Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কালীগঞ্জে উচ্চ মূল্যের খড়ই যেন কৃষকের ভরসা : সেচে নির্ভর আমনে হঠাৎ দরপতন

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ৫:০৭ পিএম

প্রকৃতির পানি নির্ভর আমন মৌসুমে এবছর তেমন একটা বৃষ্টি হয়নি। ফলে কৃষকদের সমগ্র মৌসুমের ধান ক্ষেতে সেচ দিয়েই চালাতে হয়েছে। ফলে এবছরের আমনে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুন। কিন্তু বছরটিতে আমন ক্ষেতে কীটপতঙ্গের আক্রমন ছিলনা বললেই চলে। এখন বিলম্বে রোপনকৃত কিছু ক্ষেত বাদে প্রায় সব মাঠের বেশিরভাগ ধান কৃষকেরা ঘরে তুলে ফেলেছেন। প্রকৃতির কমবৃষ্টির মৌসুমে যেখানে ধানই হওয়ার কথা নয় সেখানে ফলন খুব ভালো হয়েছে। বাজারে প্রথমদিকে দামও বেশ সন্তোষজনক ছিল। কিন্তু বিগত ৪/৫ দিনে হঠাৎ প্রতিমন ধানে কমপক্ষে ২’শ টাকা কমে গেছে। এতে কৃষকদের চিন্তা বেড়ে গেছে। তবে উচ্চ দামের গোখাদ্য বিছালী তাদের ভরসার দেওয়াল হিসেবে মনে করছেন। কৃষকেরা বলছেন, এ বছর বীজ, সার, সেচ, শ্রমিকের পাওনাসহ যাবতীয় খরচ মেটানো বেশ কষ্টকর। কৃষকেরা বলেন, প্রথমদিকে ধানের দামে খুশি ছিলেন। কিন্তু নতুন করে আবার দাম কমতে শুরু করেছে। স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলাররা গত কয়দিন ধান কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এদিকে মিলাররা বলছেন, হঠাৎ ভারতীয় চাল বাজারে আসার কারনে চালের দাম কমে গেছে। যে কারনে ধানের দামেও প্রভাব পড়েছে। এমন অবস্থায় পাওনাদারের দায়দেনা মেটাতে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ বেড়ে যাচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানাগেছে, চলতি আমন মৌসুমে রোপনের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল- ১৮ হাজার ৮’শ হেক্টোর। চাষ হয়েছে ১৮হাজার ৭’শ ৫০ হেক্টোর জমিতে। এরমধ্যে চিকন ও মোটা জাতীয় ধান রয়েছে। এ উপজেলার বিবিভিন্ন মাঠে চিকনের মধ্যে ব্রি-৮৭, ৭৫, ৫১, ও ব্রি-৪৯ ধান এছাড়াও মোটা জাতীয় ধানের মধ্যে ব্রি-৯০, ৯৩, ৯৪, ও ব্রি-৯৫ ধান, স্থানীয় জাত গুটিস্বর্ণা, বাবু স্বর্ণাসহ বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করা হয়েছে।
সরেজমিনে, উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ঘুরে দেখা যায় মাঠভরা আমনের প্রায় বেশির ভাগই কৃষকেরা ঘরে তুলে ফেলেছেন। বাকি ক্ষেতের ধানও ঘরে তোলার তাড়াহুড়ো চলছে। কেননা বিগত মৌসুমে প্রকৃতির বৈরি আবহাওয়ায় ক্ষেতের পাকা ধান ক্ষেতেই পঁচে গলে নষ্ট হয়েছিল। সে আশংঙ্কায় বাকি ক্ষেতের ধান ঘরে তুলতে তারা রাতদিন চেষ্টা চালাচ্ছেন। ধানের জন্য তাদে দৃষ্টি এখন আকাশের দিকে। একটু মেঘলা আকাশ দেখলেই তাদের চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে কখন যানি কি হয়। ধান ঘরে তোলার ব্যস্ততায় পরিবারের কৃষানীরাও হয়ে পড়ছেন মহাক্লান্ত।
কৃষিতে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক উপজেলার মহেশ^রচাঁদা গ্রামের হেলাল উদ্দীন জানান, আমন ধান উৎপাদন সাধারনত প্রকৃতির বৃষ্টিনির্ভর হওয়ায় খরচ কম। তবে এ মৌসুমের আমনে তা হয়নি। কেননা রোপনের প্রথম দিকে দু’একদিনের দুয়েক পসলা বৃষ্টিতে ধান রোপনের সুযোগ পান কৃষকেরা। এরপর তেমন একটা দেখা মেলেনি বৃষ্টির। ফলে রোপনকৃত আমনের একটু উঁচু ও সেচের আওতার বাইরের ক্ষেতগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এ জমিগুলোতে পরে অন্য ফসল চাষের জন্য অলস জমি হিসেবে রেখে দেয়া হয়। তবে সেচের আওতাভূক্ত ক্ষেতগুলো মৌসুম জুড়ে পানি সেচ দিতে হয়েছে। অধিকাংশ জমিতে ২-৩ দিনের ব্যবধানে পুনরায় সেচ দিতে হয়েছে। এবছর কৃষকদের বাড়তি নজরদারিতে কীটপতঙ্গের আক্রমন কম ছিল। ধানও হয়েছে বেশ সন্তোষজনক।
সাদিকপুর গ্রামের কৃষক সাজেদুল ইসলাম জানান, তার ১১ বিঘা ধানের মধ্যে সেচের আওতায় না হওয়ায় প্রায় দেড় বিঘা রোপনের ৩ সপ্তাহের মধ্যে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। বাকি ক্ষেতের ধান অনর্গল সেচ দিতে হয়েছে। খরচ বেড়েছে তবে তা উঠে যাবে গোখাদ্য বিছালী বিক্রি করে। গোখাদ্য বিছালী ভালো হলে এখন প্রতিবিঘা জমির বিছালী বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায়। এতে প্রায় খরচের অর্ধেকটা উঠে গেলেও হঠাৎ ধানের দাম কমে যাওয়ায় বাকি খরচ মেটানো কঠিন হবে।
উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের দুলালমুন্দিয়া গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম এবছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে আমন চাষ করে ৩ বিঘা পানির অভাবে নষ্ট হয়েছে। বাকি ক্ষেতের ধান প্রায় সবটুকু ঘরে তুলে ফেলেছেন। আমন মৌসুম জুড়ে আবহাওয়া যেমন ছিল ধান হওয়ার কথাই না। সেখানে বছরের খাওয়ার ধান উঠে কিছু থাকবে। তবে ধানের দাম পড়তে থাকলে দায়দেনা মেটাতে পারবেন না।
এদিকে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ধানের হাটে গেলে দেখা যায়, নতুন ধানে ভরা। দামও ভালো। চিকন ধানের চাহিদা একটু বেশি হলেও এ বছর মোটা ধানও আগ্রহের সঙ্গে কিনছেন ধান ব্যবসায়ীরা। কালীগঞ্জ উপজেলার সবচেয়ে বড় ধান ব্যবসায়ী শাহিন হোসেন জানান, মোকামে এ বছরের প্রথম দিকে ধানের চাহিদা অনেক বেশি ছিল। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন আগেও চিকন জাতীয় ধান প্রতিমন ১৩ থেকে সাড়ে ১৩’শ ও মোটা জাতীয় ধান ১২’শ টাকা পর্যন্ত কিনেছেন। কিন্তু ভারতীয় চাল বাজারে আসার কারণে হঠাৎ দর পড়ে গেছে।
উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মাহাবুব রহমান রনি জানান, এ বছর ভরা আষাঢ়েও তেমন একটা বৃষ্টি হয়নি। তাই আমন রোপন বেশ খানিকটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রকৃতিতে কারও হাত নেই। তবে কৃষকেরা সেচ দিয়ে ক্ষেতের ধান বাঁচিয়ে রাখলেও শেষমেষ সন্তোষজনক ফলন হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ