Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কনকনে শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

উত্তরাঞ্চলে শীত জেঁকে বসেছে। গণকুয়াশায় সাথে সাথে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রাও। আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসেই দেখা দেবে শৈত্যপ্রবাহ। এতে তাপমাত্রা ৬ থেকে ৭ ডিগ্রি পর্যন্ত কমে যেতে পারে। গত কয়েক দিনে তাপমাত্রা কম থাকায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হয়নি। গতকাল পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.২ এবং সৈয়দপুরে ১৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমাদের সংবাদদাতাদের তথ্যের ভিত্তিতে করা প্রতিবেদন :
পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা জানান : কুয়াশায় ঢেকেছে পঞ্চগড়ের জনপদ। গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ছিল ঘন কুয়াশায় ঢাকা। এদিন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত একাধারে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল তেঁতুলিয়ায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত বুধবার রাত থেকে জেলা জুড়ে বয়ে গেছে ঘন কুয়াশা। রাতভর টুপটাপ শব্দে বৃষ্টির মতো ঝরেছে কুয়াশা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢেকে ছিলো পুরো জেলা। মহাসড়কে সকাল ৯ টা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হয়েছে যানবাহনগুলোকে। অনেকে খড়খুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। এই শীত উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছে শ্রমজীবীরা। রামের ডাঙ্গা এলাকার শ্রমিক বেলাল হোসেন জানান, ‘ঠাণ্ডা করলেও কাজ করতে হবে কারণ পেট খায়, পরিবার আছে।’নওগাঁ থেকে ছেড়ে আসা ট্রাক চালক আমিনার রহমান জানান,ঘন কুয়াশায় সড়ক চেনা যায় না। এজন্য হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যেবক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ্ জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে একাধারে ৫ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এ মাসের শেষে জেলায় মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান : নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা কমছে। গোটা উত্তরবঙ্গে ঘন কয়াশায় ঢেকে পড়েছে। প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হতে শুরু করছে গোটা সৈয়দপুর উপজেলাজুড়েও। যা থাকছে দুপুর পর্যন্ত। এ কারণে সকালেও আলো জ্বেলে চলছে যানবাহন। গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসেই দেখা দেবে শৈত্যপ্রবাহ। এতে তাপমাত্রা ৬ থেকে ৭ ডিগ্রি পর্যন্ত কমে যেতে পারে। প্রতি বছর সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় রেকর্ড করা হচ্ছে সৈয়দপুরে। এবারও ব্যতিক্রম নয়।
সৈয়দপুর উপজেলার গত কয়েকদিন ধরেই ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। আগের দিন সন্ধ্যা থেকে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত এমনকি সন্ধ্যা পর্যন্ত কুয়াশা থাকছে। মাঝে মাঝে সূর্যের দেখা মিললেও প্রখরতা নেই। এই সময়টাতে লোকজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। ঘন কুয়াশার পাশাপাশি কনকনে ঠাণ্ডাও জেঁকে বসতে শুরু উপজেলাজুড়ে। কৃষিজীবী নিম্নআয়ের মানুষের কাজে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে খুব দেরি করে সূর্যের দেখা মিললেও তা বেশিক্ষণ থাকছে না। দুপুরের মধ্যেই মেঘে ঢাকা পড়ছে। ঘন কুয়াশা ঢেকে রেখেছে চারপাশ। সকাল ১০টা পর্যন্ত একই অবস্থা। যদিও ১২ টার পরেই সূর্যের দেখা মিলেছে, তবে প্রখরতা নেই। এই সময়টাতে সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে।
শহরের হাতিখানার এলাকার সুজন বলেন, প্রতিদিন সকালে ইজিবাইক নিয়ে বের হই। এই সময়ে ইজিবাইকের চলাচল কম হওয়ায় যাত্রী ভালো পাওয়া যায়। তবে গত কয়েকদিন ধরে সকালে যাত্রীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। শীতের কারণে মানুষজন বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। আমিও যে ইজিবাইক চালাচ্ছি তাতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় হাত-পা জড়ো হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার সোনাখুলি গ্রামের মোরসালিন সুমন বলেন, ‘সকালে কিছু শাক বিক্রির জন্য সাইকেল নিয়ে বের হয়েছিলাম। সেগুলো গোলাহাট বাজারে দিয়ে আসলাম। কিন্তু সকালে এমন অবস্থা যে সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে রাখতে পারছিলাম না। ঠাণ্ডায় হাত বরফ হয়ে যাচ্ছিল যেন।’
বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের পুরান পোড়াহাট এলাকার রফিকুল ইসলাম ইসলাম বলেন, ‘এখন ধানের বীজ বপন করার সময়। মাঠে আলু রয়েছে। যদি এমনভাবে কুয়াশা হয় তাহলে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে। এই সময়ে আমরা খুব ভয়ে থাকি। কয়েকদিন ধরেই ঘন কুয়াশা, তাই আলুতে বালাইনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে।’
সৈয়দপুর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত বুধবার তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সৈয়দপুর উপজেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, দিন দিন তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা ছিল। এই তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমে যেতে পারে এবং এই মাসের শেষের দিকে একটি শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে এবং এই ঘন কুয়াশা চলমান থাকবে তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে তা কিছুটা কমতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ