বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
তিন ডিসেম্বর বিএনপি’র রাজশাহীর গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই গণসমাবেশ সফল করতে ৩০ নভেম্বর রাত থেকে রাজশাহী অভিমুখে সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ করে সরকার। কিন্তু গণসমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীরা বিভাগের বিভিন্ন জেলার উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও পৌরসভা থেকে রাজশাহীতে আসতে শুরু করে এবং নানা বাধা বিপত্তি পরে রাজশাহীর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে আশ্রয় নেয় নেতাকর্মীরা।
আর এই খবর প্রকাশ করেন রাজশাহী স্থানীয় ইলেক্ট্রিক, প্রিন্ট ও অনলাইন গণমাধ্যম কর্মীরা। প্রতিনিয়ত তারা বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রচার করেন। এছাড়াও তিন ডিসেম্বর অনেক কষ্ট করে সকাল থেকে গণসমাবেশের খবর প্রকাশ ও প্রচার করেন গণমাধ্যম কর্মীরা। বিএনপি’র এই গণসমাবেশ সফলের পেছনে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছে গণমাধ্যম কর্মীরা। রোববার সকালে নগরীর একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন, বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলেন, গণসমাবেশ বানচাল করতে প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকার তার আইন শৃংখলাবাহিনী দিয়ে প্রতিবন্ধকাতর সৃষ্টি করেছে। সমাবেশে আসতে যানবাহন মালিকগণ যে ধর্মঘট দিয়েছিলো তা বাস্তবায়ন করে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নেতাকর্মীদের বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছে। মোটর সাইকেল আটকে দিয়েছে। এরপরেও সমাবেশ বানচাল করতে পারেনি। জনগণ ও নেতাকর্মীরা অনেক কষ্ট করে পায়ে হেটে সমাবেশ স্থলে আসেন এবং ঈদগাহ মাঠে আশ্রয় নেন। পুলিশের এমন আচরন স্বাধীনতার সময়ের পাকিস্তান আর্মি ও পুলিশের আচরণকে হার মানিয়েছে। সেইসাথে বাহিরের নেতাকর্মী ও নারীদের নিজ বাড়ি ও গ্যারেজে আশ্রয় দিয়ে সহযোগিতা করায় রাজশাহীবাসীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
একদিনের সমাবেশ তিনদিনে রুপ নেয়। এতে বিএনপি লাভবান হয়েছে বলে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, যানবাহন বন্ধ থাকায় রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলা থেকে সমাবেশের পূর্বেই নেতাকর্মীরা একস্থানে এসে সমবেত হন। তারা তাদের নিজ নিজ এলাকার রাজনৈতিক অবস্থা ও অবস্থান সম্পর্কে আপাল আলোচনা করেন। সেইসাথে আগামীর আন্দোলনের জন্য দৃঢ় সংকল্প বদ্ধ হন।
তিনি আরো বলেন, যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে সরকার জনগণকে যে দূর্ভোগে ফেলে দিয়েছিলো তাতে জনগণ এই সরকারের বিরুদ্ধে আরো ফুঁসে উঠেছে। কারন যানবাহন ধর্মঘট মালিকদের দাবী-দাওয়ার মধ্যে ছিলোনা। বিএনপি গণসমাবেশ শেষ হতেই যানবাহনের ধর্মঘট উঠে যায় এবং রিতীমত রাস্তায় বাস, ট্রাক চলাচল করতে থাকে। তিনি বলেন, জনগণ সব বোঝেন। সে থেকেই প্রতিনিয়ত বিএনপি’র জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যাচ্ছে।
প্রধান অতিথি বলেন, চট্টগ্রামে রোববার আওয়ামী লীগের সমাবেশ হয়। এই সমাবেশ উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এর সদস্যদের মাঠ তৈরী করতে দেখা যায়। অথচ বিএনপি মাঠ তৈরী করতে গেলে প্রতিনিয়ত পুলিশ বাধা প্রদান করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, এ অবস্থা দেখার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেননি তাঁরা। দেশের অবস্থা এখন অত্যন্ত খারাপ। নিত্যপন্যের মূল্য বৃদ্ধিতে নাভিশ^াস উঠে গেছে জনগণের। জনগণ না খেতে পেয়ে নিজেদের সন্তান বিক্রি করেত বাধ্য হচ্ছে। দেশ এখন জাহেলিয়া যুগের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আইন শৃংখলাবাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা রাজশাহী বাদে প্রতিটি গণসমাবেশে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। ঢাকার গণসমাবেশ নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছে। যতই বাধা আসুক বিএনপি আর পিছু হঠবেনা। আগামী ১০ তারিখের সমাবেশের মধ্যে দিয়ে সরকার পতনের চুড়ান্ত রুপরেখা দলের মহাসচিব ঘোষনা করবেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। সেইসাথে বিএনপি’র গলসমাবেশের সকল ধরনের খবর প্রচার ও প্রকাশ করায় গণমাধ্যম কর্মীদের আবারও ধন্যবাদ জানান প্রধান অতিথি।
বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ আয়োজক কমিটির আয়োজনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য জননেতা মিজানুর রহমান মিনুর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহিন শওকত ও এ এইচ এম ওবায়দুর রহমান চন্দন।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, দেশ এখন বাকশালের চাইতেও খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে। আইন শৃংখলা বাহিনী ও প্রশাসন দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করতে সহযোগিতা করে নব্য রাজাকারের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছে। প্রশাসন দলীয়করাণ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রশসন ও পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। যে প্রতিষ্ঠান দিয়ে রাষ্ট্র চলে এমন প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য জনগণের সামনে এদেরকে দাড় করিয়ে দিয়েছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে এসে যখন পেছনে তাকাই, ছাত্রজীবনে আমরা যে আইয়ুব খান ও ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন করেছি, এখন তার চাইতেও খারাপ অবস্থার মধ্যে আন্দোলন করতে হয়। আইয়ুব, ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে মিছিল করেছি, পথসভা করেছি। তখন ডিসি, এসপির কাছ থেকে অনুমতি লাগেনাই। কিন্তু এখন পরাধিনতার চেয়েও পরাধিন হয়ে আছি আমরা। এখন যা করতে যাবো ডিসি, এসপির অনুমতি নেয়া লাগবে। উনারা মালিক, আর আমরা উনাদের প্রজা হয়ে গেছি।
সভাপতির বক্তব্যে মিনু বলেন, শত বাধা উপেক্ষা করে রাজশাহীর গণসমাবেশ সফল হয়েছে। আর এই সফলতাগুলো সংবাদ মাধ্যমে তুলে সহযোগিতা করায় তিনি সকল প্রকার গণমাধ্যম কর্মীদের ও সেইসাথে রাজশাহীবাসীসহ বিভাগের সকলকে ধন্যবাদ জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।