Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মুরগির বিষ্ঠায় মাছ চাষ : কটিয়াদীতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

এম এ কুদ্দুছ, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে পোল্ট্রি ফার্মের নিচে মাছের খামার করে মুরগির বিষ্ঠা দিয়ে মাছ চাষ করেছেন খামারিরা। মাছের খাদ্য হিসেবে মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পোল্ট্রি ফার্মের নিচে চাষ করা হচ্ছে মাছ।
মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মুরগির বিষ্ঠা। মুরগির বিষ্ঠায় জীবাণুু থাকায় মাছের রোগবালাই বেড়ে যায়। বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বাণিজ্যিক ও সমন্বিত খামারের মাছের প্রধান খাদ্য হচ্ছে মুরগির বিষ্ঠা। উপজেলার মৎস্য চাষের খামারগুলোতে মাছের প্রধান খাদ্য হিসাবে ব্যবহারিত হচ্ছে বিষ্ঠা। বিভিন্ন মুরগির খামার থেকে বিষ্ঠা সংগ্রহ করে ফেলা হয় পুকুরে।
জানা যায়, মাছের খাদ্যমূল্য অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় এখন আর আগের মতো পুষিয়ে উঠতে পারছে না মৎস্য চাষিরা। ফলে মাছের খাদ্য হিসেবে মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করছেন তারা। এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর মাধ্যমে উপজেলাসহ আশপাশের এলাকার মুরগির খামারগুলো থেকে বিষ্ঠা সংগ্রহ করে আনছে স্থানীয় মৎস্য চাষিরা। কম দামে পাওয়া ওই বিষ্ঠা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও মাছের খাদ্য হিসেবে খামারে তা ব্যবহার করছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানা যায়, উপজেলায় ২ হাজার ১৭০ জন মৎস্য চাষি রয়েছে এর মাঝে ৫২টি বাণিজ্যিক মৎস্য খামারে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ হয়। খামারগুলিতে বছরে উৎপাদন হয় প্রায় ৫ হাজার ৩৫৪ মে.টন মাছ। উপজেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে ৬ হাজার ৮৮৮ মে. টন। ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৫৩৩ মে.টন মাছ।
উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন জানান, মুরগির বিষ্ঠায় অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিও, ড্রাগ রেজিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজিজ ইনফেকট্যান্ট থাকে। মাছের খাদ্য হিসেবে মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করে চাষ করার মাছ খাওয়ার পর সেগুলো মানবদেহে প্রবেশ করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাছাড়া মুরগির বিষ্ঠায় থাকা অতিরিক্তি ক্যালসিয়াম, ফসফরাস পুকুরের পরিবেশ নষ্ট করে। অপরদিকে এই উপাদানগুলো পানিতে অক্সিজেনের স্বল্পতা ঘটানোর মাধ্যমে মাছের স্বাস্থ্যের ক্ষতি ও রোগব্যাধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই সব খামারে মাছের রোগ বালাই দেখা দিলে কোন ওষুধে কাজ করে না। মৎস্য চাষিদেরকে মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার না করে মাছ চাষ করার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা সেমিনারে মাধ্যমে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরো জানান, এলাকার বিত্তবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি দ্বারাই এই খামারের ব্যবসা চলছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উসমান গণি বলেন, মৎস্য খামারের ওপরে পোল্ট্রিফার্ম স্থাপন করে মুরগির বিষ্ঠার মাধ্যমে উৎপাদিত মাছ স্বাস্থ্যকর নয়। এ জন্য মৎস্য খামারের ওপর কোন পোল্ট্রি ফার্মের অনুমোদন দেয়া হয় না। তারপরেও বেশির ভাগ খামারে মাছের খাদ্য হিসেবে বিষ্ঠার ব্যবহার করার জন্য পোল্ট্রি ফার্ম তৈরি করা হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাজরিনা তৈয়ব বলেন, মুরগি পালনে নানা রকম অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। যেগুলো বিষ্ঠার মাধ্যমে মাছের শরীরে প্রবেশ করে। এগুলো ধ্বংস হয় না। এই সব খামারের মাছ খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে রোগজীবানু প্রবেশ করে। যা মানব দেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর। বিশেষ করে কিডনি ও লিভারের বেশি ক্ষতি করে। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষ্ঠা ব্যবহার বন্ধে জনপ্রতিনিধি, সমাজ সচেতন মানুষসহ সবাইকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ