Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লায় সামাজিক অস্থিরতায় বাড়ছে নারী ও শিশু নির্যাতন

নয় শতাধিক মামলা ॥ বিচারাধীন সাড়ে চার হাজার

| প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : প্রতিনিয়ত নানাভাবে ঘরে-বাইরে নির্যাতিত হচ্ছে নারী। পারিবারিক বিরোধ, প্রতিহিংসা, লালসা ও স্বার্থের নির্মম শিকার হচ্ছে শিশুরাও। সামাজিক অস্থিরতার কারণে নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশুরা। আর এসব ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে কুমিল্লায়। দিন দিন পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠছে যে গত এগার মাসে কুমিল্লার ষোল উপজেলার ১৭টি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে ৫১৩টি মামলা হয়েছে। একই সময়ে থানায় রেকর্ডকৃত মামলা ছাড়াও ব্লাস্ট কুমিল্লা ইউনিটের পক্ষ থেকে নারী শিশু নির্যাতন ও যৌতুক সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে ৪১৮টি মামলা হয়েছে। সবমিলে ৯শ’র বেশি মামলা হয়েছে গত এগার মাসে। অন্যদিকে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা নিস্পত্তির গতি বাড়লেও বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজারে দাঁড়িয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা কমিটি ও নারী শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কুমিল্লার ষোল উপজেলার ১৭টি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে এ বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫১৩টি মামলা হয়েছে। নারী শিশু নির্যাতনের সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে কুমিল্লা সদর উপজেলার কোতয়ালী থানায়। গত এগার মাসে কোতয়ালী থানায় নারী শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ১১৪টি মামলা হয়েছে। একই সময়ে দেবীদ্বার থানায় ৫২টি, সদর দক্ষিণ থানায় ৪২টি, বরুড়া থানায় ৩৯টি, চান্দিনায় ৩৮টি, চৌদ্দগ্রামে ৩৬টি, নাঙ্গলকোটে ২৯টি, মুরাদনগরে ২৭টি করে, দাউদকান্দিতে ২৪টি, বুড়িচংয়ে ২৩টি, বাঙ্গরায় ২২টি, মনোহরগঞ্জে ২০টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ১৯টি, লাকসামে ১৮টি, এবং হোমনায় ১০টি, তিতাসে ৭টি ও মেঘনা থানায় ৪টি মামলা হয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ে আইনি সহায়তা সংস্থা ব্লাস্ট কুমিল্লা ইউনিটের মাধ্যমে গত এগার মাসে যৌতুক, নারী নির্যাতন সংক্রান্ত ৪১৮টি মামলা আদালতে দায়ের করা হয়েছে। থানা ও ব্লাস্টের রেকর্ডের বাইরেও কুমিল্লায় নারী ও শিশু নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটে থাকে। যারা আত্মসম্মানের কথা ভেবে বা সামাজিক লজ্জায় আইনের দ্বারস্থ হন না। কুমিল্লার সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, আইনজীবী, নারী সংগঠক ও আইনি সহায়তা সংস্থার কর্মীদের মতে, সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতাই নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠছে। আবার এ ধরনের মামলার দুর্বল তদন্ত ও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ায় বা কঠোর সাজা না হওয়ায় নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতামূলক অপরাধ প্রবণতা বেড়ে চলছে।
এদিকে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজারে দাঁড়িয়েছে। ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, এখানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল মাত্র একটি। তারপরও আগের তুলনায় গত এক বছরে মামলা নিস্পত্তির সংখ্যা অনেকে বেড়েছে। বিচার প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তিও অনেকাংশে কমেছে। বিশেষ করে প্রতি কার্যদিবসেই ট্রাইব্যুনালে ৩/৪টি পিটিশন দায়ের হচ্ছে। তার ওপর থানায় দায়ের করা মামলা তো রয়েছেই। সব মিলে মামলা যেমন বাড়ছে ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তির হারও বাড়ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ