Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেতুর জন্য লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ

ফেনীর কালিদাস পাহালিয়া নদী

মো. ওমর ফারুক, ফেনী থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ফেনীর কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর দীর্ঘদিন সেতু না থাকায় সদর উপজেলার লেমুয়া-ধলিয়া ইউনিয়ন ও সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে ওই অঞ্চলের জনসাধারণ বিভিন্নভাবে দাবি জানিয়ে আসছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এমপিরা কেবল আশার বাণী শুনিয়ে গেলেন কিন্তু সেতু নির্মাণের বিষয়ে এখানো কোন ধরণের উদ্যোগ না নেয়ায় জনগণ হতাশ।
সরেজমিনে জানা যায়, লেমুয়া ইউনিয়নের ঘাটঘর মিরগঞ্জ ও নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামের মাঝপথে রয়েছে নদী পারাপারের খেয়াঘাট। সেখানে রয়েছে একটি মাত্র নৌকা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষকে খেয়া বয়ে নদী পারাপার হতে হয়। নদীর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী মমতাজ মিয়ার হাট, সেখানে প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার হাটের দিনে অনেক লোকের সমাগম ঘটে। নদীমাতৃক গ্রামঅঞ্চল হওয়ায় সারাবছরই প্রান্তিক কৃষকরা ক্ষেত-খামারে চাষাবাদে ব্যস্ত থাকেন। তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সকাল বিকেল নিয়মিত বাজারে এনে বিক্রি করেন। ওই অঞ্চলটি আবার ফেনী জেলার সর্ববৃহৎ পোল্টি জোন হিসেবে পরিচিত। সেখানে রয়েছে ৩শ’ মুরগীর খামার। নদীর দুই পাড়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০টি স্কুল, মাদরাসা, কিন্ডার গার্ডেন রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় নদী পার হতে হয়। এছাড়াও সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, গর্ভবতি মহিলা, রোগীদেরকে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। বিকল্প সড়ক পথ দিয়ে গাড়িযোগে গন্তব্যে পৌঁছাতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। নদী পথে নৌকায় পার হতে সময় লাগে ১৫ মিনিট। কিন্তু নদীর এই পথে সেতু নির্মাণ হলে মাত্র ১০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব। তাই ওই অঞ্চলের জনসাধারণ কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
দৌলতপুর হক বাহাদুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিহান, সিয়াম, শারমিন, মারিয়া, ছালমা বলেন, আমাদেরকে প্রতিদিন নৌকায় নদী পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। এটা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের। নদী পার হতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীরা নৌকা থেকে পড়ে আহত হয়। আমরা একটি সেতু চাই।
খেয়াঘাটের মাঝি নুরুল আমিন বলেন, আমি ১৮ বছর ধরে নদীর দুই পাড়ের মানুষকে পার করছি। নৌকায় পার হতে গিয়ে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, অসুস্থ রোগী ও গর্ভবতী নারীদের বেশি কষ্ট হয়। তিনি নদীর ওপর দ্রুত সেতু নির্মাণের দাবি জানান।
দৌলতপুর হক বাহাদুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুর নবী বলেন, নদীতে সেতু না থাকায় প্রতিদিন শতশত শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে নৌকা বয়ে পারাপার হয়। এজন্য অনেক ছাত্র-ছাত্রী পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছে। এ স্কুলে এক সময় ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮শ’ থেকে দুই হাজার। বর্তমানে ৭ থেকে ৮শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। নদীর ওপর একটি সেতু হলে শিক্ষার্থীসহ সকলের উপকার হবে।
লেমুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ উদ্দিন নাছিম বলেন, নদীর ওপর সেতু নির্মানের প্রক্রিয়া ফাইনাল হয়ে আছে। আশা করছি কর্তৃপক্ষ দ্রুত কাজ শুরু করবেন।
সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। বর্তমানে ব্রিজের হাইড সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বিষয়টি আটকা পড়ে আছে। এ বিষয়ে ফাইনাল অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. মনির হোসেন বলেন, কালিদাস পাহালিয়া নদীর ওপর ১০০ মিটারের একটি আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা হেডঅফিসে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব সহসায় সেখানে একটি সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ার অনুমোদন হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ