Inqilab Logo

সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দেশটাকে কি আপনারা লুটেপুটে খেতে চান?

বাস মালিকদের উদ্দেশে হাইকোর্ট শ্যামলী পরিবহনের মালিককে ভর্ৎসনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

শ্যামলী এনআর পরিবহনের মালিক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশকে ভর্ৎসনা করেছেন হাইকোর্ট। তাকে উদ্দেশ করে আদালত বলেছেন, আপনারা আছেন শুধু টাকা কামানো নিয়ে। আসলে আপনারা মানুষের পর্যায়ে পড়েন না। আপনাদের মানবিকতা নেই। আগে মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন। মানবিকতা অর্জন করুন।
গতকাল বুধবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের এবং বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর ডিভিশন বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে স্ত্রীর লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ প্রদান সংক্রান্ত আদালতের নোটিশ রিসিভ না করা এবং আহতদের কোনো ধরনের খোঁজখবর না নেয়ায় হাইকোর্ট শ্যামলী-এনআর পরিবহনের মালিককে এ ভর্ৎসনা করেন।

এর আগে আদালতের তলবে হাজির হন শ্যামলী এনআর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ। আদালত তাকে ডায়াসের সামনে ডাকেন। তাকে উদ্দেশ করে বলেন, আদালতের নোটিশ রিসিভ করেননি কেন? জবাবে রাকেশ বলেন, ওই সময় দেশে ছিলাম না। আমরা জানতাম না।
তখন আদালত বলেন, আপনারা জানতেন না এটা অবিশ্বাস্য। আপনাদের গাড়ির ড্রাইভারের দোষ। তার কারণেই এক্সিডেন্ট হয়েছে। তখন রাকেশ বলেন, গাড়ির ড্রাইভার তো পলাতক।

আদালত এনা পরিবহন প্রসঙ্গে বলেন, এনা পরিবহন যখন রাস্তায় চলে কাউকে পরোয়া করে না। যত্রতত্র গাড়ি চালায়। আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। পরিবহন মালিকরা এত ক্ষমতাশালী যে, কোন ব্যক্তি মারা গেল, কে আহত হলো তা দেখার সময় নেই। পুলিশও আপনাদের নাগাল পায় না। আপনার ড্রাইভারের কারণে এত মানুষ মারা গেলেন, আহত হলেন। অথচ একটু দেখারও সময় পেলেন না। আপনারা আছেন শুধু টাকা কামানো নিয়ে। আপনাদের এত ক্ষমতা যে, যা ইচ্ছে তাই করেন। বাস মালিকরা মিলে দেশটাকে কি লুটেপুটে খেতে চান? পরে আদালত নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসার ব্যয় সংক্রান্ত খরচ নিরুপণ করে আহতদের হস্তান্তর করার জন্য উভয় পক্ষের আইনজীবীকে সমঝোতা করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এক সপ্তাহ পর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত। রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। শ্যামলী এনআর পরিবহনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো: তাজুল ইসলাম ও তারিকুল ইসলাম। বিআরটিএর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম।

এর আগে গত ৭ আগস্ট অ্যাম্বুলেন্সে করে স্ত্রীর লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সবজি বিক্রেতা আয়নালের পরিবারের সদস্য ও আহতদের জন্য ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে সড়ক পরিবহন আইনের অধীনে গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের ফান্ড গঠনে কী অগ্রগতি হয়েছে, তা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বোর্ডের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

প্রসঙ্গত গত ১৫ এপ্রিল ঢাকার রূপনগরের সবজি বিক্রেতা আয়নাল হোসেন তার স্ত্রী ফিরোজা বেগমের লাশ অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন। বগুড়ার শেরপুরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা ব্রিজের পাশে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে আয়নাল হোসেনের মৃত্যু হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্সের চালক দ্বীন ইসলামের (৪৫) মৃত্যু হয়। তার বাড়ি পিরোজপুর জেলার কাউখালী থানায়। এ ঘটনায় আহত হন আয়নাল হোসেনের তিন ছেলে ফরিদ হোসেন (২০), ফরহাদ হোসেন (১৮) ও ফিরোজ হোসেন (২৯)।

অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ঘটনাস্থলে আয়নাল হোসেনের মৃত্যু হয়। পরে মৃত্যু হয় অ্যাম্বুলেন্স চালকের। এ নিয়ে প্রথমে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়। পরে হাইকোর্টের ৭ আইনজীবী রিট করেন। রিটে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য ডলি পারভীনকে ৭০ লাখ ৫০ হাজার, রোজিনা খাতুনকে ৭০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, নিহত আয়নালের তিন ছেলে যথাক্রমে- ফরহাদ হোসেনকে ৮ লাখ টাকা, ফিরোজ হোসেনকে ৫ লাখ টাকা, ফরিদ হোসেনকে ৫ লাখ টাকা, আহত দুলফিজুর রহমান রতনকে ৯ লাখ টাকা এবং ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্স বাবদ পিপল রিনেমেট অ্যান্ড অ্যাডভান্সমেন্ট কাউন্সিলের পরিচালক আব্দুল আলী বাশারের ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশনা চাওয়া হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইকোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ