Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

একজন কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন

বিনোদন রিপোর্ট: | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের আজ চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর, ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী আমজাদ হোসেন শুধু চলচ্চিত্রকারই নন, একাধারে অভিনেতা, চলচ্চিত্রকার, কাহিনীকার, সংলাপকার, চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, টিভি নাট্যকার, গীতিকার ও একজন সুসাহিত্যিক। সাহিত্য এবং চলচ্চিত্রের প্রায় সব শাখায় তাঁর ছিল দাপুটে বিচরণ। বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাঁর নির্মিত অসাধারণ চলচ্চিত্রগুলো সর্বকালে সর্বমহলে সমাদৃত। শুধু চলচ্চিত্রই নয়, টিভি নাটক রচনা, পরিচালনা ও অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত খ্যাতিমান একজন। চলচ্চিত্র ও সাহিত্যের মাধ্যমে তিনি, মেহনতি মানুষের জীবন-সংগ্রামের রূপায়ণে উৎকর্ষতা দেখিয়েছেন । তাঁর নির্মিত প্রতিটি চলচ্চিত্র জীবনের প্রতিচ্ছবি। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন, অত্যন্ত সহজ-সরল, মিশুক, সদালাপী ও নিরহংকারী। এই অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জামালপুর জেলা স্কুল থেকে, ১৯৫৬ সালে মেট্রিক পাস করে, আশেদ মাহমুদ কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকায় এসে, ঢাকা সিটি কলেজে (নাইট শিফট) ভর্তি হন, এখান থেকে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে যুক্ত হন। ছড়া লিখে সাহিত্যের অঙ্গণে তাঁর যাত্রা শুরু। তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় ভারতের বিখ্যাত ‘দেশ’ পত্রিকায়। ছোটদের জন্যে তিনি লিখেছেন বহু গল্প, ছড়া এবং উপন্যাস। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ও গল্প লিখেছেন। বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী এবং ইতিহাসভিত্তিক লেখাও লিখেছেন। তাঁর লিখা উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে ধ্রুপদী এখন ট্রেনে, দ্বিধাদ্বন্দ্বের ভালোবাসা, আমি এবং কয়েকটি পোস্টার, নিরক্ষর স্বর্গে, অস্থির পাখিরা, ফুল বাতাসী, রাম রহিম, আগুনে অলঙ্কার, ঝরা ফুল, শেষ রজনী, মাধবীর মাধব, মাধবী ও হিমানী, মাধবী সংবাদ, যুদ্ধে যাবো, অবেলায় অসময়, উত্তরকাল, যুদ্ধযাত্রার রাত্রি ইত্যাদি। জীবনীগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে মাওলানা ভাসানীর জীবন ও রাজনীতি, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু জীবন ও রাজনীতি, মানবেন্দ্রনাথ রায় জীবন ও রাজনীতি, শ্রী হেমচন্দ্র চক্রবর্তী। কিশোর উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে জন্মদিনের ক্যামেরা, যাদুর পায়রা, ভূতের রাণী হিমানী, সাত ভূতের রাজনীতি, শীতের রাজা উহু কুহু, টুকটুক, রঙিন ছড়া কৃষ্ণচূড়া। গল্পগ্রন্থ পরীনামা, জোছনায় বৃষ্টি, কৃষ্ণলীলা। রচনাসমগ্রহের মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের রচনাসমগ্র, মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস সমগ্র, মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত কিশোর গল্প। এছাড়া রয়েছে আমজাদ হোসেনের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস সমগ্র-১, নির্বাচিত গল্পসমগ্র, কিশোর গল্পসমগ্র ইত্যাদি। আমজাদ হোসেন ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন। তাঁর রচিত নাটক অবলম্বনে ১৯৬৩ সালে পরিচালক সালাহ্উদ্দিন নির্মাণ করেন ‘ধারাপাত’ চলচ্চিত্রটি। এই চলচ্চিত্রে নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন আমজাদ হোসেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে হারানো দিন, বেহুলা, দুই ভাই, আনোয়ারা, সংসার, বাল্যবন্ধু, ভাগ্যচক্র, পিতা পূত্র, আগুন নিয়ে খেলা, বড় বউ, জীবন থেকে নেয়া। তাঁর পরিচালিত (যৌথ) প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুন নিয়ে খেলা’ মুক্তিপায় ১৯৬৭ সালে। তাঁর পরিচালিত অন্যান্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে, জুলেখা, দুই ভাই (যৌথ), বাল্যবন্ধু, পিতা পুত্র, নয়নমনি, গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী, কসাই, দুই পয়সার আলতা, জন্ম থেকে জ্বলছি, ভাত দে, সখিনার যুদ্ধ, হীরা মতি, গোলাপী এখন ঢাকায়, আদরের সন্তান, সুন্দরী বধূ, প্রাণের মানুষ, কাল সকালে, গোলাপী এখন বিলাতে প্রভৃতি। তিনি একাধিক আলোচিত ও জনপ্রিয় টিভি নাটক রচনা ও নির্মাণ করেছেন। একসময় ঈদের নাটক মানেই ছিল আমজাদ হোসেনের ‘জব্বার আলী’ (সিরিজ নাটক)। গীতিকার হিসেবেও তাঁর ছিল অসামান্য জনপ্রিয়তা। কালজয়ী অনেক গান রচনা করেছেন তিনি। তাঁর লেখা কালজয়ী গানের মধ্যে রয়েছে, হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ, একবার যদি কেউ ভালোবাসতো, বাবা বলে গেলো আর কোনো দিন গান করো না, কেউ কোনো দিন আমারে তো কথা দিলো না, জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো, এমনও তো প্রেম হয় চোখের জলে কথা কয়, আমি আছি থাকব ভালোবেসে মরব, বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না, নানিগো নানি, দুঃখ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়, কত কাঁদলাম কত সাধলাম আইলা না, চিনেছি তোমারে আকারে প্রকারে, আমি হবো পর, যে দিন আসবে রে তোর বর ইত্যাদি। অসামান্য কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার। তিনি ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ও ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তিনি ১২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ৬টি বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ১৯৯৩ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া সাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার ও ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার- ২০০৯ সহ আরো বহু পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেন। ব্যক্তিজীবনে আমজাদ হোসেন দুইবার বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ে হয়, বরিশালের মেয়ে রওশন আরার সাথে। প্রথম সংসারে তাঁর তিন ছেলে দোদুল, কল্লল ও মৃদুল। দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন একসময়ের চিত্রনায়িকা সঞ্চিতাকে। এই সংসারে তাঁর এক ছেলে সোহেল আরমান ও এক মেয়ে শায়লা শারমিন শুক্লা। তাঁর দুই পুত্র সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমান স্বনামধন্য অভিনেতা-চিত্রপরিচালক ও নাট্যকার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ