Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বড়াইগ্রামে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

বড়াইগ্রাম (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বড়াইগ্রামের কুশমাইল সংগ্রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সভাপতিসহ কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা ও সহকর্মীদের সাথে ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের অভিযোগ উঠেছে। এতে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ব্যাহতের পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। গত রোববার বিকেলে এসব অভিযোগে জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যসহ স্থানীয়রা।
লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক সোহেলী পারভীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে কাজ না করেই সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এমনকি কাগজে-কলমে সিøপ কমিটি এবং সামাজিক মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে সদস্যদের জাল স্বাক্ষরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে রেজুলেশন করেছেন। অথচ এসব ব্যক্তিরা যে ওই কমিটির সদস্য এটাও তারা জানেন না। এভাবে প্রধান শিক্ষক নাম মাত্র কাজ করে বা কখনও না করেই ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্পের দুই লাখ টাকাসহ গত চার বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। একই সঙ্গে শিক্ষকদের সঙ্গে রুঢ় আচরণ করাসহ নানা গর্হিত কর্মকান্ডের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন রিক্তা বলেন, ২০২০ সালে স্কুলে ক্ষুদ্র মেরামত প্রকল্পের দুই লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। সে সময় আমি সভাপতি থাকলেও প্রধান শিক্ষক বিষয়টি আমাকে বলেননি। এমন কোন কাজও তখন করা হয়নি। কিন্তু এখন জানতে পারছি যে, আমার স্বাক্ষর জাল করে সব টাকার কাজ হয়েছে মর্মে প্রধান শিক্ষক রেজুলেশনসহ কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। স্বাক্ষর জালের প্রমাণ পেয়েছি। আমি তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেবো।
সহকারী শিক্ষক রহিমা খাতুন বলেন, তিনি নাকি আমাকে গত তিন বছর সামাজিক মূল্যায়ন কমিটির সদস্য রেখেছেন, বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের রেজুলেশনসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে আমার স্বাক্ষরও রয়েছে। অথচ আমি এর কিছুই জানি না, এমনকি স্বাক্ষরও আমার নয়। সম্প্রতি হেড ম্যাডাম মাতৃত্বকালীন ছুটিতে গেলে ফাইলপত্র থেকে আমি বিষয়টি জেনেছি।
সহকারী শিক্ষক কামরুন্নাহার, রীমা খাতুন ও হাফিজুল ইসলাম জানান, তিনি নিজেকে বিদ্যালয়ের এমডি দাবি করে বলেন, আমরা নাকি তার চাকর। আমাদেরকে তার পায়ের নিচে থাকতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কহিরুল ইসলাম জানান, তিনি দায়িত্বে থাকতে কোন খাতাপত্র দেখতে বা আয়-ব্যয় সংক্রান্ত কিছু জানতে দেননি। তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে গেলে ফাইলপত্র থেকে এসব তথ্য জেনে আমরা রীতিমত বিস্মিত হয়েছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ইমরান হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের উন্নয়নে বরাদ্দ করা টাকা তুলে কাজ না করেই আত্মসাৎ করেছেন। আমরা প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি।
ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সদস্য বাবলু বলেন, আমাকে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে, অথচ আমি কোনদিন শুনিনি, কোন মিটিংয়েও ডাক পাইনি। সিøপ কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক পরিকল্পিতভাবে আমাদের স্বাক্ষর জাল করে বরাদ্দের টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। দুই বছর পর জানলাম যে, আমি এ কমিটির সদস্য।
ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, বারবার বললেও তিনি মিটিং ডাকেন না। অর্থের ব্যয় বা রুঢ় আচরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমার সঙ্গেও বাজে আচরণ করেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধান শিক্ষক সোহেলী পারভীনের মোবাইলে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি কেটে দেন। এরপর একাধিক নম্বর থেকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম নবী লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান, এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ