রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
নুরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে : চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পৌরশহর দর্শনা। এখানে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ চিনিকল, ডিস্টিলারি, রেলবন্দর, কাস্টমস্ চেকপোস্ট, আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনসহ দুটি রেলস্টেশন, পাইকারি কাঁচাবাজার, ডজনখানেক ছোটবড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় শতাধিক সরকারি-বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠান। সরকার প্রতি বছর এখান থেকে বিভিন্ন খাতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকলেও এ শহরটির উন্নয়নের ব্যাপারে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। বর্তমানে শহরের কেন্দ্রস্থলের একমাত্র রাস্তা দর্শনা-মুজিবনগর সড়কের দর্শনা বাসস্ট্যান্ড থেকে রামনগর পর্যন্ত ৩ কি.মিটার রাস্তা এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। আগের তুলনায় বর্তমানে এ সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীর সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেলেও সেই তুলনায় বাড়েনি সড়কের প্রশস্ততা। সম্প্রতি রাস্তার প্রশস্ততা কিছুটা বাড়লেও রাস্তার কিনারা ঘেঁষে অবস্থিত দোকানপাটের মালামাল, সাইনবোর্ড, পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি থাকায় পথচারী ও ছোটখাটো যানবাহন চলাচলের জন্য কোনো জায়গা নেই। যানবাহন আসার সময় একজন পথচারী রাস্তার ধারে সরে দাঁড়াবে তারও উপায় নেই। বর্তমানে শহরের জনগুরুত্বপুর্ণ এ সড়কটি জুড়েই বাস-ট্রাক টার্মিনালে পরিণত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটসহ আন্তঃজেলা ও ঢাকাগামী পরিবহনগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই জনগুরুত্বপুর্ণ সড়কে দাঁড়িয়ে থাকায় অন্যান্য যানবাহন, পথচারীসহ শহরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে মিলগেট থেকে পুরাতন বাজার রেলগেট পর্যন্ত রাস্তা অলিখিত বাসটার্মিনালে পরিণত হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে। এসব স্থানে যানজটের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ৫-৬ বছরে এ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছে ২ জন শিশুসহ ৭ জন। এছাড়াও দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহত হয়েছেন অনেকে। গত বছর ১৪ ডিসেম্বর ব্যাংকের সামনে মোটরসাইকেল ও পাওয়ারটিলার ধাক্কায় নবম শ্রেণীতে পড়–য়া এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়। এর ঠিক এক বছরের মাথায় একই কায়দায় গত ১২ ডিসেম্বর সড়কের জেআর পরিবহনের কাউন্টারের সামনে আখবোঝাই ট্রাক্টর ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে তালহা (৩২) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ সড়কের ধারেই রয়েছে ২টি সরকারি প্রাইমারি স্কুল, ২টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, ১টি হাইস্কুল ও একটি মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও পার্শ¦বর্তী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ সড়ক দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত তাদের অভিভাবকরাও থাকেন চরম উৎকণ্ঠায়। এ রাস্তার ধারে অবস্থিত ১৫-১৬টি পরিবহন সংস্থার কাউন্টার থেকে রাত-দিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, বরগুনাগামী অর্ধশতাধিক যাত্রীবাহী বাস রাস্তায় দাঁড়িয়ে যাত্রী ও মালামাল উঠানো নামানো করে থাকে। এ সড়ক দিয়ে দর্শনা রেলবন্দরে আমদানিকৃত শত শত পণ্যবাহী ট্রাক দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। এছাড়া প্রতিদিন এ সড়কে অসংখ্য ট্রাক, ট্রাক্টর, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, নসিমন, করিমন, আলমসাধু, লাটাহাম্বার, মোটরসাইকেল, সাইকেল, ভ্যান, রিকশাযোগে ও পায়ে হেঁটে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। প্রতিদিন দর্শনা রেলবাজারের পাইকারি কাঁচাবাজার থেকে শাকসবজি এবং সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার পার্শ্ববর্তী ডুগডুগি ও শিয়ালমারী হাটে গরু বোঝাই শত শত ট্রাক, পাওয়ারটিলার ও লাটাহাম্বার চলাচল করে। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৫ মাস খুলনা, যশোরসহ দক্ষিণাঞ্চলের আটটি জেলা থেকে প্রতিদিন বাস, ট্রাকসহ নানারকম যানবাহনে করে হাজার হাজার মানুষ এ রাস্তা দিয়ে বনভোজন বা শিক্ষা সফর করার জন্য মুজিবনগর যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়া ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মালবাহী ট্রাক এসে মেইন রোডের ওপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে মালামাল খালাস করেন। কেরু চিনিকলের মাড়াই মৌসুমে এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে আখ বোঝাই শত শত গাড়ি। ফলে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী হাজার হাজার মানুষসহ রাস্তার দু’পাশের ব্যবসায়ীরা সর্বক্ষণ থাকেন আতঙ্কে। বিশেষ করে কেরু চিনিকলের মাড়াই মৌসুমে মিলগেটে প্রায়ই অতিরিক্ত আখের গাড়ি ভিড় করায় এ স্থানটি যানজট লেগেই থাকে। যানজটের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে চিনিকল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেন না। এ সড়কে চলাচলকারী যানের মধ্যে অবৈধযানের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। সম্প্রতি এসবের সাথে যোগ হয়েছে মোটরচালিত দ্রুতগতির পাখিভ্যান। এসব অবৈধযান ও পাখিভ্যানের বেশিরভাগ চালকই অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ। তারা রাস্তায় চলার কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই রাতদিন বীরদর্পে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। এ অবৈধযানগুলো জনদুর্ভাগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ালেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। এদিকে হাজিপাড়া থেকে রেলবাজার পর্যন্ত রাস্তার এক পার্শ্বে কেরু চিনিকলের সীমানায় রাস্তার ধার ঘেঁষে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে শত শত দোকানপাট। যার কারণে সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। অনেকে বলেন, চিনিকল কর্তৃপক্ষ যদি রাস্তার জায়গা বাদ দিয়ে তাদের সীমানার মধ্যে ফাঁকা জায়গায় দোকান তৈরি করে লিজ বা ভাড়া দেয় তবে একদিকে যেমন কেরু এলাকার সীমানা জঞ্জালমুক্ত হয়ে কোম্পানির আয় বাড়বে অপরদিকে শত শত ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘেœ এসব দোকানে ব্যবসা করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে এ রাস্তার সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে, দর্শনা বাসস্ট্যান্ড, কেরুজ মিলগেট (আমতলা), আখের গাড়ির গেট, হীরা সিনেমা হলের সামনে, রেলবাজার বটতলা ও ব্যাঙ্কের সামনে, অংকুর কেজি স্কুল ও কাঁচাবাজারের সামনে, পুরাতনবাজার রেলগেট, পুরাতনবাজার ভিআইপি মোড় ও হাটের মোড় এবং রামনগর মোড়। এসব স্থানে রাস্তার ধার ঘেঁষে দোকানপাট থাকায় সেইসাথে মানুষজন ও যানবাহনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় রাস্তায় চলাচল করা খুবই বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। দর্শনার অংকুর কেজি স্কুলের প্রিন্সিপাল হাফিজুর রহমান বলেন, স্কুল শুরুর আগে ও ছুটির পরে আমি প্রায়ই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাস্তা পারাপারে সহায়তা করে থাকি। বর্তমানে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষ করে স্কুলগামী ছোট ছোট শিশু ও বয়স্কদের জন্য রাস্তা পারাপার খুবই বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। যানবাহন ও মানুষের নিরাপদে চলাচল নিশ্চিত করতে দুইধার অবৈধ দখলমুক্ত করে রাস্তাটি প্রশস্তকরনসহ ফুটপাত নির্মাণ ও রাস্তায় ডিভাইডার স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এব্যাপারে দর্শনা পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমান রাস্তাটির দুরবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, রাস্তাটি প্রশস্ত করে ফুটপাত নির্মাণ ও ডিভাইডার স্থাপন করা প্রয়োজন। রাস্তার সমস্যার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কাজের তালিকায় নিয়েছি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। ইতোমধ্যেই দর্শনা বাসস্ট্যান্ডে ট্রাক ও ঢাকাগামী বাসের জন্য জেলা পরিষদের নিজস্ব জমি ও অর্থায়নে বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। টার্মিনালটির নির্মাণ কাজ শেষে সেখানে ট্রাক-বাস পার্কিংয়ের ব্যবস্থা হলে শহরের যানজট অনেকটাই কমে আসবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।