Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঙ্কটে সিমেন্ট শিল্প

নানামুখী সমস্যা সমাধানে সরকারের পদক্ষেপ চায় বিসিএমএ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কাঁচামাল আমদানী পর্যায়ে আকস্মিক সম্পূরক শুল্ক আরোপ ও অতিরিক্ত অগ্রিম করারোপ, জ¦ালানি সঙ্কট, অসমন্বয়যোগ্য অগ্রিম কর, পরিবহন ভাড়া ও ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ নানামুখী সমস্যায় দেশের উদীয়মান খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম সিমেন্ট শিল্প বর্তমানে এক কঠিন সময় পার করছে। সরকারের যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমেই সিমেন্টে শিল্পের এসব সমস্যার সামাধান সম্ভব। অন্যথায় এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে সিমেন্টের মূল্যের উপর, যা দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করেন সিমেন্ট শিল্প মালিকেরা।
বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) সভাপতি ও ক্রাউন সিমেন্টের ভাইস-চেয়ারম্যান মো. আলমগীর কবির গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন। বাংলাদেশ সিমেন্ট শিল্পের বর্তমান চিত্র তুলে ধরা উপলক্ষে রাজধানীর একটি হোটেলে বিসিএমএ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
লিখিত বক্তব্যে মো. আলমগীর কবির বলেন, আড়াই দশক পূর্বে সিমেন্টের প্রায় সম্পূর্ণ চাহিদা আমদানীর মাধ্যমে পূরণ করা হতো। কিন্তু গত আড়াই দশকে উদ্যোক্তাদের সাহসী পদক্ষেপ ও সরকারের নীতি সহায়তার কারণে সিমেন্ট শিল্প একটি বিকাশমান শিল্প ও তুলনামূলক সুসংগঠিত খাত হিসেবে বিবেচিত হতো। দেশের চাহিদা মিটিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ বিদেশেও সিমেন্ট রপ্তানি করে আসছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৫টি দেশী ও বিদেশী প্রতিষ্ঠান সিমেন্ট উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এর বার্ষিক কার্যকরী উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৭৯ মিলিয়ন টন। যার বিপরীতে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩৯ মিলিয়ন টন। চাহিদার তুলনায় প্রায় দ্বিগুন এর বেশী উৎপাদন ক্ষমতা থাকার কারণে বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা রয়েছে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে নামমাত্র মূল্যে সিমেন্ট বিক্রি করতে হয়। এতে আর্থিক ভাবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য প্রধান কাঁচামালগুলো বিদেশ থেকে আমদানী করা হয়। সিমেন্ট শিল্পের কাঁচামাল লাইমষ্টোনের উপর আকস্মিক ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়করের সাথে আরও ২ শতাংশ অতিরিক্ত অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি লাইমষ্টোন আমদানিতে আগে থেকেই ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর ও ৩ শতাংশ অগ্রিম কর বিদ্যমান রয়েছে। লাইমষ্টোনের উপর আকস্মিক সম্পূরক শুল্ক ধার্যের কারণে এ খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
আলমগীর কবির বলেন, এই অতিরিক্ত শুল্কায়ন এর ফলে বর্তমানে আমদানী মূল্যের উপর প্রায় ২৭ শতাংশ এর পরিবর্তে প্রায় ৬৭ শতাংশ শুল্ক ও কর পরিশোধ করে লাইমষ্টোন ছাড় করাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য প্রধান কাঁচামাল হলো ক্লিংকার, স্লাগ, লাইম ষ্টোন, ফ্লাই এ্যাশ এবং জিপসাম। এই পাঁচ প্রকার কাঁচামালই বিদেশ হতে আমদানী করতে হয়। এখানে আরো উল্লেখ করা যায়, বিএসটিআই এবং ইউরোপিয়ান নর্মস অনুযায়ী সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত লাইমষ্টোন ব্যবহারযোগ্য। লাইমষ্টোনের আমদানী মূল্য অন্যান্য কাঁচামালের আমদানী মূল্যের তুলনায় সবচেয়ে কম। সেইভাবে লাইমষ্টোন একটি সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ী কাঁচামাল, তাই এই অতিরিক্ত শুল্কায়নের ফলে, সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা লাইমষ্টোন আমদানী করতে নিরুৎসাহিত হবেন বলে ধারনা হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে, বর্তমান ডলার সঙ্কটের উপর অতিরিক্ত চাপ বাড়বে, যা কোন ভাবেই কাম্য নয়।
সংবাদ সম্মেলনে বিসিএমএ প্রেসিডেন্ট বলেন, আমদানী পর্যায় ছাড়াও বিক্রয় পর্যায়েও ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ধার্য করা আছে। অর্থাৎ একটি সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লোকসান করলেও, তাকে চূড়ান্ত কর দায় হিসেবে এই অগ্রিম আয়কর পরিশোধ করতে হবে যা কোন বিবেচনায়ই গ্রহণযোগ্য নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিকট, সিমেন্ট শিল্পের জন্য অগ্রিম আয়কর এর কারণে দূরাবস্থার বিষয়টি আমরা সিমেন্ট উৎপাদনকারীরা পূর্বে বহুবার তুলে ধরেছি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে না, যার ফলশ্রুতিতে দেশের একটি উদীয়মান শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন এবং অগ্রিম আয়কর আমদানী ও বিক্রয় উভয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য্য করবেন এবং চূড়ান্ত কর দায় হতে মুক্ত করবেন।
ডলার সঙ্কটের কারণে সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানীতে বিঘ্ন হচ্ছে, খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে নতুন করে এলসি খুলতে গিয়েও বর্তমানে বিরাট বাধার সম্মুখীন হচ্ছে সিমেন্ট খাতের শিল্প মালিকরা। লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন বিঘ্ন হচ্ছে। একইসঙ্গে গ্যাস সঙ্কটের কারণে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সিমেন্টের স্থানীয় পরিবহণ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া সিমেন্ট রফতানির উপর নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থা না থাকাতেও এই শিল্প ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে মো. আলমগীর কবির সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার যদি এই খাতটিকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করে, ব্যাংক সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর সমূহকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়; তাহলে সিমেন্ট উৎপাদনকারীদের এই দুরাবস্থা কিছুটা হলেও কমবে এবং দেশের সিমেন্ট শিল্প প্রসারিত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ