Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বাজার স্বাভাবিক রাখতে ফেব্রুয়ারির মধ্যে পণ্য খালাসের দাবি

রমজানে ৮ পণ্য বাকিতে আমদানি করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে ৮টি নিত্যপণ্য বাকিতে আমদানি করার সুযোগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। পণ্য ৮টি হলো-ভোজ্যতেল, খেজুর, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি। গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে অনুমোদিত সব ব্যাংকের কাছে পাঠিয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, আসন্ন রমজানে ভোজ্যতেল, খেজুর, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানির সুযোগ পাবেন। এ সুবিধা আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ের জন্য প্রযোজ্য হবে। এর আগে গত সোমবার পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খুলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনে রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহের দাবি জানিয়েছিল এফবিসিসিআই। একইসঙ্গে চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট বিবেচনায় নিয়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের খেলাপি না করার দাবি জানিয়েছিল শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনটি। তবে আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে এলসি সুবিধা দিলেও বন্দর থেকে সঠিক সময়ে পণ্য খালাস করতে না পারলে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিত্যপন্য আমদানির পর জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে খালাস না হলে এর প্রভাব বাজারে পড়বেই। তাই বাজার স্বাভাবিক রাখতে হলেও ফেব্রুয়ারির মধ্যে বন্দর থেকে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
যদিও এফবিসিসিআইসহ শীর্ষ ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, আগে থেকেই সবাই সচেতন হওয়ায় ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বন্দর থেকে পণ্য খালাস হবে। তাই ভোক্তা পর্যায়ে এর কোন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, পন্য খালাসে বিড়ম্বনা অভিজ্ঞতার মুখোমুখি প্রতিনিয়তই হতে হচ্ছে তাদের। তাই বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কাস্টমের প্রোসেসিং আরো উন্নত করার দাবি তাদের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, পণ্য খালাসে বিড়ম্বনার অভিজ্ঞতা আছে, থাকছেই। অনেক সময় গাড়ি এসেছে, যেটাকে খালাস করতে গিয়ে এটা-ওটা নানান সমস্যা মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এখনো এসব জায়গায় অনেক কাজ করা উচিত।
খুব দ্রুত যদি খালাস হয় একজন ব্যবসায়ী দ্রুত রাজস্ব দিয়ে পণ্যটা ছাড় করিয়ে বিক্রি করে আবার এলসি করে আবার পণ্য আনতে পারবে। তিনি বলেন, পণ্য আসার পর যদি বন্দরে পরে থাকে তাহলে, বন্দরের ভাড়া দিতে হয়; তার ব্যবসায় অবশ্যই ক্ষতি হয়। একজনতো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পণ্য আমদানি করে। সে কারনে যতই দেরি হবে, ঋণের বোঝা বাড়ে, সুদ বাড়ে, এখানে আবার পরে থাকে পণ্য, ওয়াকিং চার্জ-বন্দরের চার্জ হয়। সবমিলিয়ে পন্য ছাড়ে দেরি হলে ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কেউ যদি দুই মাসে দুইটা এলসি এনে রোলিং করে, সেখানে যদি দুইমাসে একটি আসে; তাহলে স্লো হয়ে যাবে ব্যবসা। এখনো সত্যি কথা বলতে গেলে বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং কাস্টমের প্রোসেসিং আরো উন্নত করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের দাবি কেমন বাস্তবায়ন হলো জানতে চাইলে হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, সমসাময়িক যে সমস্যাগুলো আছে সে সমস্যা নিয়েই কিন্তু আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে মিটিং করেছি। কোন একটা মিটিং হওয়ার সাথে হয়ে যাবে এমনটা না-এটা স্বাভাবিক। আমাদের যে প্রস্তাবনাগুলো ছিলো তা আমরা লিখিতভাবে দিয়ে এসেছি। প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে উনারা বসে দেখবেন কি করা যায় এবং কোনগুলো রাখা যায়। আমাদেরকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, আমরা যে প্রস্তাবগুলো করেছি সেগুলো তারা অনেকগুলোর সাথে তিনি একমত এবং বাকিগুলো মিটিং করে দেখবেন রাখা যায় কিনা।
ডলারের বিভিন্ন রেট নিয়ে সমস্যা দীর্ঘদিনের। বৈঠকে আলোচনা হয়েছে সে বিষয়েও। এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি বলেন, ডলারের বিভিন্ন রেট নিয়ে সবারই সমস্যা। এটা নিয়ে আমরা সবসময়ই কথা বলছি। এখন যিনি এক্সপোর্ট করেন তিনি পাচ্ছেন ১০০ টাকা, আবার উনি যখন ইমপোর্ট করছেন একই পণ্যের এবং একই ব্যাংকে তখন ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে। এটাতো আসলেই কষ্টদায়ক। আপনি যখন আমার থেকে কিনছেন তখন দিচ্ছেন ১০০ টাকা, আবার যখন আপনি আমার কাছে বিক্রি করতে চাচ্ছেন তখন ৭ টাকা বেশি চাচ্ছেন। এটা ইনজাস্টিস। এজন্য বলেছি এটা কমিয়ে আনতে হবে। হয়তো এক থেকে দুই টাকা বেশি হলে ঠিক আছে। কার্ব মার্কেটেও ১১৬ থেকে ১১৭ টাকা। মাল্টিপল রেট। ১০০ টাকা, ১০৭ টাকা, ১১৭ টাকা। আবার ব্যাংক থেকে ব্যাংকের রেট ৯৭ টাকা। এটা আসলেই অনেক বিভ্রান্তিকর রেট।
ক্যাপ রেট প্রসঙ্গে হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, আমাদের যে ক্যাপিংটা আছে ৯ শতাংশ সেটা যদি এখন তুলে দেয় আরেকটা বিপর্যয় হবে। ব্যবসায়ীদের হাত ধরে অনেক নতুন নতুন ফ্যাক্টরি হচ্ছে, কারখানা হবে। মানুষ যদি দেখে ১৪ শতাংশ, ১৫ শতাংশ ইন্টারেস্ট রেট এমন হয়; তাহলে নতুন ফ্যাক্টরি হবে না, কর্মসংস্থান হবে না। এক্সপোর্ট নেই, ডলার আসবে না। সবমিলিয় আরেকটা বিপর্যয়। তাই আমরা অনুরোধ করেছি কমপক্ষে এক বছর দেখেন তারপর ক্যাপিং রেট দরকার হলে তুলে দেন। তার আগে এটা না করতে অনুরোধ জানিয়েছি।
এলসি সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আমি নিজেও গাড়ি আমদানির সঙ্গে জড়িত। গভর্নর জানিয়েছেন, জানুয়ারি শেষের দিকে অথবা ফেব্রুয়ারির মাঝে এখন যে ডলার সঙ্কটের কারণে এলসি করতে অসুবিধা হচ্ছে, সেটা হয়তো আর থাকবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ