Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সড়ক-মহাসড়কে গণপরিবহনে চলছে চাঁদা আদায়

মুরাদনগরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষিত

মুরাদনগর (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে কুমিল্লার মুরাদনগরে গণপরিবহনে দুই চেয়ারম্যান সড়ক-মহাসড়কে গণপরিবহন থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় বসে চাঁদাবাজী নিয়ন্ত্রণ করছেন নবীপুর পূর্ব ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের এবং তার সহযোগী নবীপুর পশ্চিম ইউপি চেয়ারম্যান ভিপি জাকির হোসেন। প্রশ্ন এসেছে এ চাঁদাবাজীর পুলিশ কিংবা প্রশাসনের চোখে পড়ে না? কি কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? এ নিয়ে এলাকায় বেশ তোলপাড় চলছে। সম্প্রতি অর্থনৈতিক মন্দাসহ নানা সংকটের মাঝে পরিবহনে চাঁদা বৃদ্ধি নিয়ে মালিক এবং শ্রমিকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। সরেজমিনে জানা যায়, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সকল গণপরিবহনে অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করছে দুই ইউপি চেয়ারম্যান। মালিক শ্রমিকদেরকে জিম্মি করে নিজস্ব বাহিনী দ্বারা এসব চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ওই বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিনই ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করে। প্রতি ট্রিপে ট্রিপে শত শত পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করছে চেয়ারম্যানদের নিযুক্ত সিন্ডিকেট সদস্যরা। একটা সময় পরিবহন মালিকগণ নিয়ন্ত্রণ করলেও গত ইউপি নির্বাচনে জয়ী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ স্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিজ হাতে তুলে নেন কাজী আবুল খায়ের চেয়ারম্যান। সহযোগী জাকির চেয়ারম্যান এবং বিএনপি নেতা জহির খান। স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণে নিয়েই সকল পরিবহনে চাঁদা বাড়িয়ে দেয় এ দুই চেয়ারম্যান সিন্ডিকেট। এ সময় মালিক-শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলেও তাদের হুমকির কাছে টিকতে পারেনি। মালিক শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলে পুলিশ প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে তাদেরকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়। এদিকে এ দুই চেয়ারম্যানের ফোনে যেকোন সময় মুরাদনগর থানা পুলিশ স্ট্যান্ডে হাজির হয়ে যায়। যার ফলে সহজেই সব কিছু নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম তারা। ওই স্ট্যান্ড থেকে মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ পরিবহন মালিকদের। সূত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী তিশা গোল্ডেনের প্রতি গাড়ি থেকে প্রতি ট্রিপে জিপির বাইরে অতিরিক্ত ২শ’ টাকা করে চাঁদা আদায় হচ্ছে। একইভাবে হানিফ সুপার থেকে ২শ’, হানিফ ক্লাসিক থেকে ২শ’, শাপলা থেকে ২শ’, প্রান্তিক থেকে ২শ’, কুমিল্লা ট্রান্সপোর্ট থেকে ২শ’, টিপু ফ্যাশন থেকে ২শ’, নিউ জনতা থেকে ১৩০ টাকা, ফারজানা থেকে ৭০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। অবিলম্বে প্রশাসন এসব চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবে এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ বাস মালিক এবং শ্রমিকদের। নিউ জনতা পরিবহনের মালিক ইকবাল হোসেন বলেন, কাজী আবুল খায়ের এবং জাকির চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত চাঁদা আদায়ে আমরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, সাধারণ মালিকগণকে জিম্মি করে ৫৮টি নিউ জনতা বাস থেকে মাসে কমপক্ষে ৩-৪ লাখ টাকা চাঁদা তুলে নিচ্ছে। আমরা অনেকটা বাধ্য হয়ে চাঁদা দিচ্ছি। তিশা পরিবহনের পরিচালক আবুল খায়ের মিয়া বলেন, কাজী আবুল খায়ের চেয়ারম্যান এবং জাকির চেয়ারম্যান বিগত ইউপি নির্বাচনে জয়ী হয়েই আমাদের তিশা পরিবহন কাউন্টার দখলে নেয়। এখন আমি নিজেই প্রতি ট্রিপে প্রতি গাড়ি থেকে দুশ’ টাকা চাঁদা দিচ্ছি। প্রতিদিন তাদেরকে গড়ে আমাদের পরিবহন থেকে ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। তারা অনেক প্রভাবশালী বলে বাধ্য হয়েই চাঁদা দিচ্ছি। এ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের বলেন, জনতা পরিবহনের সাথে আমার সম্পৃক্ততা আছে, অন্য কোনো গণপরিবহনে চাঁদাবাজীর সাথে আমি জড়িত নই। ভিপি জাকির হোসেন বলেন, আমি যানজট কমিটির সভাপতি হিসেবে স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ এবং যানজট নিরসন করতে হয়, কিন্তু কোন প্রকার চাঁদাবাজির সাথে আমি জড়িত নই। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মুরাদনগর সার্কেল) পিযুষ চন্দ্র দাস বলেন, কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় গণপরিবহনে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই, যেহেতু আজকে আপনাদের কাছ থেকে জেনেছি, অবশ্যই তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তাছাড়া পুলিশের কোনো সদস্যও যদি সম্পৃক্ত থাকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ