Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে আওয়ামী লীগে ক্ষোভ-অসন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:১২ এএম

ঢাকায় কর্মরত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বক্তব্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের মন্ত্রী, এমপি, কেন্দ্রীয় নেতারা এ নিয়ে গত দু’দিন ধরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর নামান্তর। আমরা বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলতে চাই। তাই বিদেশী বন্ধুদের বলছি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে নাক গলাবেন না। শুধু তাই নয় যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার, নির্বাচনে বিতর্ক নিয়েও প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের নেতারা বিদেশী কূটনীতিককে নিজেদের ঘর সামলানোর পরামর্শ দেন।

৭ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ৮ ডিসেম্বর বিবৃতি দেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তিনি বলেছেন, ‘ঢাকায় রাজনৈতিক সহিংসতা ও ভয়-ভীতি দেখানোর খবরে আমরা উদ্বিগ্ন। আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভয়-ভীতি দেখানো থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সবার প্রতি আহŸান জানাচ্ছি।’
রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এ বক্তব্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল দু’টি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, বন্ধুত্বটা নষ্ট করবেন না, আমরা বন্ধু হিসেবে থাকতে চাই। আমরা ৬ জানুয়ারি আমেরিকার (যুক্তরাষ্ট্র) গণতন্ত্রের চেহারা দেখেছি। তাদের নির্বাচন এক পক্ষ মেনে নেয়নি, রেজাল্ট মেনে নেয়নি। ফলস্ প্র্যাকট্রিস নাকি হয়েছে। নির্বাচনী জালিয়াতি বাংলাদেশে শুধু বলা হয় না, এসব শব্দ আমেরিকাতেও ব্যবহার হচ্ছে। পাঁচটা লোক মারা গেছে, কংগ্রেস আক্রান্ত হচ্ছে, ন্যান্সি পেলোসি কিভাবে লুকিয়ে ছিল সেই দৃশ্য আমরা দেখেছি। এত বড় বড় কথা যে বলেন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত বন্ধুত্ব নষ্ট করবেন না। তিনি আরো বলেন, আমরা আপনাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সাথে বন্ধুত্ব চাই। আমাদের অতীতে অনেক বেদনা আছে, ৭৫-এর, ৭১-এর। তারপরও আমরা বন্ধুত্ব চাই। বন্ধুত্ব এভাবে করলে ফাটল ধরবে। সেটায় দু’দেশের কারো লাভ নেই। অহেতুক কেন এসব কথা বলছেন? যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ডেইলি মিস শুট হচ্ছে, সপ্তাহে অত্যন্ত দুইটা। একেকটাতে ৫ জন, ১০ জন করে মারা যাচ্ছে। আপনারা মানবাধিকারে কথা বলেন, আর পুলিশকে সেখানে ধরা হয়েছে তারা যথাসময়ে সিকিউরিটি দেয়নি। দিলে এই ঘটনা ঘটতো না। সিকিউরিটি অনুপস্থিত। আমাদের আদালত পাড়া নিয়ে কথা বলেন, আপনাদের ওখানে কী হচ্ছে? সবাই নিজের চেহারাটা আগে দেখুক।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি ক‚টনীতিকরা একটা সাইডে মোটিভেটেড হয়ে আছে। বাংলাদেশে কোনো ঘটনা ঘটার আগেই সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেয় তারা। একাত্তরে আমরা দেখেছি, তাদের একটা গ্রæপ আছে। যারা কোনোভাবেই আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে ঠিকভাবে দেখেনি। তোমার দেশের (যুক্তরাষ্ট্র) কোনো কিছু নিয়ে তো আমরা নাক গলাই না, অনেক কিছুই তো ঘটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের সময়ও অনেক গন্ডগোল হয়েছে, আমরা নাক গলাইছি? বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে নাক গলাইও না। এখানকার রাজনীতি জনগণই নির্ধারণ করবে।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে সতর্ক করে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এ ধরণের বক্তব্য থেকে বিরত থাকুন। কানাডার আদালত বলেছে ‘বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। বিএনপির কোনো সদস্যকে কানাডায় আশ্রয় দিতে পারি না’। সে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে একজন রাষ্ট্রদূত বিবৃতি দিয়েছেন। আমি জিজ্ঞাসা করি রাষ্ট্রদূতকে, কোন ক‚টনৈতিক আচার আচরণে, রীতিনীতিতে আপনারা একটি দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিবৃতি দিলেন? এটি আপনারা দিতে পারেন না। এ ধরনের বিবৃতি ভবিষ্যতে দেবেন না।
পিটার হাসের বিবৃতি ইস্যুতে গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ঢাকায় লাশ পড়লে ওয়াশিংটন আগে খবর পায়। ওরা লাশ দেখতে চায়। তারা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) যেটা চায় যেকোনও সংঘাত না হোক, আমরাও (সংঘাত) চাই না। উই উইল মেইনটেইন মেক্সিমাম রিস্ট্রেইন। তবে আমেরিকায়ও রাস্তায়, হোয়াইট হাউজের সামনেও বড় জনসভায় আমেরিকান সরকার রাজি হবে না। নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের রাস্তায় সভা করার ক্ষেত্রে দে উইল নট অ্যালাউ। দেয়্যার ইজ অ্যা রুল, সিস্টেম। আমরা আমাদের পথচারীদের বাধা দিতে চাই না, বিঘœ দিতে চাই না। তারা (বিএনপি) ডেমোনস্ট্রেশন করতে চান, সম্মেলন করতে চান। নিশ্চয়ই হলের ভেতরে করতে পারেন, মাঠের মধ্যেও করতে পারেন। গভর্নমেন্ট ইজ উইলিং, কারণ বাংলাদেশের সব লোকের কথা বলার অধিকার আছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলির সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এভাবে অন্য দেশের রাজনীতি নিয়ে নাক গলাতে পারেন না। এটা মেনে নেয়া যায় না।



 

Show all comments
  • salman ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৪০ এএম says : 0
    VISAR jonno to Jaiya Paa dhoro. Bepod ashse, Usa jabar Visa kintu paba na..sabdhan
    Total Reply(0) Reply
  • Parvez Talukdar ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৩৩ এএম says : 2
    মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নিষেধাজ্ঞার আরোপ করা দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • Noym Uddin ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৩৩ এএম says : 0
    আওয়ামী লীগ শুধু ভারতের লোকদের কথাতেই সন্তুষ্ট!!
    Total Reply(0) Reply
  • Mahafuz Alam ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৩৩ এএম says : 0
    গরম ভাতে বিড়াল সবসময় বেজার থাকে, তদুপরি উচিৎ কথায় ভোট চোর আওয়ামী লীগ নাখোশ হবেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shahab Uddin ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৩৪ এএম says : 0
    মানবাধিকার লঙ্ঘন কারীদের মাঝে অসন্তোষ থাকাটা স্বাভাবিক।
    Total Reply(0) Reply
  • ShahRukh Ahmed Rony ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৩৪ এএম says : 0
    সত্য-অসত্যের লড়াইয়ে একটু দেড়িতে হলেও সত্যেরই জয় হয়!
    Total Reply(0) Reply
  • Shahjahan Ahmed ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৩৪ এএম says : 0
    মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের জনগণের মনের কথা বলেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • ShahRukh Ahmed Rony ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৩৪ এএম says : 0
    সত্য-অসত্যের লড়াইয়ে একটু দেড়িতে হলেও সত্যেরই জয় হয়!
    Total Reply(0) Reply
  • Neel Zazabor ১০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৩৪ এএম says : 0
    ১ জন এম্বেসাডার এর অফিসিয়াল বক্তব্য মানে তার দেশের প্রেসিডেন্টের বক্তব্য । ভাবনার বিষয় এখানে ! তার উপর জাতিসংঘও টুন টুন করতেছে! আমাদের প্রধান মন্রীকে গভীর ঠান্ডা মেজাজে সময়টা পার করতে হবে। কারন জাতিসংঘে আমাদের শান্তিরক্ষী মিশন সুনামের সহিত চলমান আছে। বিএনপি কেও এটা মাথায় রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মার্কিন

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ