পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্যাংকিংখাতে পাহাড়সম খেলাপি ঋণ, সুদহার নিয়ে নানান সমীকরণের মধ্যে চলছে ব্যাংকব্যবস্থা। সরকারের কাছ থেকে নানামুখী সুবিধা নিয়েও হচ্ছে না অবস্থার উত্তরণ। এর মধ্যেও ভালো করছিল ব্যবসা করছে ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো। কিন্তু একটি গোষ্ঠীর কাছে দেশের কয়েকটি ইসলামী ধারার ব্যাংক চলে যাওয়ায় সঙ্কটে পড়েছে দেশের ওইসব ব্যাংকগুলো। বিশেষ করে দেশের বিতর্কিত শিল্প গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ৫ ইসলামী ব্যাংকের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক অস্থিরতায় এই গ্রুপের ব্যাংকগুলোর আমানত প্রতিদিন কমছে। আর ব্যাংকগুলো নগদ সঙ্কট থেকে উত্তরণে ইতিমধ্যে ‘ইসলামিক ব্যাংক লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি’র অধীনে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এরমধ্যে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকিয়ের সঙ্গে জড়িত আরেক ইউনিয়ন ব্যাংক গত মঙ্গলবার ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। পরের দিন বুধবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক আরও ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। যদিও গত বৃহষ্পতিবার ৫৯০ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো। গত বৃহস্পতিবার ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর নিট ধার নেমে এসেছে ৪ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকায়। গত মঙ্গল ও বুধবার দুইদিনে ৫টি ইসলামী ব্যাংক ৫ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ধার নিয়েছিল। তবে ব্যাংকগুলোতে এখনো লিকুইডিটি স্ট্রেস রয়ে গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া ইসলামী ধারার অনেক ব্যাংক থেকেই গ্রাহকদের টাকা তোলার প্রবণতা বাড়ায় ব্যাংকগুলোর ডিপোজিট আগের তুলনায় কমছে বলে জানিয়েছেন কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বেশ কয়েক বছর যাবৎ ব্যাংকিং খাতে এক ধরনের প্রভাব তৈরি করা হয়েছে। একটা চাপ তো আছেই। আমার সময়েও চাপ ছিল, কিন্তু সেটা নিয়ে আমরা কথা বলতাম, আলোচনা করতাম। ব্যাংকিং খাতে আসলে সুশাসন নেই। ব্যাংকারদের সংগঠনগুলোও নানারকম লবি করে, স্টেটমেন্ট দেয়। তাদের কারণেও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রভাবিত হয়। আর রাজনৈতিক ইস্যু তো আছেই। রাজনৈতিক কানেকশন আছে, তারা নানাভাবে সুবিধা পায়। আসলে বাংলাদেশের ব্যাংক যে পুরোপুরি পেশাদারিভাবে চলে, ফাইন্যান্সিয়াল ডিসিপ্লিন কঠোরভাবে পালন করে, সেটা আমি বলবো না। সেখানে একটা দুর্বলতা আছে, আর সে কারণেই বড় ধরণের অনিয়ম ঘটছে ড. আহমেদ। তিনি বলেন, বাজার প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জে টিকে থাকতে প্রচলিত ধারার অনেক ব্যাংক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে যাচ্ছে। কারণ, ইসলামি ব্যাংকগুলোতে স্বেচ্ছায় অনেক আমানত আসে। ধর্মপ্রাণ অনেকে এ ধারার ব্যাংকে লেনেদেনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ জন্য আমানতকারীরা দর-কষাকষি করেন না। তাদের বেশির ভাগই একটি ব্যাংকে আমানত রেখেই খুশি থাকেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটি নেয়া ইসলামী ধারার একটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান ইনকিলাবকে বলেন, গত কয়েকদিনে আমাদের কাছে থাকা কিছু কর্পোরেট ডিপোজিটের টাকা তোলা হয়েছে। তাই সামগ্রিকভাবে ডিপোজিট আগের তুলনায় কমেছে। গত বৃহষ্পতিবার একদিনেই সব প্যারামিটারে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা ইসলামী ব্যাংক থেকেই প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করেছে গ্রাহকরা। ইসলামী ধারার বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলো থেকেই গ্রাহকের টাকা তোলার প্রবণতা বেড়েছে।
কারণ হিসেবে এস আলম গ্রুপের ৫টি ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, গত মাস নভেম্বরেই ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে কোম্পানি খুলে এস আলম গ্রুপ তিন ব্যাংক থেকে সন্দেহজনক ঋণ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক থেকে নভেম্বরেই তুলে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। অবশ্য ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ এ পর্যন্ত ঋণ পেয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা, যদিও তাদের সর্বোচ্চ ২১৫ কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার কথা। আর বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সন্দেহ, এস আলম গ্রুপ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ব্যাংকগুলো থেকে নিজ প্রতিষ্ঠান ও তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে-বেনামে সব মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বেশিরভাগই ইসলামী ব্যাংক থেকে নেয়া।
গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) মহাব্যবস্থাপকের কাছে ইউনিয়ন ব্যাংকের চট্রগ্রামের জুবিলী রোড শাখা থেকে ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে কোম্পানির নাম ব্যবহার করে হিসাব খুলে বড় অঙ্কের ঋণ নেয়ার অভিযোগ আসে। অভিযোগটি তাৎক্ষনিক বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগে পাঠানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ওই বিষয়টি আর আলোর মুখ দেখেনি। যদিও ওই সময়ে ইউনিয়ন ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ইনকিলাব থেকে যোগাযোগ করলে তিনি জেনে জানাবেন উল্লেখ করলেও পরবর্তীতে আর এ বিষয়ে কথা বলেননি।
এস আলম নিয়ন্ত্রণাধীন এসব ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো সঙ্কটে থাকার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিটের দায়িত্বে থাকা এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক বছরে ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক যা বর্তমানে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মালিকানায় এসেছে। এসব ব্যাংকের অনিয়মের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিটি রিপোর্টেই উঠে এসেছে।
সূত্র মতে, ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে কোম্পানির নাম ব্যবহার করে এস আলম গ্রুপের বড় অঙ্কের ঋণ জালিয়াতির বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তাই আদালত ইসলামী ব্যাংক থেকে এই ঋণ নেয়ার ব্যাপারে রিট করতে বলেছেন। একই সঙ্গে এখন থেকে ঋণগ্রহীতার নাম ও ঠিকানা ব্যাংকগুলোকে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত শুরুর কথা বললেও ঋণ জালিয়াতির বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সরকারও এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। আর যে প্রতিষ্ঠানটি এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত সেই এস আলম গ্রুপও মুখ খুলছে না।
সূত্র মতে, ঋণ প্রদানের অনিয়মের অভিযোগের ওঠার পর থেকেই গ্রাহকরা শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ধারার এই ব্যাংকগুলো থেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো চাপ ও তারল্য সঙ্কটে পড়েছে। যদিও ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুল মাওলা সম্প্রতি বলেছেন, সব প্যারামিটারে শক্তিশালী অবস্থানে আছে ব্যাংকটি। ঋণ-আমানত, রেমিট্যান্স যে কোনো বিচারে শক্তিশালী অবস্থানে আছে ইসলামী ব্যাংক। তাই ব্যাংক নিয়ে গ্রাহকদের আস্থার কোনো সঙ্কট নেই এমনটাই দাবি এমডি’র।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে ৬১ ব্যাংকের মধ্যে এখন ১০টি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক রয়েছে এবং চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ব্যাংকিং সেক্টরের আমানতের ২৬ দশমিক ১৯ শতাংশই ওই ব্যাংকগুলোতে হয়েছে। ব্যাংকগুলো হলোÑ ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, আল-আরাফাহ্, এক্সিম, শাহজালাল, স্ট্যান্ডার্ড ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইসলামী ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৮২৯ কোটি টাকায়। ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও, বেশ কয়েকটি প্রচলিত ব্যাংকও আমানতকারীদের আকৃষ্ট করতে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং পরিষেবা চালু করেছে। এস আলম গ্রুপের ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর কারণে অন্যান্য ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোও সঙ্কটে পড়েছে বলে সংশ্লিস্টরা জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।