Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কালো মেঘ

| প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল ইসলাম, মালয়েশিয়া থেকে ফিরে : স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়া পনেরটি সোর্স কান্ট্রি থেকে দেদারসে কর্মী আমদানী করছে। দশ সিন্ডিকেট চক্রের অপতৎপরতায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কালো মেঘ এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে। সিন্ডিকেট চক্রের অপতৎপরতার দরুন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের পর্দা উঠেছে না। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে মনোপলি ব্যবসা শুরু হলে অভিবাসন ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে এবং প্রবাসী কর্মীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রতারণার ফাঁদে পড়বে। এতে শ্রমবাজারে নতুন করে নৈরাজ্য দেখা দেবে। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ একাধিক নির্ভর যোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। গত ৫ ডিসেম্বর সুপ্রীম কোর্টের হাই কোটের একটি বেঞ্চে রীটের শুনানী শেষে বিচারপতিগণ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে কেন দশ সিন্ডিকেট মনোপলি  ব্যবসা করবে এবং সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সুযোগ পায় তা’ নিশ্চিত করে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পররাষ্ট্র সচিব, প্রবাসী সচিব, বাণিজ্য সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে দশ জনে মনোপলি ব্যবসা করার চেষ্টা করায় বায়রার মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনকে কেন অপসারণ করা হবে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর অব ট্রেড অর্গানাইজেশনকে শো’কজ করেছেন। এনিয়ে জনশক্তি রফতানিকারকদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে দশ সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধ এবং সকল রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে কর্মী প্রেরণের সুযোগ পায় তা’ নিশ্চিতকরণে আদালতে রীট দায়ের করেন গুলশানস্থ মেসার্স ইউনাইটেড এক্সোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম রফিক।  গত মাসে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পর্যায়ের সর্বশেষ  বৈঠক হবার পরেও মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পুত্রাজায়ায় ইমিগ্রেশনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে নব্য সোর্স কান্ট্রি বাংলাদেশসহ ১৬টি সোর্স কান্ট্রি থেকে কর্মী আমদানীর এপ্রুভাল ইস্যু হচ্ছে দেদারসে। এসব এপ্রুভালের অনুকূলে লেভিও পরিশোধ করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় বেষ্টিনেট সংস্থার মাধ্যমে সোর্স কান্ট্রিগুলো কর্মী পাঠাচ্ছে নির্বিঘেœ। কিন্তু বাংলাদেশ সোর্স কান্ট্রি অন্তর্ভুক্ত হয়েও কেন বেষ্টিনেট সংস্থার মাধ্যমে কর্মী প্রেরণের সুযোগ না পেয়ে বিতর্কিত সিনারফ্লক্স-এর অনলাইনের মাধ্যমে কর্মী পাঠাতে সম্মত হয়েছে। দশ সিন্ডিকেট চক্র বিতর্কিত সিনারফ্লক্সের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় চড়া অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এতে জনশক্তি রফতানিকারকগণ ও মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীরা চরমভাবে ক্ষুব্ধ।
কুয়ালালামপুরের জালান কাম্পাং পানডানস্থ এসএনটি ইউনিভারসেল কর্পোরেশন এসডিএন বিএইচডি ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম বাবুল রোববার ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, মালয়েশিয়ায় বেষ্টিনেট কোম্পানীর মাধ্যমে ১৫টি সোর্স কান্ট্রি থেকেই স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী আসছে। বাংলাদেশও সোর্স কান্ট্রির মর্যাদা লাভ করেছে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়  (কেডিএন) নতুন সোর্স কান্ট্রি বাংলাদেশ থেকেও কর্মী আনার এপ্রুভাল দিচ্ছে। তিনি বলেন, কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্তৃপক্ষ এসব কর্মী নিয়োগের এপ্রুভালে সত্যায়ন দিচ্ছে না কেন তা’ বোধগম্য নয়। এক প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, সকল সোর্স কান্ট্রিই এফডব্লিউ সি’র বেষ্টিনেট কোম্পানীর অনলাইনের মাধ্যমেই নির্বিঘেœ কর্মী আনছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সোর্স কান্ট্রি হয়েও বেষ্টিনেট কোম্পানীর মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর সুযোগ না নিয়ে কার স্বার্থে বিতর্কিত সিনারফ্লাক্সের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণের চুক্তি করেছে তা’ খতিয়ে দেখা উচিৎ। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী। কোনো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি শুরু হলে প্রবাসী কর্মীরা প্রতারিত হবে। সম্প্রতি কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনার মোঃ শহিদুল ইসলাম তার দপ্তরে ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে প্রচুর বাংলাদেশী কর্র্মীর চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় অনলাইনের মাধ্যমে কর্মী প্রেরণের লক্ষ্যে উভয় সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী আসা শুরু হলে কর্মীরা পূর্বের ন্যায় প্রতারণার শিকার হবে না। দীর্ঘ আট বছর আগে মালয়েশিয়ায় চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত কর্মী এনে ব্রিজের নীচে অনাহারে অনিদ্রায় কষ্ট দেয়া হয়েছিল। সেল্টার হোম খুলেও বাংলাদেশী কর্মীদের আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। হাই কমিশনার বলেন, এখন যারাই মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের সুযোগ পাওয়ার দাবী তুলছে তারা কর্মী পাঠানো সুযোগ পেলে আবার কর্মীদের ব্রিজের নীচে এবং এখানে সেখানে ফেলে রাখবে। এতে দেশের সুনাম ক্ষুণœ হতে পারে।
কুয়ালালামপুরস্থ সিভিক ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এসডিএন বিএইচডি’র স্বত্বাধিকারী ও আওয়ামী লীগ মালয়েশিয়া শাখার নেতা রাশেদ বাদল ইনকিলাবকে বলেন, দশ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হলে প্রবাসী শ্রমজীবী, পেশাজীবী এবং ছোট মাঝারী প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের মাঝে দুর্ভোগ নেমে আসবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী পাঠাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু সিন্ডিকেট চক্র মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির মনোপলি ব্যবসার সুযোগ পেলে প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের জীবনের ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে এবং কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। পেনাংস্থ বিএম ফ্লাই ট্যুর এন্ড ট্রাভেল এসডিএন বিএইচডি ও পারডেস ক্লিনিং এন্ড সার্ভিসেস এসডিএন বিএইচডি’র পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বাংলাদেশী কর্মীদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে যোগ্য বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী প্রেরণের সুযোগ দিতে হবে। অন্যথায় মালয়েশিয়ার সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার অন্য দেশে চলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তিনি মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কারাগারে আটককৃত বাংলাদেশী কর্মীদের আইনী সহায়তা দিয়ে মাত্র ৪ শ’ রিংগিটের বিনিময়ে আউট পাস দিয়ে দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান। প্রবাসী কর্মীদের ৪শ’ রিংগিটের পরিবর্তে জনপ্রতি ৯শ’ ৬৫ রিংগিট নেয়ার বিষয়টি রহিতকরণে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হাই কমিশনারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মালয়েশিয়া

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ