Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী, কদমতলী মাদকে সয়লাব : শঙ্কিত অভিভাবক মহল

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২২, ৫:৪১ পিএম

সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী, কদমতলী এলাকার অন্যতম সমস্যা হলো মাদক। যার ভয়াল থাবা থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছেনা যুব সমাজও। এ অবস্থায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। মাদকের নিষ্ঠুর যাত্রায় কেউ লাখ লাখ টাকার ব্যবসা ধ্বংস করে সর্বশান্ত হয়ে জড়িয়েছেন ভয়ংকর অপরাধ চক্রে। অনেক পরিবার তছনছও হয়ে গেছে।
এসব কারবারে সবচেয়ে বেশী আসক্তি দেখা গিয়েছে উঠতি বয়সের তরুন-তরুনীদের মাঝে। বিভিন্ন মাদক দ্রব্যের ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, কোকেন, আফিন ও গাজায় আসক্ত হয়ে পড়ছে তারা। বর্তমানে ছোট ছোট শিশু ও কিশোররা ড্যান্ডি নামক মাদক সেবনে ঝুঁকে পড়েছে।
এদিকে মাদক পাচারকারীরা মাদক মওজুদের নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও র‌্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয় সংলগ্ন এলাকাগুলোকে। থানা ও র‌্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয় পাশে বলেই মাদক ব্যবসায়ীরা নিরাপদে এ অঞ্চলগুলোতে মাদক মওজুদ ও ক্রয় বিক্রয় করে আসছে।
বিশেষ করে নাসিক ৬নং ওয়ার্ড ও ৭নং ওয়ার্ড আদমজীনগর কদমতলী, নতুন বাজার, আইলপাড়া, শিমুলপাড়া, মুনলাই পূর্ব পাশের চৌরাস্তা এলাকায়সহ চলছে জমজমাট মাদক ব্যবসা। নির্বিকার রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত মহল্লায় অভিনব কৌশলে সেবনকারীদের কাছে মরন নেশা ইয়াবা ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য পৌঁছে দিচ্ছে।
একদিকে আইনশৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদাসিনতা অন্যদিকে একাধিক কর্মকর্তার সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, এলাকার সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় মাদকের বড় বড় চালান এনে নিরাপদে সরবারহ হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ও র‌্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ের প্রায় ৫শ’ গজ দূরত্ব কদমতলী পুল এলাকা এখানে দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার মধ্যে একটি কলেজ ও একটি স্কুল। এছাড়াও পুরো কদমতলী এলাকায় রয়েছে ৮/১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাদ্রাসা।
এসব শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোর আশপাশসহ আদমজী নগর এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই যেখানে গাাঁজা ও ইয়াবার কারবার না হচ্ছে। আদমজী এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ইসরাফিল, জগত, রানা, নাছির অন্তর, পাপ্পু, জলিল, এসাক,খোকন, আলামিন, জাহাঙ্গীর ওরফে দাদে, আয়নাল, ইলিয়াছ, পিচ্চিবাবু,বদ্দু, হানিফ, আরমানের মা, মান্না, মিজান, কামাল, শাকিল, সায়েদ,পারভেছ, ছোট পাপ্পু,বড়পাপ্প। এরা অবাধে মাদক বিক্রি করছে যা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা হাত বাড়ালেই পাচ্ছে মরন নেশা ইয়াবা।
জাহাঙ্গীর কদমতলী চার রাস্তার মোড়, রাজন উত্তর পাড়া, আয়নাল কাউন্সিলর গল্লি ও ইসাক কদমতলী খালপাড়, ইসরাফিল কদমতলী ভূয়াবাড়ী মাঠ, জগত কদমতলী বড় পকুর পাড়, অন্তর নয়া পাড়া, কানা আক্তার কলেজ পাড়া, রানা উত্তর পাড়া, ছোট পাপ্পু,বড়পাপ্প নয়াপাড়া, মান্না ,মিজান, কামাল, মুনলাইট সিনামাহলের পূর্ব পাশে চৌরাস্তার মোড়, নাছির মাদবর বাড়ী, সায়েদ,পারভেছ, পিচ্চিবাবু আইলপাড়া সিমেন্ট ফ্যাক্টরির এলাকায় মাদকের নিয়ন্ত্রনসহ কেনাবেচা করছে। এদের মধ্য স¤প্রতি ডিবি পুুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবন্দি রয়েছে কানা আক্তার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ ঢাকডোল বাজিয়ে ওপেন হাউজডে করে। সেখানে তারা বলে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষনা করেছে তাই আমরাও মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আসলে তাদের এ কথা গুলো কাগজে কলমে বাস্তবে তা নয়। মাঝে-মধ্যে কয়েকটি চালান র‌্যাবের হাতে ধরা পরলেও নির্বিকার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ।
পুলিশের অভিযান শিথিল থাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা নির্ভয়ে মাদক ব্যবসা করে যাচ্ছে। তবে এলাকাগুলোতে মাদক ব্যবসায়ের নেপথ্যের লোকেরা ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে যায়। মাদকের চালানগুলো গ্রহন করে ভাগবন্টন করে নেয় মাদক ব্যবসায়ীরা রাত সাড়ে সাতটা থেকে ৯টার মধ্যে প্রতিটা মহল্লায় মাদক পৌঁছে দেয়
কারণ এ সময় পুলিশ ডিউটি পরিবর্তন করে। এ সময় রাস্তায় পুলিশের কোনো গাড়ি থাকে না। তার কারণে নির্ভয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক পৌঁছে দিতে কোনো বাধা অতিক্রম করে না বলে জানায় এলাকাবাসী।
এদিকে মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় যুব সমাজের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এতে করে সামাজিক অবক্ষয় ঘটছে ব্যাপকভাবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক দেখানো অভিযানে কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে পুরোদমে আবার শুরু হচ্ছে মাদক পাচার ও বিক্রি।
ইদানীং ইয়াবা ব্যবসায় কিশোর বয়সের ছেলে ও নারীরা জড়িয়ে পড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। ফলে সমাজে ধীরে ধীরে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
তারা বলছেন, যে কিশোর গ্যাংয়ের উদ্ভব হয়েছে প্রতিটি এলাকায়- তার নেপথ্যের প্রধান কারণই হল মাদকের সহজলভ্যতা। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা রাজনৈতিক শেল্টারে কিশোরদের দিয়ে মাদক ব্যবসা করাচ্ছে বলেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে কিশোর গ্যাংয়ের লড়াই হচ্ছে, খুনের মতো ঘটনা ঘটছে।
এদিকে মাদক ও কিশোগ্যাং এর বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে নিয়মিত অভিযান চালালেও রহস্যজনক কারনে অধরা থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ বলছে, মাদক ও কিশোরগ্যাং দমনে আমারা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি।ইতিমধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আনা হবে। কোনো অপরাধিকে ছাড় দেয়া হবেনা।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ