
মাদারীপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম খান জানান, জেলা সদরের ২৫০ শয্যার হাসপাতালটির সম্পূর্ণ কাজ শেষ করে ২০১৯ সালের শেষের দিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ভবনটির ৭ম তলায় বর্তমানে আইসিইউ নির্মাণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ১০টি কার্ডিয়াক মনিটর হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে।
এ প্রসঙ্গে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহম্মেদ খান জানান, ২৫০ শয্যা হাসপাতালের পদসৃজন (লোকবল), আসবাবপত্র ও ওষুধপত্রের অভাবে বিশেষ করে রোগীদের থাকার সিট, আলমারি, বেডসাইড লকার নেই। জনবল নিয়োগসহ সামগ্রিক বিষয়টি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা থেকে জনবল সংগ্রহ করে হাসপাতালটি শিগগিরই চালু করা হবে। এছাড়া এটি পূর্ণাঙ্গ চালু করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরে চিঠি দেয়া হয়েছে। খুব দ্রুত পূর্ণাঙ্গভাবে এটি চালু হবে বলেও জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ