Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বরিশাল মহানগরীতে প্রতি দিনের ৩শ টন বর্জ্য ফেলার স্থান নেই

পরিবেশ সংকটে মুখে নগরী

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১০:৩৯ এএম

বরিশাল মহানগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ক্রমশ চরম সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। দীর্ঘদিনেও এ নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক ও মানসম্মত দুরের কথা, লাগসই বা পরিবেশ অনুকুল ব্যবস্থায় নেয়ার লক্ষ্যেও তেমন কোন কর্ম পরিকল্পনা বাস্তায়ন হয়নি। এখনো দীর্ঘদিনের পুরনো ‘ময়লা খোলা’ এলাকায় প্রতিদিন ৩ শতাধিক টন বর্জ্য অপসারন করা হলেও তা ‘মোটেই স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বান্ধব নয়’ বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে। এমনকি গোটা মহানগরীর বর্জ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে পুরো ব্যবস্থাপনাই অস্বাস্থ্যকর ও পরিবেশ অনুকুল নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে নগর ভবন থেকে ‘আধুনিক ও মানসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে’ বলে জানান হয়েছে। পুরো বিষয়টি সরকারী অর্থ বরাদ্বের ওাপরই নির্ভরশীল।

প্রায় ৬০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বরিশাল মহানগরীর কম বেশী ৪৫ হাজার আবাসিক, অনাবাসিক ও বানিজ্যিক হোল্ডিং থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩শ টনেরও বেশী বর্জ্য এ নগরীর রাস্তাঘাটে জমা হলেও কোন ডাষ্টবীনের অস্তিত্ব নেই। এমনকি গোটা মহনগরীতে সেকেন্ডোরী ডাষ্টবিন আছে মাত্র দুটি। ফলে বিভিন্ন বাসাবাড়ীর লোকজন নগরীর রাস্তার ধারে উন্মুক্তস্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখছে। এমনকি নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা দুপুর থেকে সন্ধা পর্যন্ত নগরীর কিছু বাড়ীঘর থেকে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে রাস্তাঘাটের নির্দিষ্টস্থানে ফেলে রাখার পরে সেখান থেকে গার্বেজ ট্রাকগুলো এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে কাউনিয়া এলাকার ময়লাখোলা বা গার্বেজ স্টেশনে নিয়ে তা অপাসারন করছে।

কিন্তু একদিকে সে গার্বেজ স্টেশন যেমন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মত নয়, অপরদিকে বছরের পর বছর ধরে সেখানে এনগরীর জঞ্জাল জমা করতে গিয়ে এখন আর স্থান সংকুলন হচ্ছে না। ফলে খুব দ্রæত নতুন গার্বেজ স্টেশন চালু না করলে এনগরীর বর্র্জ্য অপসারনের আর কোন জায়গা খুজে পাওয়া যাবে না। এমনকি এনগরীতে ভয়াবহ পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটার আশংকাও করছেন পরিবেশবীদ সহ পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল।
এসব বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ডাঃ রবিউল-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন মহলের উদ্বেগের বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে জানান, জঞ্জাল নিয়ে নগর ভবনও যথেষ্ঠ সচেতন। পুরেনা গার্বেজ স্টেশনটির সর্বোচ্চ ব্যবহারের পাশাপাশি তা যতটা সম্ভব স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মতভাবে ব্যবহারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি নগরীর চরবাড়িয়া এলাকায় বর্জ্য অপসারনে নতুন ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এলক্ষ্যে ৭ একর জমি হুকুম দখল সহ ভ’মি উন্নয়ন ও সীমানা প্রচীর নির্মানে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্ব চেয়ে মন্ত্রনালয়ে একটি ‘প্রকল্প-প্রস্তাবনা’ প্রেরন করা হয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্ব পেলে পরবর্তিতে এখানে অত্যাধুনিক একটি বর্জ্য অপসারন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কথাও জানান তিনি।

তবে নতুন এ গার্বেজ স্টেশন স্থাপনে কত সময় লাগতে পারে সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে না পারলেও তহবিলের সংস্থানের ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে জানান তিনি।

এদিকে নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সহ নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৯শ পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজ সহ তার তত্বাবধান নিয়েও নগরবাসীর মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। অতি সম্প্রতি ঘূর্নিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে ১৬ ঘন্টায় এ নগরীতে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পরে গোটা মহানগরী ৩ ফুট থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত পানির তলায় চলে যায়। এমনকি নগরীর পাশে প্রবাহমান কির্তনখোলা নদীর পানি বিপদ সীমার নিচে নেমে যাবার ৪৮ ঘন্টা পরেও জলাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি এ নগরী। নগরীর ১৬১ কিলোমিটার পাকা ড্রেনের বেশীরভাগেরই তিন-চত’র্থাংশ পর্যন্ত ভড়াট হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এসব ভড়াট ড্রেনগুলো বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থায় থাকলেও পরিস্থিতির তেমন কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। ঘন্টায় ৫ মিলি বৃষ্টিহলেই নগরীর নবগ্রাম রোডের বটতলা বাজারের পশ্চিম থেকে হাতেম আলী কলেজ পর্যন্ত সড়কটি প্লাবিত হচ্ছে। এমনকি সারা বছরই ঐ সড়কের পাশের ড্রেনটির পানি মূল সড়কে ছুয়ে থাকলেও তা থেকে উত্তরনের কোন পদক্ষেপ নেই। আরো খারাপ অবস্থা নগরীর কাঁচা ড্রেনগুলোর।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে ভঙ্গুর পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে এ মহানগরীর সুস্থ নাগরিক জীবন বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে বলেও শংকা প্রকাশ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবেশবীদগন। অপরদিকে নগরীর ৭টি মজা খাল খননে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরফ থেকে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্ব দেয়া হলেও এক অদৃশ্য শক্তির অঘোষিত বাঁধায় দরপ্রস্তাব গ্রহনের ছয়মাস পরেও কাজ শুরু হয়নি। ফলে আগামী বর্ষায় এ নগরীতে জলাবদ্ধতা আরো প্রকট আকার ধরন করার শংকার কথা বলেছেন পরিবশে ও নগর বিজ্ঞানীগন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ